×

জাতীয়

শীর্ষ ২ নেতার শীতল যুদ্ধে সাংগঠনিক কাজে স্থবিরতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২০, ০৯:৪০ এএম

দলে প্রভাব বিস্তার, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিমুখিতা, প্রাত্যহিক কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতাসহ সাংগঠনিক দ্বন্দ্বে বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টি হচ্ছে। নেতারা পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন শীতল যুদ্ধে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশ পাশ কাটিয়ে বিশেষ ক্ষমতা বলে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ নিজের মতো দলের কাজ পরিচালনা করছেন। ফলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে বিরাজ করছে স্থবিরতা। বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, গত ২৭ জুন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন রিজভী আহমেদ। তিনি জানান, করোনাকালেও নেতারা মাঠে নেই। দলের কোনো কাজে তারা মাঠে নামতে চান না। তিনি একাই ত্রাণ বিতরণ, নিয়ম করে দলের প্রতিক্রিয়া জনগণের সামনে তুলে ধরেন। সংগঠনকে চাঙ্গা করতে কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ এসব কার্যক্রমের সমালোচনা করছেন নেতারা। এমনকি কোনো কোনো নেতা সরকারের সঙ্গে লবিং করে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রেখে রাজার হালে চলছেন। পরে ওইদিনই স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রিজভীর বক্তব্যের জের টানেন। জানা গেছে, দলের এই দুই শীর্ষ নেতার দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো হলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তা নতুন করে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। দলে জোর গুঞ্জন রয়েছে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কাগজে কলমে মহাসচিব হলেও দলের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রয়োগ করেন রিজভী আহমেদ। সারাদেশের বিএনপির রাজনীতিকে এক হাতে নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। তার ইশারা ছাড়া কোথায় কোনো কমিটির অনুমোদন হয় না। দলের মহাসচিব হওয়ার প্রবল ইচ্ছা থেকেই বর্তমান মহাসচিবকে নিষ্ক্রিয় প্রমাণ করতে অনেক কাজ তিনি নিজ দায়িত্বেও করেন। তবে মির্জা ফখরুল মূলত খালেদা জিয়াকে সঙ্গে করে কাজ করেন। তাই ক্ষোভ থাকলেও মির্জা ফখরুলের কাছে কোনো বিষয়ে জবাবদিহি চান না তারেক রহমান। অন্যদিকে ধীর বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ায় ফখরুলও বিষয়গুলো চেপে যান। তবে মাঝে মাঝে এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় তাকে। দলীয় গঠনতন্ত্র ও করোনাকালীন সাংগঠনিক বিধি-নিষেধ এবং মানবিক দিক অমান্য করে গত ২২ জুন ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদকের শূন্য পদে উত্তরের সহসভাপতি আবদুল আলিকে বসান রিজভী আহমেদ। অথচ তার এই সিদ্ধান্তের কথা জানতেন না মির্জা ফখরুলসহ সিনিয়র নেতারা। শুধু তাই নয়, ২৩ জুন উত্তরের নতুন সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রিজভী। বিষয়টি নিয়ে রিজভী আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, গঠনতন্ত্রে দলীয় চেয়ারম্যানকে দলের নিয়ন্ত্রণ, তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য সবর্ময় ক্ষমতা ও দায়িত্ব দেয়া আছে। তিনি চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী দল পরিচালনা করছেন। এখানে গঠনতন্ত্রের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। সংকট মুহূর্তে দলের ভালোর জন্য যা করা দরকার সেটাই করেন। পদ ভীতি তার নেই। বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, এই দুই নেতার কোথায় এবং কী নিয়ে দ্বন্দ্ব তা বোঝা মুশকিল। তবে রিজভী আহমেদের বিষয়ে অনেক আগে থেকেই শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও অযাচিতভাবে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ছিল। তিনি তার পদের বাইরে গিয়েও কাজ করে লন্ডনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। রিজভীর এসব কাজকর্ম দলের জন্য ভালো হলেও সে দলের চেইন অফ কমান্ড ব্র্রেক করে ফেলেন। এছাড়াও দলের সঙ্গে সমন্বয় না করেই তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করেন। যে কারণে তাকে আবাসিক নেতা বলেও ব্যঙ্গ করা হয়। অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন কমিটি অনুমোদন দেয়ার ঘোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও রিজভী মধ্যে সিনিয়রদের অবজ্ঞা ও অবহেলা করার প্রবণতা রয়েছে। তার এ ধরনের কর্মকাণ্ড দলের জন্য মঙ্গল নয়। এদিকে দলের সব পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, এই দুই নেতার কারণে দলে দুটি কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। একটি গুলশান কার্যালয় আরেকটি নয়াপল্টন কার্যালয়। যার ফলে কোনো রকম সমন্বয় ছাড়াই একই ইস্যুতে দুজন দুই ধরনের কথা বলেন। তবে বিএনপির মাঠের নেতারা রিজভী আহমেদের পক্ষে বলেন, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরে তাকে কারামুক্ত করতে মহাসচিব বা সিনিয়র কোনো নেতাই তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং রিজভী আহমেদ খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ছোটখাটো আন্দোলন টেনে নিয়ে গেছেন। এছাড়াও করোনা সংকটে একটা দিনের জন্যও তিনি ঘরে বসে থাকেননি। ত্রাণ দিতে রাজধানীর বাইরেও ছুটে গেছেন। জানতে চাইলে, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মাদ রহমতউল্লাহ বলেন, দলের এই দুই নেতাই দলের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে রয়েছেন। তাদের মতানৈক্যের কথা মাঝে মধ্যে প্রকাশ পায়। এ ব্যাপারে শীর্ষ নেতৃত্বের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। না হয় এর ফল ভোগ করতে হবে দলকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App