×

মুক্তচিন্তা

করোনাকালের জার্নাল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২০, ০৮:১৭ পিএম

স্থান কাল ও পরিবেশ ভেদে করোনা ভাইরাসের যে বিবরণ আমরা নিজেই পেয়ে আসছি তাতে এটাই বরং জোর করে বলা যায় এই ভাইরাস সম্পর্কে পাঠ আমাদের শেষ হয়নি। আক্রান্ত হলে লড়াই করে বেঁচে থাকার ওষুধ কী হবে, তার মূল্য কত হবে তা নির্ধারণে ফার্মা-মাফিয়া চক্রের লড়াই শুরু হয়ে গেছে। তবে নিশ্চিত কিছু যে এখনো মেলেনি তা স্পষ্ট। তবে আশার কথা, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সর্বত্র ওষুধ বিজ্ঞানীরা প্রতিষেধক বের করতে যেভাবে কাজ করছেন, ব্যাধি ও ওষুধশিল্পের ইতিহাসে এমন সাড়া আগে কখনো পড়েনি;

স্বাস্থ্য খাতের বড় বড় দুর্নীতির যারা প্রমোটার, রাজনৈতিক দাস্যবৃত্তিকে যারা নিজ নিজ গদিতে আসীন হবার পূর্বশর্ত বলে মেনে নিয়েছেন একসময় সত্যটা এড়িয়ে যাওয়া তাদের বেলাতেও মুশকিল। আমাদের এখন মানতেই হচ্ছে আমরা করোনা ভাইরাসের চেয়ে শক্তিশালী নই, আমাদের মানতেই হচ্ছে এটা সামান্য হাঁচিকাশি নয়, আমাদের মানতেই হচ্ছে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছি বলে জাতিকে যে বার্তা দিয়েছি তার সঙ্গে বাস্তবতার যোগসাজশ নেই। রাষ্ট্রীয় খাতের অর্থে মাস্ক-ধোঁকা আমরাই জাতিকে দিয়েছি। ভারতবর্ষের কৌটিল্য প্রশাসকদের দুর্নীতি সম্পর্কে যে চিত্র তুলে ধরেছেন, বিলেতের মেকলে সাহেব যেভাবে অপবাদ দিয়ে আমাদের চিহ্নিত করেছেন আমরা সে ইমেজ ভেঙে বেরোতে পারিনি। গবেষণালব্ধ জ্ঞানেই হোক কিংবা মন্ত্রীদের অনেকের মতো কথার কথা হিসেবে হোক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাংলাদেশের করোনামুক্ত হতে দু’তিন বছর লেগে যেতে পারে বলে বিপাকে পড়েছিলেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ক‚টকাটব্য শুনে আবারো গবেষণালব্ধ জ্ঞান ছাড়াই তার বক্তব্য থেকে দু’তিন বছর কথাটা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। পশ্চিমের বিশেষজ্ঞরাও দ্বিধাবিভক্ত; কেউ বলছেন ভ্যাকসিন এলো বলে, কেউ বলছেন ভাগ্য ভালো হলে দু’তিন বছরের মধ্যে করোনা ভাইরাস বিদায় নেবে। তারা এটাও মনে করে দিয়েছেন গত শতকে একই সময়ের (১৯২০) স্পেনিশ ফ্লু নামের বিশ^ব্যাধি ৩ বছর পুরো না করে বিদায় নেয়নি। আরো ভয়াবহ কিন্তু সত্যি কথা কেউ কেউ বলেছেন। এক সময়ের বিশ^ব্যাধি গুটিবসন্ত সম্পূর্ণ নির্মূল করতে অত্যন্ত কার্যকরী ভ্যাকসিন থাকার পরও দুশ বছর লেগেছে। তিনি হয়তো ভুল বলেননি। উনিশের ডিসেম্বরে প্রথম করোনা ভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা বলা হলেও বিশেষজ্ঞদের কারো দাবি আগস্টেই রোগটির সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এই বিশ্বব্যাধির সেকেন্ড ওয়েভ, থার্ড ওয়েভের কথাও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্লেগ বারবার ফিরে এসেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে উন্নত বলে দাবিকৃত যুক্তরাষ্ট্রের দিকে চোখ ফেরালে বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। ৫১টি অঙ্গরাজ্যের কোনোটিতেই গত এক মাসে (২২ মে থেকে ২২ জুন) করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমেনি। আরিজোনাতে রোগীর সংখ্যা ২৪৯% বেড়েছে। ১০০% এর ওপর বৃদ্ধি পেয়েছে আরকানসাস, সাউথ ক্যারোলিনা, নর্থ ক্যারোলিনা, নুইটাহ, আলাবামা, টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ফ্লোরিডাতে- বৃদ্ধির হার ৮.