×

জাতীয়

লঞ্চ দুর্ঘটনা কমছে না বিচারহীনতায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২০, ১০:২৮ এএম

বুড়িগঙ্গা নদীতে ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় মর্নিংবার্ড লঞ্চ ডুবে হতাহতের ঘটনায় ঘাতক লঞ্চের মালিকসহ অভিযুক্তদের এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তারের জন্য অভিযুক্তদের পাশাপাশি তাদের আত্মীয়স্বজনদের বাসাতেও অভিযান চলছে। তবে তাদের সন্ধান মেলেনি। পুলিশ মহাপরিদর্শকের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে। এজন্য নৌপুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও তাদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে। দ্রুতই তাদের গ্রেপ্তার সম্ভব হবে। এদিকে ধীরগতিসহ নানা কারণে নৌপথে দুর্ঘটনার অধিকাংশ মামলারই বিচার না হওয়ায় এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া, শাস্তির পরিমাণ কমও একটি কারণ। যার ফলে মালিকসহ জাহাজ সংশ্লিষ্টরা ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটলেও আমলে নিচ্ছে না। তবে পুলিশ বলছে, এতদিন অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল অধ্যাদেশে মামলায় বিচার হলেও অধিকাংশ সময় জরিমানাই হতো শাস্তি। তবে সম্প্রতি নৌপুলিশ বিধিমালা পাস হওয়ায় এখন দণ্ড বিধিমোতাবেক মামলা হচ্ছে। যাতে দুবছর থেকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তির বিধান রয়েছে। সূত্র বলছে, দেশের নৌপথে দুর্ঘটনার ঘটনায় প্রায় এক হাজার ৫০০টি মামলা সামুদ্রিক আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। বিগত বছরগুলোতে খবরের শিরোনাম হয়েছিল এমন ৫০টি মামলা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ১৯৯১ সাল থেকে সারাদেশে নদীগুলোতে মোট ৫৭০টি জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন হাজার ৬৫৪ জন। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪৮৯ জনের মরদেহও পাওয়া যায়নি। ২০০৪ সালে সর্বাধিক সংখ্যক যাত্রী ও পণ্যবাহী ৪১১টি জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছিল। এর আগের বছর নৌদুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল ৪৬৪ জনের। এ বিষয়ে এডভোকেট মনজিল মোরসেদ ভোরের কাগজকে বলেন, দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নৌপথের চালকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণসহ নানা ব্যবস্থা রাখতে হয়। থাকতে হয় আইনের খড়গ। অর্থাৎ যদি কোনো কিছু ঘটে তাহলে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য নৌদুর্ঘটনার অধিকাংশ মামলাই বছরের পর বছর বিচারাধীন থাকে। তাছাড়া শাস্তির বিধান কম থাকায় মালিকসহ জাহাজ সংশ্লিষ্টরা ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটলেও আমলে নিচ্ছে না। তাই শাস্তির বিধান আরো কঠোর করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারপক্ষের আইনজীবী পারভিন সুলতানা বলছেন, এই ধরনের ঘটনায় আসামিরা ৯৫% মামলাতেই সাজা পান। তারা এই মামলাগুলো সময়মতো নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করেন। তবে যথাসময়ে সাক্ষীরা আদালতে হাজির হন না। এদিকে নৌপুলিশের ঢাকা অঞ্চলের প্রধান এসপি খন্দকার ফরিদুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, এতদিন অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল অধ্যাদেশে মামলা হতো। এ মামলাগুলো বিআইডব্লিউটিএ তদন্ত করে অধ্যাদেশ অনুযায়ী শাস্তি হিসেবে বিভিন্ন সময় জরিমানা করেছে। ফলে বিষয়গুলো লঞ্চ মালিকরা হালকাভাবে নিত। তবে এখন এ অধ্যাদেশের পাশাপাশি সম্প্রতি নৌপুলিশ বিধিমালা পাস হওয়ায় আমরা দণ্ডবিধি মোতাবেক মামলা করছি যাতে দুবছর থেকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত বিধান রয়েছে। ফলে এখন অপরাধ করে লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা সহজে পার পাবে না। নদীতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সম্পূর্ণ বিআইডব্লিউটিআইয়ের আওতাধীন। তাদেরও ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রয়েছে। তারাই বিষয়টি দেখাশোনা করেন। আমাদের সেখানে কোনো কিছু করার ইখতিয়ার নেই। তিনি আরো বলেন, লঞ্চ ডুবির ঘটনায় মামলার পরপরই আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারে কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু তারা গাঁ ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ মহাপরিদর্শকের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে। এজন্য আমাদের সঙ্গে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও তাদের গ্রেপ্তারে কাজ করছেন। দ্রুতই তাদের গ্রেপ্তার সম্ভব হবে। দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া মর্নিংবার্ড লঞ্চের মালিক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন জানিয়েছে খন্দকার ফরিদুল ইসলাম বলেন, মর্নিংবার্ডের মালিক জানিয়েছেন, আমির হোসেন তার লঞ্চের মাস্টার ছিলেন। তিনি এ ঘটনায় মারা যান। আর চালক হিসেবে বাদল ও শহীদ নামে দুজন থাকার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকে তাদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে, লঞ্চটি ডুবে যেতে দেখে তারা দুজনই ইঞ্জিন রুম থেকে পানিতে লাফিয়ে পড়েছে। পরে সাঁতার কেটে তীরে উঠে যায়। দুর্ঘটনায় মর্নিংবার্ড লঞ্চ মালিকের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় তাকে মামলার আসামি করা হয়নি। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিগুলো মর্নিংবার্ড লঞ্চ ও এর মাস্টার, চালকের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। সে সময় গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App