×

সারাদেশ

পিছিয়ে নেই হাওরের মেয়েরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২০, ০৩:৫৫ পিএম

পিছিয়ে নেই হাওরের মেয়েরা

পায়রা, রহিমা, রত্না ও সুধা

পিছিয়ে নেই হাওরের মেয়েরা। এবার ৩৮ তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন নেত্রকোণার মদন উপজেলার হাওরের ৪ কন্যা। তাদের এ সাফল্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুভাকাঙ্খীদের অভিনন্দনে ভাইরাল হয়েছে।

প্রত্যন্ত অঞ্চল ফতেপুর গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান সবল চৌধুরীর মেয়ে পায়রা চৌধুরী সহকারী কমিশনার, একই গ্রামের আলী আকবর ভূঁইয়ার মেয়ে রাহিমা সুলতনা শিক্ষা ক্যাডার, বাঘমরা গ্রামের সাবেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান পুতুল মাস্টারের মেয়ে সামিয়া সুলতানা সুধা শিক্ষা ক্যাডার ও কুলিয়াটি গ্রামের ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম তালুকদার (পুতুল) মিয়ার মেয়ে মায়মুনা স্বর্ণা শিক্ষা ক্যাডারে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন।

পায়রা চৌধুরী ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ২০১৫ সালে স্নাতক ও ২০১৬ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন। পায়রা চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল প্রশাসনিক ক্যাডার। তিনি বলেন, আমার মরহুম এ্যাডভোকেট চাচা মাঈনুল হক চৌধুরীকে দেখে বুঝতে পেরেছি মানুষের ভালবাসা কি ! সেই থেকে একটা স্বপ্ন ছিল বিসিএস (প্রশাসন ক্যাডার) হওযা। এই এডমিন ক্যাডার যেনো আমাকে আমার পূর্ব পুরুষদের যোগ্য উত্তরসূরি বানাতে পারে।

ফলাফলের অনুভতি জানতে চাইলে বলেন, আমার রোলটা দেখে আমি অঝোরে কান্না আসছিল। শরীরে কোন শক্তি পাচ্ছিলাম না। সবাই ভাবছিল আমি চেতনা হারিয়ে ফেলবো। আম্মা-আব্বা বোনকে জড়িয়ে ধরে কাদঁছিলাম। অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে যতটুকু কষ্ট জমা হয়েছিল সেই কষ্টটাকে অশ্রু হয়ে গড়িয়ে পড়ে। এডমিন ক্যাডার যেনো আমাকে মানুষের জন্যে কিছু করার সুযোগ করে দেয়।

রাহিমা সুলতনা ২০১০ সালে আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বি এ অনার্স (ইংরেজি), একই কলেজ থেকে ২০১১ সালে (ইংরেজি) স্নাতকোত্তর পাস করেন। তিনি বলেন, দেশের মানুষের সেবা করার প্রয়াসে ৩৭তম বিসিএসে প্রথম অংশ গ্রহণের মাধ্যমে সাব-রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ পাই। ৩৮ তম বিসিএস এর মাধ্যমে প্রিয় পেশা শিক্ষা ক্যাডার সুপারিশ প্রাপ্ত হই। আমি দীর্ঘদিন দেশের বাইরে শিক্ষা পেশায় নিয়োজিত ছিলাম। আমার এ অভিজ্ঞতা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে কিছুটা হলেও কাজে লাগতে পারবো বলে আমি আশা করি।

সামিয়া সুলতানা সুধা, ২০১০ সালে ত্রিশাল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ, ২০১৪ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পাস করেন। পরিবার থেকেই সবচেয়ে অনুপ্রেরণা পেতেন সুধা। সুধা বলেন, তার প্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎসাহ পেয়েছেন বাবা, বড় ভাই, মা ও স্বামী। তাকে মেয়ে হিসেবে দেখেনি তার পরিবার। বর্তমানে তিনি সোনালী ব্যাংকে অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত।

মাইমুনা স্বর্ণা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৫ (বাংলায়) স্নাতক ও ২০১৬ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। তিনি জানান, আমার শিক্ষকরা আমার জীবনের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকদের আমার কাছে সাধক মনে হয়। আমার মানস সত্তা গঠনে যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি তিনি হলেন আমার মা। ছোট বেলা থেকে এই ভেবে বড় হয়েছি মানুষের জন্যে কিছু একটা করবো। আমার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হব। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমার উপর যে দায়িত্ব এসেছে তা যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি।

এ ছাড়া উপজেলায় সেলিমুল হক লেলিন এসএসপিসহ আরো ৪ জন বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার বিকেলে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে সকরকারি কর্ম কমিশন (পিএসপি)। এতে ২ হাজার ২০৪ জন প্রার্থীকে ক্যাডার পদের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া নন-ক্যাডারে আরও ৬ হাজার ১৭০ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App