×

জাতীয়

মহামারিতে মহাসংকটে কিশোরীরা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২০, ০৯:৫১ এএম

মহামারিতে মহাসংকটে  কিশোরীরা!
মহামারিতে মহাসংকটে  কিশোরীরা!

বাল্যবিয়ে/ফাইল ছবি।

মহামারি কোভিড-১৯ এ বিপর্যস্ত বিশ্বে আরো মহাসংকটে কিশোরীরা। জীবন-জীবিকা পরিবর্তনের টানপড়েনে কপাল পুড়ছে তাদের অনেকেরই। স্কুল পেরুনোর আগেই বসতে হচ্ছে বিয়ের পিঁড়িতে। লকডাউনও থামাতে পারছে না এই ‘বিয়ে বিয়ে খেলা’। বরং লকডাউনে বাল্যবিয়ে বেড়েছে ১৩ গুণ। এখনই বাল্যবিয়ে বন্ধে উদ্যোগ না নিলে নারী-শিশু উন্নয়নে সরকারের সাফল্যসহ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন ব্যাহত হবে এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। বিভিন্ন গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হয়। করোনার কারণে আগামী এক দশকে অতিরিক্ত আরো ১ কোটি ৩০ লাখ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হতে পারে বলে গত মাসে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল জাতিসংঘ। করোনার কারণে আগামী দুই বছরে ৪০ লাখ মেয়ে বাল্যবিয়ের শিকার হতে পারে এমন আশঙ্কা ওয়ার্ল্ড ভিশনের। বাল্যবিয়ে নিয়ে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘গার্লস নট ব্রাইডস’। সম্প্রতি, জিএনবি বাংলাদেশের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর কারণে নারী ও কন্যাশিশুদের জীবনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। জোটের আশঙ্কা, বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধসহ নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধে কয়েক দশক ধরে যে সামাজিক অগ্রগতি হয়েছে, কোভিড-১৯ সংকটের কারণে তা পিছিয়ে যাওয়ার হুমকি তৈরি হয়েছে। করোনায় বাল্যবিয়ে নিয়ে উদ্বেগ্ন প্রকাশ করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম ভোরের কাগজকে বলেন, গ্রামীণ সমাজ কাঠামোতে বাল্যবিয়ের সংখ্যা এমনিতেই বেশি। করোনা এই সমস্যাকে আরো বাড়িয়েছে। জীবন-জীবিকায় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েকে আরো বেশি করে বোঝা ভাবতে শুরু করেছে পরিবার। বিয়ে নামক চুক্তির মাধ্যমে দায়িত্ব থেকে মুক্তি চায় তারা। নারী-শিশু উন্নয়নে সরকারের ধারাবাহিক সাফল্য এবং এসডিজি অর্জনের জন্য বাল্যবিয়ে ঠেকানো জরুরি বলে মন্তব্য করেন সমাজবিজ্ঞানী সাদেকা হালিম। নারী ও কিশোরীদের ওপর করোনার প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা করেছে ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস এন্ড ডাইভারসিটি বিভাগ। গবেষণা অনুযায়ী, জরিপ এলাকায় বাল্যবিয়ে আগের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। আর এর প্রধান কারণ ৮৫ শতাংশ মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা, ৭১ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, ৬২ শতাংশ প্রবাসী পাত্র। এসময় জীবিকা কমে যাওয়ায় পরিবারের ওপর নির্ভরতা কমাতে অনেকেই মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষক, ইতিহাসবিদ ও গবেষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল ভোরের কাগজকে বলেন, যে কোনো দুর্যোগ কিংবা মহামারির সময় বাল্যবিয়ের সংখ্যা বাড়ে। বাড়ে নারী-শিশু নির্যাতন। বাল্যবিয়ের শিকার নারীরা অপুষ্টি, স্বাস্থ্যসংকট ও নির্যাতনের শিকার হবে এমন আশঙ্কা করেন গবেষক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। এদিকে কুড়িগ্রাম জেলায় বাল্যবিয়ে নিয়ে কাজ করে আন্তর্জাতিক অর্গানাইজেশন কেয়ার বাংলাদেশ। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনা ভাইরাসের পর শুধু কুড়িগ্রামেই বাল্যবিয়ে বেড়েছে ৩ গুণ। তবে নিবন্ধিত বিয়ের সংখ্যা কমছে, বাড়ছে অনিবন্ধিত বিয়ে। আবার নানা কারণে ঠেকানোর ঘটনাও কমে যাচ্ছে। গড়ে বিয়ের বয়স ১৫ বছর। জানতে চাইলে কেয়ার বাংলাদেশের ইমাজিন প্রকল্প কর্মকর্তা ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞ লাভলী ইয়াসমিন জেবা ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে এখন অনেক ছেলেই বিভিন্ন জায়গা থেকে বাড়ি ফিরেছে। অনেক পরিবারের কাছে পাত্র হিসেবে এরা গুরুত্বপূর্ণ। এসময় বিয়েতে যৌতুক কম লাগছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, তো বিয়ে দিয়ে দিই। নারী এখনো পরিবারের বোঝা এই মনস্তাত্তি¡ক বিষয়টিই কাজ করছে বেশি মন্তব্য করে এই জেন্ডার বিশেষজ্ঞ বলেন, বাইরে থেকে আসা পাত্র সুস্থ রয়েছেন কি না, মেয়েকে কোনো ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন এটি না জেনেই মেয়ে নামক বোঝাকে ঘাড় থেকে নামাতে পারলেই বর্তে যায় অনেক পরিবার। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং সমাজ ও অপরাধবিষয়ক গবেষক তৌহিদুল হক ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের সামাজিক কাঠামোতে নারীরা সবসময়ই ভালনারেবল। তার ওপর মহামারির মতো ভয়ঙ্কর সময়ে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর ওপর নানা ধরনের নির্যাতন, বঞ্চনা আরো বাড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক শৃঙ্খলা, মূল্যবোধ, নৈতিকতা ভেঙে পড়ে। ঘরে-বাইরে অনিরাপদে পড়ে নারীরা। এর প্রথম আঘাত আসে কিশোরীদের ওপরেই। বাল্যবিয়ে এর একটি। বাল্যবিয়ে নির্মূলে অভিভাবকদের কাউনিন্সিলিং, স্থানীয় প্রশাসন, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, শিক্ষা অফিসার, এনজিওদের কার্যক্রমের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের জোরালো অবস্থান প্রয়োজন বলে মনে করেন গবেষক তৌহিদুল হক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App