৫% থেকে ২৪৯%। কাজেই সেকেন্ড ওয়েভ সে দেশে শুরু হওয়ার কারণ নেই, বাংলাদেশে তো নয়ই। এ দেশে সংক্রমণ কবে নাগাদ চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে পারে তাও বলা যাচ্ছে না বলে চীনা বিশেষজ্ঞদের অভিমত। দুটি সংবাদ আমাদের কারোরই নজর এড়িয়ে যাবার নয়। একটি বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বয়কো বরিসভকে নিয়ে। রাজধানী সোফিয়া থেকে ৭০ মাইল দক্ষিণে একটি সংযোজক সড়ক উদ্বোধন করতে মাস্ক না পরেই একটি অর্থোডক্স চার্চে গিয়েছেন, সঙ্গে তার সাঙ্গোপাঙ্গ এবং সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যান তো ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর দেখাদেখি আরো কেউ কেউ মাস্ক পরেননি। তাদের ছবি গণমাধ্যমে আসতে সময় লাগেনি। নিজের আইন ভঙ্গ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী অভিযুক্ত হন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে তাকে ১৭৪ ডলার সমমানের বুলগেরীয় অর্থ জরিমানা করা হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিরিল আনানিয়েভ বলেছেন, আইন অন্ধ। আইন কোনো ব্যক্তিকে চেনে না, আইন অমান্যকারীকে চেনে। প্রধানমন্ত্রী অমান্য করেছেন, তাই শাস্তি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে তার রক্ষণশীল দলের বৈঠকে অধিকসংখ্যক উপস্থিতি থাকায় ঠিক তার আগের দিনই তার দলকে ১৫০০ ইউরো জরিমানা করা হয়েছিল। বরিসভ তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রিত্ব করছেন। তার বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের অভিযোগ আছে। ট্রাম্পের মতো গোঁয়ার্তুমিরও। তিনি শুরু থেকেই মাস্ক প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। তিনি মাঝেমধ্যে মিথ্যে কথাও বলেন, বারাক ওবামাকে বলেছেন, তিনি কারাতে-তে ব্ল্যাকবেল্টধারী; বাস্তবে তা নয়; তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের দুর্নীতির তদন্ত প্রতিহত করার এবং উচ্চ আদালতের রায় প্রভাবিত করার অভিযোগ আছে। তবে বুলগেরিয়ান সুবিধাবাদীদের মধ্যে আমদের কিছু চারিত্রিক দিক খুঁজে পাওয়া যায়, তারা প্রধানমন্ত্রীর বেসুমার প্রশংসা করে তার নামে কবিতা লিখেন, তাকে কথায় কথায় তাকে ‘ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব’ বলে অ্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। এমন একটি আবহের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে সাজা দিতে সম্মতি কেমন করে দিলেন এ প্রশ্নটি উঠতেই পারে। তার কি মন্ত্রিত্ব ধরে রাখার ইচ্ছে নেই? নাকি তার ছেলে কিংবা জামাতা পিপিই বাণিজ্য ও ওষুধ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত নয়? করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দিকে আফ্রিকার দেশ বুরুন্ডির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন তার দেশে এই ভাইরাসে সংক্রমিত কোনো রোগী নেই। তার কথার পরের অংশে তিনি আরো স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তার দেশে কোনো টেস্টিং কিটই নেই। করোনাযুগ মানবজাতির জন্য সর্বনাশা হিসেবে এলেও কোথাও কোথাও স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাদের স্বজনদের জন্য তা এসেছে পৌষ মাস হিসেবে। মাস্ক থেকে শুরু করে ভেন্টিলেটর, টেস্টের ফলাফল পাওয়া থেকে শুরু করে হাসপাতালের আইসিইউ প্রাপ্তিÑ এই বাণিজ্যকে কোনো কোনো দেশে নিয়তি হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে। তারপরও করোনাকালে গ্রেপ্তার হয়েছেন জাম্বিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাক্তার চিতালু চিলুফিয়া। