×

জাতীয়

২১ দিনের ঘরবন্দি জীবন শুরু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২০, ০৯:৩৭ এএম

২১ দিনের ঘরবন্দি জীবন শুরু

ওয়ারী/ফাইল ছবি।

এলাকা ছেড়েছেন অনেকে নিত্যপণ্য মজুতে হিড়িক
জোনভিত্তিক লকডাউনে আজ থেকে টানা ২১ দিনের ঘরবন্দি জীবন শুরু করতে হচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪১ নম্বর ওয়ার্ড বা ওয়ারীর একটি অংশের বাসিন্দাদের। এরইমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ডিএসসিসি ও পুলিশ প্রশাসন। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ওয়ারী থেকে বের ও প্রবেশের রাস্তাগুলো। প্রস্তুত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। লকডাউনের সময় ঘরে থাকতে এলাকাবাসীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে টানা তিনদিন মাইকিং করা হয়েছে। থাকতে বলা হয়েছে ঘরে। আজ ভোর ৬টা থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন চলবে। এই সময়টা শুধু কয়েকটি ফার্মেসি ও ৩টি সুপারশপ চালু থাকবে। চিকিৎসক ও সাংবাদিক ছাড়া কেউই যেন ঘর থেকে বের না হয়, সেজন্য নেয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। করোনা পরীক্ষার জন্য বসানো হয়েছে নমুনা সংগ্রহ বুথ। এদিকে লকডাউন আতঙ্কে গতকাল পর্যন্ত এলাকা ছেড়েছেন অনেকেই। তাদের কেউ গ্রামের বাড়িতে গেছেন। কেউ কেউ আবার ওয়ারীর বাইরে আত্মীয়স্বজনের বাসায় কয়েকদিনের জন্য আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী। ওয়ারীর বাইরে ঢাকার অন্যান্য এলাকায় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। ওয়ারী ছেড়েছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তাদের দুই জন জানান, টানা ২১ দিন তাদের পক্ষে ঘরে থাকা সম্ভব না। তাদের মতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ওয়ারীতে থাকলেও রোজগারের সন্ধানে তাদের সারাদিন বাইরেই থাকতে হয়। ঘরে বন্দি থাকলে পরিবার চলবে কীভাবে? তাই লালবাগ ও মতিঝিল এলাকায় পরিচিত আত্মীয়স্বজন অথবা নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই থাকার চিন্তাভাবনা করছেন। ওয়ারীর বাসিন্দা শাহীন আহমেদ জানান, লকডাউনের কথা শুনে অনেকেই এলাকা ছেড়ে গেছেন। লকডাউন শেষ হলে তারা আবার ফিরে আসবেন। কেউ কেউ পরিবার-পরিজন গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া যারা বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন, তারাও ঘরবন্দি থাকার ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন। গতকাল ওয়ারীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সরকার ঘোষিত লকডাউন এলাকাগুলোতে লকডাউনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে লকডাউন এলাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে বাঁশ দিয়ে আটকানো হয়েছে। ফলে গতকাল থেকেই একপ্রকার যানবাহন চলাচল অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছে। লোকজনকে পায়ে হেঁটেই চলাচল করতে হচ্ছে। উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে সুপারশপ, মুদি দোকান ও কাঁচাবাজারগুলোতে। লকডাউনের কথা ভেবে কেউ কেউ পুরো ১ মাসের বাজার করে রাখছেন। ভিড় বেড়েছে মাছ, মাংস ও মুরগির দোকানেও। অনেকেই ৫ থেকে ১০ কেজি করে গরুর মাংস, মুরগি ও মাছ কিনছেন। তবে কাঁচা সবজি তুলনামূলক কম কিনছেন। কারণ লকডাউন হলেও ভ্যানে করে কাঁচা সবজি কেনাবেচা করার সুযোগ থাকবে। অনেকেই চালের বস্তাও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আর ক্রেতাদের ভিড়ে অনেকটা হিমসিম পোহাতে হচ্ছে দোকানদারদের। টিপু সুলতান রোডের মুদি দোকানদার আসলাম মিয়া ভোরের কাগজকে জানান, গত তিন চার মাস ধরে ব্যবসা খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। কাল (শনিবার) থেকে এই এলাকা লকডাউন হবে শুনে গত দুই দিন ধরে বিক্রি বেড়েছে। ক্রেতাদের ভিড় সামলাতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে। আজকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার টাকার ওপরে তিনি বিক্রি করতে পেরেছেন বলে জানান। রাত পর্যন্ত এই বিক্রি আরো বাড়ার সম্ভাবনার কথাও বলেন তিনি। জাহিদুর রহমান নামের এক বাসিন্দা জানান, ২১ দিন তো ঘর থেকে বের হতে পারব না। তাই একবারেই ১ মাসের বাজার করে রাখছি। যাতে কোনো কিছুর জন্য এই সময়টা আর বাইরে বের হতে না হয়। এদিকে লকডাউন সফল করতে গতকাল সকাল থেকেই স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর সার্বিক প্রস্তুতি ও করণীয় নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে আজ থেকে এলাকায় যারা যারা দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভোর ৬টার আগেই যার যার অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ভ্যানে করে বিভিন্ন প্রকার সবজি বিক্রির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ভোর ৬টা থেকেই তারা মাঠে নেমে পড়বেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবজি বিক্রি ও পৌঁছে দেবেন। এটুআই প্রজেক্টের অধীনে এই এলাকার তিনটি সুপারশপ সকাল থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তারা অনলাইনে অর্ডার নিয়ে ক্রেতার বাসায় প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেবেন। এরসঙ্গে কয়েককটি নির্ধারিত ফার্মেসি খোলা রাখা হবে। যাতে যে কেউ প্রয়োজনীয় ওষুধ নিতে পারে। যেসব বাড়িতে করোনা রোগী আছে, সেসব বাড়িতে বিশেষভাবে নজরদারি বাড়ানো হবে। কেউ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে মহানগর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হবে। এদিকে ওয়ারীতে বড় বড় কয়েকটি মুদি দোকান থাকলেও তাদের বাদ দিয়ে তিনটি সুপারশপ চালু রাখার সিদ্ধান্তে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তাদের অভিযোগ এমনিতেই আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। তার ওপর ২১ দিন লকডাউনের কারণে আমাদের দোকানপাট বন্ধ থাকবে। অথচ স্বপ্ন, মীনাবাজার ও বিগ বাজার ঠিকই খোলা রাখা হচ্ছে। তাদের ব্যবসা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আমরাও তো এই সুযোগটুকু পেতে পারতাম। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ব্যবসা করতাম। অথচ সেটা দেয়া হলো না। সার্বিক বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার হাসান আলো ভোরের কাগজকে বলেন, লকডাউন কার্যকরে সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। লকডাউন এরিয়ায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে সড়কের মুখগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কেউ যেন অহেতুক ঘর থেকে বের না হয়- সেজন্য মাইকিং করা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রস্তুত আছে। ভ্যানে করে তরকারি ও কাঁচাবাজার বিক্রি করা হবে। স্বেচ্ছাসেবকরা ৮ ঘণ্টা করে তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করবেন। লকডাউন সফল করতে তিনি এলাকাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App