×

মুক্তচিন্তা

নতুন পৃথিবীর প্রত্যাশায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২০, ০৮:০২ পিএম

ধারণা করছিলাম করোনা ভাইরাসটি উহানের মানুষজনকে হয়তো কিছুদিন ভোগাবে এবং দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে। কেননা এর আগের সার্স, মার্স, ইবোলা গোত্রের ভাইরাসগুলো নিয়ে পৃথিবীর মানুষকে এত নড়েচড়ে বসতে হয়নি। দেখতে দেখতে গত কয়েক মাসে বর্তমানের নভেল করোনা (কোভিড-১৯) ভাইরাসটি উহান থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে। এর দ্বারা ইতোমধ্যে এক কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং ৫ লাখের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। বাংলাদেশেও আক্রান্তের হার প্রতিদিনই বাড়ছে। বোঝাই যাচ্ছে ক্ষুদ্র এক জীবাণু যা খালি চোখে দেখা যায় না, সেটিই কিনা মানবজাতিকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সামাজিক দূরত্ব মেনে ঘরে থাকা নিরাপদ মনে করছেন এবং তাই হয়েছে। বিষয়টি এমন যে, ক্ষুদ্র এক ভাইরাস আমাদের ঘরে থাকতে বাধ্য করেছে। যা নজিরবিহীন, তাই পৃথিবীর জন্য এটি বিরাট এক সংকট। আচমকা সৃষ্ট এ সংকটের পূর্বে পৃথিবীতে অনেক ধরনের সংকট চলমান ছিল। যেমন- শরণার্থী সংকট, সিরীয় সংকট, মধ্যপ্রাচ্য সংকট, উত্তর কোরীয় নেতা কিম জংউনের একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ফলে সৃষ্ট সংকট, পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার নিয়ে শক্তিশালী আমেরিকা, রাশিয়ার নেতাদের এক প্রকার মনস্তাত্তি¡ক সংকট ইত্যাদি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ক্ষুদ্র এক ভাইরাস যা বিশ্ববাসীর সামনে শত্রুরূপে হাজির হলো অথচ এটিকে মোকাবিলা করার কোনো অস্ত্রই কারো হাতে নেই। অদৃশ্য এই শত্রুর বিরুদ্ধে বর্তমানে চলছে এক যুদ্ধ। যেই যুদ্ধের সম্মুখ সারিতে আছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। যারা জীবন বাজি রেখে এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়ছে। যুদ্ধ কবে শেষ হবে তা আমাদের জানা নেই। আর কত প্রাণ ঝরবে তা সৃষ্টিকর্তা ভালো জানেন। করোনার ছোবলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা তথৈবচ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন অসহায়, ধরাশায়ী। তার বডি লেঙ্গুয়েজের সঙ্গে বাস্তবতার রয়েছে অনেক অমিল। তবুও ট্রাম্পের মন্তব্য তার দেশ নাকি অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা করোনা বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে পূর্বে একাধিকবার সতর্ক করলেও তিনি তা আমলে নেননি। সুতরাং বলা যায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই ব্যর্থতা ইতিহাসের পাতায় মোটা দাগে লিখিত থাকবে। রাশিয়ায় প্রতিদিন বাড়ছে হাজার হাজার করোনা রোগী। প্রেসিডেন্ট পুতিন কীভাবে তা সামাল দেবেন তা নিয়ে হয়তো ভাবছেন। বিশ্লেষণে দেখা যায় শক্তিশালী দেশগুলোর অস্ত্রের ঝনঝনানি কোনো কাজেই লাগল না। তাই করোনা পরবর্তী বিশ্বে ‘কিসে মানবকল্যাণ’ এই বিষয়টি বিশ্ব নেতাদের আবারো নতুন করে ভাবতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে অচিরেই এই সংকট পৃথিবী থেকে দূর হওয়ার নয়। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে লোকজন স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। কতদিন বা ঘরে বন্দি থাকা যায়। ঘর থেকে বের হয়ে একটু প্রকৃতির সান্নিধ্য কে না পেতে চায়! কিন্তু বাস্তবতা হলো করোনা আতঙ্ক। প্রতিদিন এর সংক্রমণ বেড়ে চলছে। মানুষ হিসেবে আমরা তো প্রাচীনকাল থেকে সামাজিক। করোনা এই সামাজিকতায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষজন আত্মীয়স্বজন, শুভাকাক্সক্ষীদের নিয়ে বিয়েশাদি করবে সেটাও করোনাকালে সম্ভব হচ্ছে না। শিশু, কিশোর, তরুণরা যে সামাজিক হয়ে উঠবে এর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলাধুলার ভ‚মিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলাধুলার সব আয়োজন বন্ধ। বিশ্ব অলিম্পিকসহ অনেক আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অথবা টুর্নামেন্ট হয় স্থগিত না হয় পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেক বিখ্যাত খেলোয়াড় ঘরে বসে জিম করছেন নিজেদের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য। শিল্প, সংস্কৃতি অঙ্গনেও নেমে এসেছে হতাশার ছায়া। গানের শিল্পীরা উন্মুক্ত স্থানে হাজার হাজার দর্শকের সামনে গান গাইতে পারছেন না। অভিনয় শিল্পীরা প্রাণ খুলে অভিনয় করতে পারছেন না। ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন, কৃষি, পোল্ট্রি, মৎস্য খাতসহ অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট উৎপাদনশীল অধিকাংশ খাতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। দেশে দেশে বাড়ছে বেকারত্ব, চাকরি থেকে ছাঁটাই, সেই সঙ্গে দারিদ্র্য। একটি গবেষণায় দেখা যায়, করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে নতুন করে ২৩ শতাংশ মানুষ গরিব হয়েছে। এতে বলা হয় গ্রামের চেয়ে শহরে নতুন করে গরিব হওয়ার প্রবণতা বেশি। এটাও তো ঠিক অর্থনীতির চাকা সচল না হলে করোনা পরবর্তী সময়ে একটি দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায় না।

ইফতেখার হোসেন সিদ্দিকী শিক্ষক ও লেখক

[email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App