×

জাতীয়

পরীক্ষা নেমেছে অর্ধেকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২০, ০৯:২১ এএম

পরীক্ষা নেমেছে অর্ধেকে

নমুনা পরীক্ষা করাতে হাসপাতালে ভিড়। ফাইল ছবি।

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষজ্ঞরা যখন নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন; তখন দেশে দেখা দিয়েছে নমুনা পরীক্ষার কিটের সংকট। সরকার ৩০ হাজার নমুনা পরীক্ষার টার্গেটের কথা বললেও এখনো তা ১৭ থেকে ১৮ হাজারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। কিট সংকটের কারণে বাড়ছে না নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। কিট সংকটের কারণে ইতোমধ্যেই নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যেমন কিটের অপচয় রোধে সরকারি হাসপাতালেও নমুনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সময় টানা তিন দিন ওষুধ না খেয়েও জ্বর-শ্বাসকষ্টসহ করোনার অনান্য উপসর্গ না থাকলে ওই ব্যক্তি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পাবেন। এর জন্য দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করার দরকার হবে না। তবে তাকে বাসায় কঠোরভাবে ১৪ দিনের আইসোলেশনে থাকতে হবে। উপসর্গহীনভাবে ১০ দিন থাকলে তাকে করোনা মুক্ত বলে ধরে নেয়া হবে। এর জন্য তার পুনরায় নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন হবে না।

ঢাকা মেডিকেল, মুগদা মেডিকেল, মিটফোর্ড হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও বুথে করোনা পরীক্ষার জন্য অসংখ্য রোগী ভিড় করলেও গত কয়েকদিন ধরে সবার নমুনা নেয়া হচ্ছে না। নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সঙ্গে জড়িতরা জানিয়েছেন, এখন নমুনা সংগ্রহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আর একেবারে প্রয়োজন ছাড়া, উপসর্গহীন ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা হচ্ছে না। আগে যেসব প্রতিষ্ঠানে ৩’শর মতো নমুনা সংগ্রহ করা হতো এখন তা দেড়শ কিংবা ১৮০-তে এসে নেমেছে।

জানা যায়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত ৫৪টি বুথে নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ১০১টি বুথ স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু কিট সংকটের কারণে বাকি বুথগুলো তারা স্থাপন করতে পারছে না।

ব্র্যাকের ১৮টি বুথের রিপোর্ট আসে ডা. খাদিমের কাছে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, কিছু বুথে নমুনা সংগ্রহের পরিমাণ আগের চেয়ে কমেছে। আগে প্রতি বুথে ৩০টি করে নমুনা সংগ্রহ করা হতো। এখন তা কমে হয়েছে ১৫ থেকে ২০টি। আবার কিছু বুথে আগের মতোই নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ২২ জুন এক অনুষ্ঠানে কিট প্রসঙ্গে জানান, চাহিদা অনুযায়ী পরিমাণে কিট পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ বর্তমান বিশ্বের সব দেশেই কিটের চাহিদা রয়েছে। তবে যা মজুদ আছে তাতে ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। কোনো কারণে সংকট তৈরি হলেও তা খুব দ্রুতই মেটানোর ব্যবস্থা সরকারের হাতে রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, গত তিন মাসে আট লাখের মতো টেস্টিং কিট আমদানি করা হয়েছে। তবে কিটের মজুদ খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাচ্ছে। সেই কারণেই কয়েকটি ল্যাবে কিটের সরবরাহ বন্ধ আছে। আর ল্যাবগুলোতে পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়ে দিতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ সমস্যা সমাধানে একটি মানসম্মত কর্মপদ্ধতি তৈরি করতে এবং কিটের মজুদ বাড়াতে কাজ করছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, কিটের কোনো অভাব নেই এবং পরীক্ষাগারগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কিট সরবরাহ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) থেকেও বলা হচ্ছে, কিটের কোনো দীর্ঘমেয়াদি সংকট নেই। তবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিতরণ পদ্ধতির গলদের কারণেই সাময়িক সংকট তৈরি হয়েছে। গত ৩০ মে স্বাক্ষরিত কার্যাদেশে নয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে ১১ লাখ ২৫ হাজার কিট সরবরাহের আদেশ দেয় কেন্দ্রীয় ঔষধাগার। এগুলো হলো : ওভারসিজ মার্কটিং করপোরেশন, ওমসি, স্টারলিং মাল্টি টেকনোলজিস লিমিটেড, ইউনিমেড লিমিটেড, তমা কনস্ট্রাকশন, বাংলাদেশ সায়েন্স হাউস, প্রযুক্তি ইন্টারন্যাশনাল, মাইশা রাও ও বায়োটেক সার্ভিস। প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরির পাশাপাশি দাম কমাতে নতুন করে আরো পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। জানা গেছে, অর্থাভাবে গত ১০ দিন ধরে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার কিট আমদানি ব্যাহত হচ্ছে।

এদিকে, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধাপে কিট সরবরাহ করলেও সিএমএসডি তাদের কোনো অর্থ সরবরাহ করতে পারেনি। অর্থ সংকটের কারণে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান কিট আমদানি এবং নতুন ক্রয়াদেশ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় করোনা পরিস্থিতির জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় না দেয়ায় আমদানিকারকদের বিল পরিশোধ করতে পারছে না সিএমএসডি।

ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম শামছুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, কিট সংকটের বিষয়টি আমি শুনেছি। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠানে আগের মতোই নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা হচ্ছে। এখন আমরা প্রতিদিনের পরীক্ষার কাজটি প্রতিদিনই সম্পন্ন করি। অনেক সময় একটা নির্দেশনা সঠিকভাবে বুঝতে না পারার কারণে কিছু সমস্যা হয়। এক্ষেত্রেও হয়তো তেমন কিছু হয়েছে। এমন হতে পারে, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো এখন তাদের ল্যাবের সক্ষমতা অনুযায়ী সেই সংখ্যক নমুনা সংগ্রহ করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App