×

জাতীয়

করোনাতেও বাড়ছে অনলাইন প্রতারণা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২০, ১১:১৫ এএম

করোনাতেও বাড়ছে অনলাইন প্রতারণা

প্রতীকী ছবি

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার বহুমুখী উদ্যোগে দেশে স্মার্টফোনের পাশাপাশি ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে অনেক। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোর ব্যবহার এখন ঘরে ঘরে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অনলাইনে কেনাকাটাও বেড়েছে উল্লেখ করার মতো। ফলমূল-শাক সবজি-মাছ-মাংস থেকে শুরু করে প্রসাধনী, কাপড়-চোপড় এমনকি ইলেকট্রনিক সামগ্রীও অনলাইনে কেনাকেটা করেন অনেকে। সম্প্রতি করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে সংক্রমণ এড়াতে অনেকেই আরো বেশি করে অনলাইন কেনাকাটার দিকে ঝুঁকেছে। তবে এখানে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতারণা বা সাইবার অপরাধ। করোনা সুরক্ষাসামগ্রী বিক্রি কিংবা অনলাইনে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়াকে কেন্দ্র করেও প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। ফলে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া ছাড়াও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতেও পড়ছে মানুষ। অন্যদিকে মাত্র ১ হাজার ২০০ প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হলেও অনলাইনে ব্যবসা করছে অনিবন্ধতিত প্রায় ৭০-৮০ হাজার প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিইউবিটির শিক্ষক তানভীর হাসান জোহা গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, অনলাইন ভিত্তিক বা ই-কমার্স কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলো দেখ-ভালের জন্য ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) নামে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটির সার্টিফিকেশন ও নিবন্ধন না নিয়ে কেউ চাইলেই ফেসবুক পেজে বা অনলাইনে ডোমেইন খুলে পণ্য বিক্রি করতে পারে না। তাই ক্রেতা সাধারণকে সচেতন হয়ে ই-ক্যাবের সাইটে থাকা তালিকা দেখে কেনাকাটা করতে হবে। তবে দুঃখের বিষয় এ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এছাড়া তাদের কর্মকাণ্ড তেমন চোখেও পড়ে না। ফলে অধিকাংশ অনলাইন পণ্যের মান কি তা বোঝার উপায় নেই। প্রাযুক্তিক কাঠামো দুর্বল হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধী ধরা পড়ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মোবাইল চুরি অনেকাংশে কমে গেছে কারণ অপরাধীরা জানেন এ কাজ করে পার পাওয়া যাবে না। মোবাইলের আইএমই নম্বর ধরেই সহজেই অপরাধী ধরা পড়ে যাবে। তবে অনলাইনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় অপরাধী চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। কারণ একজন সাইবার অপরাধীকে নির্ণয় করতে গেলে ডিজিটাল সিগনেচার ও ইলেকট্রনিক আইডেন্টিটি প্রসেস সঠিক হতে হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক পণ্যেরই সঠিক রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু এ বিষয়গুলোই এখনো সঠিক না হওয়ায় বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। তবে আশার কথা হলো ডিজিটাল সিগনেচার ও ইলেকট্রনিক আইডেন্টিটি প্রসেসের জন্য সরকারের ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে। বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়ন করা উচিত। এদিকে গত ২৩ জুন হুমায়ুন কবির ও তানজিনা পাটোয়ারী নামে এক দম্পতিকে আটক করে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। তারা অনলাইনে দুটি সাইট খুলে করোনার উপসর্গ রয়েছে এমন রোগীদের টার্গেট করে তাদের বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতেন। পরে কোথাও ফেলে দিতেন সেই নমুনা। এরপর বাসায় বসে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আদলে হুবহু করোনার সার্টিফিকেট তৈরি করে ইচ্ছামতো পজেটিভ-নেগেটিভ বানিয়ে তা রোগীর ই-মেইলে পাঠাতেন। মনগড়া এই করোনার রিপোর্ট তৈরিতে জনপ্রতি ৫-৮ হাজার টাকা নিতেন। করোনা নিয়ে ভয়ঙ্কর এ প্রতারণায় জড়িত দম্পতির ই-মেইল যাচাই করে অন্তত ৪২ জনকে করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট দেয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এর আগে গত ২০ এপ্রিল ৯৫ হাজার টাকায় ৫০ পিস ‘ভাইরাস শাট আউট’ কার্ড বিক্রির দায়ে ফেসবুক পেজ ‘জি মামা’র কর্ণধার মো. টিপু সুলতানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এরপরও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এই কার্ডের বিজ্ঞাপনে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া সয়লাব হয়ে আছে। বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে, ক্লোরিন ডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ এই চাইনিজ কার্ডটি গলায় ঝুলালে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, অ্যালার্জি, ছত্রাক থেকে মুক্ত থাকা যায়। অথচ মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকর এই কার্ডটি ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করেছে চীন। এছাড়া করোনা সুরক্ষাসামগ্রী মাস্ক, গ্লাভস ও সানগ্লাসের বিক্রির হিড়িক পড়েছে অনলাইন শপগুলোতে। তবে মান যাচাইয়ের রাস্তা মিলছে না। র‌্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম এ প্রতিবেদককে বলেন, অনলাইনভিত্তিক প্রতারক বা সাইবার অপরাধীদের গ্রেপ্তারে সবসময়ই সচেষ্ট রয়েছে র‌্যাব। কয়েকদিন আগেই এটিএম কার্ড ও বিকাশ প্রতারণা চক্রের বড় একটি চক্রকে আমরা আটক করেছি। এ ধরনের অপরাধ রোধে আমাদের সাইবার মনিটরিং সেল সার্বক্ষণিক কাজ করছে। আলাপকালে কয়েকজন অনলাইন ব্যবসায়ী জানান, ই-ক্যাবের সম্পর্কে কিছুই জানেন না তারা। এ ব্যাপারে ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওয়াহেদ তমাল ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ২০০ হলেও আসলে অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৭০-৮০ হাজার। এর মানে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে। এমন পরিস্থিতিতে ই-ক্যাবের সদস্য না হয়ে যারা ব্যবসা করছেন তাদের ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থাটা কী হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কীভাবে আমরা সম্পৃক্ত করব বা ডিজিটাল সার্ভিস নেয়ার ক্ষেত্রে ভোগান্তি শিকার হলে কীভাবে প্রতিকার পাবে তা নিয়ে পুরোপুরি মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজ হচ্ছে। ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা হয়েছে। তা আইনে রূপান্তরের জন্য কাজ করছি আমরা। তাদের সম্পর্কে অধিকাংশ ব্যবসায়ীই না জানার বিষয়টি স্বীকার না করলেও জনসচেতনতা তৈরি ও বেশি বেশি প্রচারের জন্যও প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া বলেন, আমরা এত বিপুল সংখ্যক অনলাইন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে চাই না। তাদের আমাদের আওতায় আনতে চাই। যেহেতু ই-ক্যাবের অনুমোদন ছাড়া ব্যাংক লোনসহ ব্যবসা বাড়ানোর জন্য নানা সুবিধা পাওয়া সম্ভব নয়, তাই বলব নিজেদের সুবিধার জন্যই আপনারা নিবন্ধন করুন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App