×

মুক্তচিন্তা

করোনা প্রতিষেধক তৈরির প্রক্রিয়া কতদূর?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২০, ০৬:৫৮ পিএম

করোনা ভাইরাস প্রতিষেধকের অপেক্ষায় দিন গুনছে বিশ্ববাসী। বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা প্রতিষেধক আবিষ্কারের সাফল্যে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। বিজ্ঞানী দল এ প্রতিষেধক সাফল্য নিয়ে খুবই আশাবাদী। তারা আশা করছেন, এ প্রতিষেধকের ফলাফল দ্রুত পাওয়া যাবে। আমরাও আশাবাদী হতে চাই। কিন্তু ইতিহাস বলছে, অধিকাংশ প্রতিষেধকই পরিপূর্ণভাবে তৈরি করতে ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে এক দশকেরও বেশি সময় লেগেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের সূত্র মতে, বিশ্বে ১৪৫টি প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে অন্তত ২০টি ইতোমধ্যেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করেছে। এই তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, রাশিয়া ও ভারতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। ভারত জোর দিয়ে বলছে আগস্টে তারা প্রতিষেধক বাজারে নিয়ে আসবে। নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জনসাধারণ পর্যায়ে প্রতিষেধক পেতে আরো কয়েক মাস লেগে যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এ দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের উদ্ভাবিত করোনা প্রতিষেধক। তবে কোনো প্রতিষেধকেরই চ‚ড়ান্ত সাফল্য নন বিজ্ঞানীরা। আশার কথা, বাংলাদেশও প্রতিষেধক আবিষ্কারের দাবিদার হলো। গত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রতিষেধক আবিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিডেট। গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় তারা পশুর শরীরে এই প্রতিষেধকের সফলতা পেয়েছেন এবং একইভাবে মানবদেহেও এর সফলতা পাওয়া সম্ভব। তবে আন্তর্জাতিক নীতিমালাতেও কোনো প্রতিষেধক কিংবা ওষুধ আবিষ্কারের পর তার পূর্ণাঙ্গ ডাটা, ট্রায়াল, আন্তর্জাতিক জার্নালে রিপোর্ট পাবলিশমেন্ট সম্পন্ন করার পর আবিষ্কারের দাবি করা হয়ে থাকে। এই নিয়ম গ্লোব মানেনি। ইতোমধ্যে ট্রায়াল ও গবেষণার পর্যায়ে থাকা করোনা প্রতিষেধক অনুমোদনের জন্য কিছু গাইডলাইন জানিয়ে দিল যুক্তরাষ্ট্র খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন। এতে বলা হয়েছে, অনুমোদন পেতে হলে কোনো প্রতিষেধকের রোগ প্রতিরোধ কিংবা রোগের মাত্রা কমানোর ৫০ শতাংশ কার্যক্ষমতা থাকতে হবে। প্রতিষেধক আবিষ্কারের প্রচেষ্টা যতই ত্বরান্বিত হোক না কেন, পণ্যের মানের প্রতি গুরুত্বের বিষয়টিও এখন সামনে আসছে। বৈশ্বিক ভ্যাকসিন বা টিকা শিল্পে বড় নামগুলো যেমন পিফিজার, মার্ক, গ্লাকো্রাস্মিথ, স্যানোফি এবং জনসন এন্ড জনসন। গত বছর বিশ্বব্যাপী টিকা বিক্রি হয়েছিল ৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলার যা ২০১৪ সালের দ্বিগুণ। আর এ বৃদ্ধির মূল কারণ হলো ইনফ্লুয়েঞ্জা, সোয়াইন ফ্লু, হেপাটাইটিস ও ইবোলার মতো রোগগুলো। কিন্তু চারটি সেরা কোম্পানির কেউই এ বিষয়ে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এই কোম্পানিগুলোর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে করোনা প্রতিষেধক উদ্ভাবনে বিজ্ঞানীরা এগুতে পারেন। মহামারি করোনা ভাইরাস ৬ মাস পার করেছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর ভয়ানক পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিশে^র অনেক শক্তিধর দেশ। আমরাও এই মহামারির বাইরে নই। এই পর্যন্ত বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ২৫ হাজারের কাছাকাছি। মৃত্যু থেকে বাঁচতে একমাত্র প্রতিষেধকই শেষ ভরসাকে ধরে নিয়েছে মানুষ। প্রতিষেধক সংক্রমণ প্রতিরোধ করবে, কিন্তু তার আগে এই মুহূর্তে প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হলো যথাযোগ্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা। যত দ্রুত করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়, ততই বিশ্ববাসীর জন্য মঙ্গল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App