করোনা পরীক্ষায় ফি আরোপ গণবিরোধী সিদ্ধান্ত
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২০, ১২:৫৯ পিএম
রুহল কবীর রিজভী
অবিলম্বে করোনা ভাইরাস টেস্টের ফি বাতিল করে বিনামূল্যে নাগরিকদের টেস্টের ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন করোনা ভাইরাস পরীক্ষায় কি নির্ধারণ গণবিরোধী সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে সারাদেশে বিনামূল্যে করোনা ভাইরাস টেস্টের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। শনিবার (৪ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর দলের নেতা মন্ত্রীরা প্রায়শঃই দাবি করে বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ নাকি রোল মডেল। কিসের জন্য বাংলাদেশ মডেল? স্বীকার করতেই হবে বাংলাদেশ এখন দুর্নীতির জন্য সারা বিশ্বের কাছে মডেল। কারণ এরা যেমন ‘স্বর্ণের মেডেল’ থেকে স্বর্ণ চুরি করে আবার করোনায় বিপর্যস্ত মানুষের জন্য বরাদ্দ করা ত্রাণের চাল চুরি ও নকল মাস্কের ব্যবসা করতেও রোল 'মডেল' হয়েছে। এখন মরণঘাতী করোনা মহামারীর ভাইরাস পরীক্ষার ওপর ২০০ টাকা ফি আরোপ করার সিদ্ধান্ত বিস্ময়কর।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সংকট এখন চরমে। মানুষের ঘরে খাবার নেই। হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অসহায়ভাবে পথে-ঘাটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। প্রয়োজনের তুলনায় পরীক্ষাও হচ্ছে নামমাত্র। এরমধ্যে এই গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। মহামারির চিকিৎসা কখনো ব্যক্তিগত উদ্যোগে হয় না। করোনা মহামারীর চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
বিশ্বের কোথাও সরকারিভাবে কোভিড টেস্টে অর্থ নেয়া হয় না। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কোভিড টেস্টের রেকর্ড দক্ষিণ কোরিয়ার। তারা দিনে ১ লাখের উপর মানুষের কোভিড টেস্টও করেছে। এমনকি এন্টিবডি টেস্টও করেছে। তাদের সমস্ত টেস্টই বিনা মূল্যে করা হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে গরীব দেশ আফগানিস্থানে কোভিড টেস্ট বিনামূল্যে করা হচ্ছে। এমনকি বিশ্বের সবচয়ে গরীব দেশ পশ্চিম আফ্রিকার বুরকিনা ফাসো কোভিড টেস্ট বিনামূল্যে করা হয়। আমাদের প্রতিবেশী কোন দেশেই টেস্ট করাতে ফি নেয় না। উপরন্তু প্রায় প্রতিটা দেশের সরকার স্বেচ্ছাসেবীদের ঘরে ঘরে পাঠাচ্ছে নমুনা সংগ্রহে। টেস্ট করাতে জনগণকে উৎসাহিত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আর আমাদের দেশের শাসকগোষ্ঠী এই মহামারিকেও বানিয়েছে মুনাফা অর্জনের উপলক্ষ। এরা কতটা অমানবিক তার নিকৃষ্টতম প্রমান এই ফি ধার্য। যেখানে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং সব বিশেষজ্ঞ করোনা সংক্রমণ রোধে টেস্ট বৃদ্ধি করাকেই প্রধান অবলম্বন বলছেন, সেখানে টেস্ট করাতে ফি ধার্য্যরে সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এতে নিম্ন আয়ের মানুষেরা উপসর্গ থাকার পরও করোনা পরীক্ষা করাতে পারবেন না। তাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন করা যাবে না। এতে সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকবে। লাশের মিছিল কেবল দীর্ঘতর হবে। দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত বন্ধ, মানুষের আয়ের উৎস থেমে গেছে। এমনিতে বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকার নির্ধারিত সাড়ে ৩ হাজার টাকায় কোভিড টেস্ট করছে না। যে যার মতো ৫-৬ হাজার টাকা পর্যন্ত জনগণের পকেট কেটে নিচ্ছে। সরকার তা নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টাই করছে না, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সমস্ত মনোযোগ দুর্নীতি আর লুটপাটে। একটি হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সদের খাবার-দাবারের বিল ২০ কোটি টাকা দেখালেও অভিযুক্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন কোন দুর্নীতি হয়নি। অথচ প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে এই ২০ কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়ার কথা এখনও শোনা যায়নি। সরকার চারিদিক থেকেই শুধু স্বল্প আয়ের মানুষেরই পকেটে হাত দিচ্ছে। এমনিতেই করোনার অভিঘাতে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ, এর ওপর বিদ্যুৎ, জ¦ালানী, গ্যাস ও পানির মূল্য বৃদ্ধিতে তারা দিশেহারা, এর সাথে করোনা টেষ্টের ফি ২০০ টাকা ধার্য করে সরকার এখন ভ্যাম্পেয়ারের ন্যায় রক্তচোষার ভূমিকায়।
তিনি বলেন, কোনো নাগরিক যদি টাকার অভাবে করোনা ভাইরাস টেস্ট করতে না পেরে নিজ দেহে করোনা ভাইরাস বহন করে বেড়ায় তাহলে একজন নাগরিক শুধু নিজেরই ক্ষতি করছেন না তিনি অন্যের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবেন। এ কারণেই বিষয়টি নাগরিকদের দায়-দায়িত্বের উপর ছেড়ে না দিয়ে বরং এটি রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব, জনস্বার্থে রাষ্ট্র নিজ উদ্যোগে নাগরিকদের বিনামূল্যে করোনা ভাইরাস টেস্ট করানোর সুযোগ সহজ করবে। তিনি আরো বলেন, এই সরকার নিজেরাও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেনা।