কখন আসবে ভ্যাকসিন!
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২০, ০৯:৩৩ এএম
ভ্যাকসিন/ফাইল ছবি।
ভারতের ভ্যাকসিন আসবে ১৫ আগস্ট ১৭৮টি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন প্রক্রিয়া চলছে, মানবদেহে পরীক্ষা চলছে ২০টির
একটি ভ্যাকসিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বিশ^। কোভিড-১৯ মহামারির জন্য দায়ী অণুজীব সার্স-কোভ-২ এর বিরুদ্ধে কার্যকর সেই ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ঘড়ির কাঁটা ধরে কাজ করে যাচ্ছেন তাবৎ বিশে^র বিজ্ঞানী ও গবেষকরা। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, বিশ^জুড়ে ১৭৮টি ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের উদ্যোগ চালু রয়েছে এখন, যার মধ্যে ২০টি ভ্যাকসিন রয়েছে মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগপর্বে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এক থেকে দেড় বছরের মাথায় গিয়ে সর্বসাধারণের জন্য এই ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ দৌঁড়ে আচমকা সবার আগে চলে এসেছে ভারত। ‘ভারত বায়োটেক’ নামে একটি ওষুধ কোম্পানি জানিয়েছে, ১৫ আগস্ট থেকে সেদেশের সবস্তরের মানুষের ব্যবহারের জন্য বাজারে পাওয়া যাবে তাদের করোনা ভ্যাকসিন। যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কাজটি ত্বরান্বিত করার জন্য অপারেশন ওয়ার্প স্পিড (ওডাবলিউএস) কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর আওতায় ১৮টি ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (এনআইএইচ)। এদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়াল শেষ করে তৃতীয় পর্বের ট্রায়ালের জন্য তিনটি কোম্পানিতে তহবিল জোগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এগুলো হচ্ছে জুলাই মাসে মডার্নার এমআরএনএ-১২৭৩, আগস্ট মাসে অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার এজেডডি১২২২ এবং সেপ্টেম্বর মাসে ফাইজার ও বায়োএনটেকের বিএনটি১৬২। ত্রিশ হাজার রোগীর ওপর মডার্নার ভ্যাকসিনটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হওয়ার কথা ছিল ৯ জুলাই থেকে, যদিও সে তারিখটি শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে কারিগরি কারণ দেখিয়ে। জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেকের সঙ্গে ফাইজারের ভ্যাকসিন ত্রিশ হাজার রোগীর ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা শুরু হবে এ মাসের শেষ দিকে। একই সংখ্যক রোগীর ওপর অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ^বিদ্যালয়ের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হবে আগস্ট মাসে। এরপর সেপ্টেম্বর মাসে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ওপর নিজেদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করবে জনসন এন্ড জনসন। অন্যদিকে করোনার উৎসভ‚মি চীনের ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজি অ্যাট চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব মেডিকেল সাইন্স (আইবিসিএএমএস) জানিয়েছে, সেদেশের সম্ভাব্য ছয়টি ভ্যাকসিনের মধ্যে একটি ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়াল শুরু করেছে তারা। ক্যানসিনো বায়োলজিক নামে একটি চীনা কোম্পানি অ্যাড৫ নামে একটি অ্যাডেনো ভাইরাসের ওপর ভিত্তি করে একটি ভ্যাকসিন উদ্বাবন করেছে যার প্রথম প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়ালে আশানুরূপ ফল
পাওয়ার পর সেটি শুধু সামরিক বাহিনীর জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে তারা। সেদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি সিনোফার্ম ঘোষণা দিয়েছে তারাও শিগগিরই তাদের ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল শুরু করবে। চীনের বেসরকারি কোম্পানি সিনোভ্যাক বায়োটেক তাদের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন করোনাভ্যাকের দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়াল শেষ করেছে গত মাসে। চীন ও ব্রাজিলে এর তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল শুরু হতে যাচ্ছে শিগগিরই। এছাড়া রাশিয়ায় গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করেছে গাম-কোভিড-ভ্যাক নামে যার প্রথম পর্বের ট্রায়াল হয়েছে গত মাসে। সুইজারল্যান্ডের ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন করছে যার প্রথম পর্বের ট্রায়াল শুরু হবে এ বছরের শেষদিকে। অ্যাস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি ভ্যাক্সিনের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের প্রথম পর্বের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হবে জুলাই মাসে। পাশাপাশি, ‘ভারত বায়োটেক’ নামে ভারতের একটি ওষুধ কোম্পানি জানিয়েছে, ১৫ আগস্ট থেকে সেদেশের সর্বস্তরের মানুষের ব্যবহারের জন্য বাজারে পাওয়া যাবে তাদের করোনা ভ্যাকসিন। জানা গেছে, কোম্পানিটি ৭ জুলাই থেকে ভারতে তৈরি করোনার ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করবে। পুরো জুলাই মাসব্যাপী চলবে এই ট্রায়াল। এর আগে গত ৩০ জুন ভারত ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা ভারত বায়োটেককে মানবদেহে করোনা ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমোদন দেয়। এ বিষয়ক এক বিবৃতিতে ভারত বায়োটেকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির সহযোগিতায় এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে তারা। এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন উদ্ভাবন ও ক্লিনিক্যাল পর্বে তার ব্যবহারের জন্য চ‚ড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া একটি সময়সাধ্য ও জটিল প্রক্রিয়া। প্রাণিদেহে কার্যকর একটি ভ্যাকসিন মানবদেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। কিংবা উৎপাদন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে মাঝপথে। এ মুহূর্তে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের দৌড়ে আরো যারা এগিয়ে আছে, তাদের মধ্যে রয়েছে মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও ইনোভিও, অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি ভ্যাক্সিন, জাপানের কোম্পানি অ্যানগেস এবং ভারতের কোম্পানি ভারত বায়োটেক। গত বছর শেষদিনে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর জানুয়ারি মাসেই ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের কাজ শুরু হয়। প্রথম ভ্যাকসিনটির মানবদেহে প্রথম পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয় মার্চ মাসে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য ১৭৮টি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এ মুহূর্তে চলছে পুরো বিশ্বজুড়ে। তাদের মধ্যে বর্তমানে হিউম্যান ট্রায়াল চলছে প্রায় ২০টি ভ্যাকসিনের।