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি দোহাই দিয়েছেন তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ। কিন্তু এটি অসত্য তথ্য। করোনাকালের নয়, তার আগের দুর্নীতির জন্য। তিনি মন্ত্রণালয় থেকে আড়াই মিলিয়ন ডলার ‘চুরি’ করেছেন। জাম্বিয়া সরকারের প্রেস রিলিজে চুরিই বলা হয়েছে। তদন্ত চলাকালে তিনজন সরকারি কর্মকর্তা তদন্তকারী দলকে হুমকি দিলে কাজটি পিছিয়ে যায়, মন্ত্রীর গ্রেপ্তারে বিলম্ব ঘটে। একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ হচ্ছে একটি বিদেশি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার বিনিময়ে তিনি ৪৯টি আবাসন কুক্ষিগত করেছেন। করোনার ভয়াল মৌসুমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকার কারণে তার গ্রেপ্তারের খবরটি এত প্রচারণা পেয়েছে। দুর্নীতি করে ক্ষমতাসীন হওয়া যায়, ক্ষমতাসীন হয়ে দুর্নীতির আকার বহু গুণিতক করা যায়। আবার দুর্নীতিবাজ এবং ক্ষমতাসীনদের পরস্পর নির্ভরশীলতা দুর্নীতিকে জিইয়ে রাখে। ব্যতিক্রমে নয় বাংলাদেশও- করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ স্বাস্থ্য খাতের প্রতি স্তরে স্তরে প্রাতিষ্ঠানিকীকৃত দুর্নীতি প্রকাশ করে দিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের খাওয়া দাওয়ার ২০ কোটি টাকা বিল হওয়ায় সংসদ তা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। এটা এমনই আজগুবি বিল যে প্রধানমন্ত্রীও না বলে পারেননি- এটা কেমন করে হয়? করোনাকালের যে যুদ্ধে ডাক্তাররাই তো ফ্রন্টলাইনে, তারাই জীবন দিচ্ছেন। তাদের সবাই যে বাড়তিটা খাচ্ছেন না এটা নিশ্চিত- তবে ঠিকাদারের বিলে অন্যান্য বখরা প্রাপকের সঙ্গে বিলখেকো তাদেরও কেউ আছেন কিনা, সেটাও প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন।

হার্ড ইমিউনিটি মানে রোগ প্রতিরোধের শক্ত ক্ষমতা নয় স্থান কাল ও পরিবেশ ভেদে করোনা ভাইরাসের যে বিবরণ আমরা নিজেই পেয়ে আসছি তাতে এটাই বরং জোর করে বলা যায় এই ভাইরাস সম্পর্কে পাঠ আমাদের শেষ হয়নি। আক্রান্ত হলে লড়াই করে বেঁচে থাকার ওষুধ কী হবে, তার মূল্য কত হবে তা নির্ধারণে ফার্মা-মাফিয়া চক্রের লড়াই শুরু হয়ে গেছে। তবে নিশ্চিত কিছু যে এখনো মেলেনি তা স্পষ্ট। তবে আশার কথা, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সর্বত্র ওষুধ বিজ্ঞানীরা প্রতিষেধক বের করতে যেভাবে কাজ করছেন, ব্যাধি ও ওষুধশিল্পের ইতিহাসে এমন সাড়া আগে কখনো পড়েনি; এটাও একই সঙ্গে সত্য এমন সক্ষমতাও আগে কখনো ছিল না। যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার পর আজীবন সুরক্ষিত থাকা যাবে সে আশাবাদ এখনো উচ্চারিত হয়নি। তবে কোনো কোনো সংস্থা/প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন গবেষণায় এগিয়ে আছে, কারো কারো ট্রায়াল পর্ব শুরু হয়েছে এমন খবর আসছে। হালে আর একটি বিষয় বেশ আলোচিত হচ্ছে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা। গণমাধ্যমে একজন বক্তার কথা শুনে মনে হয়েছে বেশি করে ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, জিঙ্ক খেয়ে ভাপ নিয়ে গরম পানি খেয়ে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা দারুণভাবে বাড়াতে পারলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্ত হয়ে উঠবে এবং তখন করোনা ভাইরাস আমাদের তেমন কিছু করতে পারবে না। হার্ড বানানটাতে যে ইংরেজির ঊ রয়েছে অ নয়, এটা সম্ভবত কেউ কেউ খেয়াল করিনি। শব্দটি মূলত পশুস্বভাব ও পশুপালন থেকে উদ্ভূত, যেমন এ হার্ড অব কাউ- এক পাল গরু। ইংরেজি অভিধানে মানুষের বেলাতেও এটা ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন- গরুর পালের মতো বাসে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। হার্ড ইমিউনিটি শব্দযুগল ১৯৩০-এর দশকে শিশুদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাম রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করায় বলা হয় তাদের হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হয়েছে। টিকা প্রয়োগ করে কিংবা টিকা ব্যতিরেকে অন্য কোনো ছোঁয়াচে সংক্রামক রোগে ভুগে প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জিত হতে পারে। আর এ সংখ্যাটি যদি বেশি হয় তাহলে রোগের বিস্তার ঠেকানো যায়- নতুন কোনো হোস্ট না পেলে ভাইরাস আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যায়। টিকা গ্রহণে অনীহা কিংবা টিকাবিরোধী ফ্রি রাইডার্সগণ প্রতিরোধ পর্যায়ের অযৌক্তিক আচরণ করে অর্জিত হার্ড ইমিউনিটি বিনষ্ট করে দিতে পারে। কতভাগ মানুষের হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হলে রোগ বিদায় নেবে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। হামের বিলুপ্তি ২০০০ সালেই ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালে ৬৬৮ জন মানুষের মধে হাম সংক্রমিত হওয়ার বিষয় রেকর্ড করা হয়েছে। ২০১৯-এ ডিজনিল্যান্ডে হাম সংক্রমণ ধরা পড়েছে। করোনা ভাইরাসের বেলায় কতভাগ সংক্রমিত হওয়ার পর হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হবে? জন হপকিন্সসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। ‘সিগনিফিক্যান্ট নাম্বার’, তবে সাধারণভাবে ৬০ থেকে ৯০ ভাগ প্রতিরোধ করতে পারলেই হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। করোনা ভাইরাস নিয়ে গবেষণায় ও বিশ্লেষণে ইউরোপের কয়েকজন গবেষক এ সংখ্যাকে ২০-তে নামিয়ে আনলেও চলবে বলে মনে করছেন। বিশ্বে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫ লাখ আগেই ছাড়িয়ে গেছে। তবে প্রথমে যে আতঙ্ক ছিল তাতে মৃতের সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। উদাহরণ হিসেবে সামনে আনা হয়েছে ডায়ামন্ড প্রিন্সেস ক্রুজ শিপের কথা। ৩৭১১ জন যাত্রী ও ক্রু নিয়ে সফরে বেরোনো এই জাহাজে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটে। এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমের মাধ্যমে সব কেবিনই পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ায় কোনো না কোনোভাবে সবারই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার কথা। তাছাড়া প্রথম দিকে যাত্রীরা বিষয়টিকে গুরুত্বও দেননি। জাহাজটিকে টোকিও উপসাগরে এক মাসের জন্য কোয়ারেন্টাইন করা হয়। জাহাজটি ২০ জানুয়ারি হংকং থেকে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করে। ৮০ বছর বয়স্ক একজন করোনা ভাইরাস রোগী জাহাজে শনাক্ত হন এবং ২৫ তারিখে তাকে চিকিৎসার জন্য নামিয়ে দেয়া হয়। ৪ ফেব্রæয়ারি জাহাজ যখন জাপানের জলসীমায় তখন রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১০। সেদিনই ইয়োকোহামা বন্দরে জাহাজটি কোয়ারেন্টাইন করা হয়। ১৬ মার্চ করোনা ভাইরাস পজিটিভ রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১২, অর্থাৎ প্রায় ২০ শতাংশ। ১৪ এপ্রিলের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু ঘটে। জাহাজটি জীবাণুমুক্ত করে ১৬ মে ইয়োকোহামা থেকে মালয়েশিয়ার যাত্রা করে। এই হিসাব থেকে সরলীকরণের সুযোগ নেই। তারপরও স্টকহোম, নিউইয়র্ক ও লন্ডনে দায়িত্বরত সামরিক জাহাজের ওপর করা সমীক্ষায় দেখা গেছে সেখানেও সংক্রমণের হার কমবেশি ২০ ভাগ। সুইডিশ গবেষকরা বলেছেন তাদের দেশে সংক্রমণ ৫০ ভাগ ছাড়িয়ে গেছে এবং হার্ড ইমিউনিটির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ইতালিতে কোভিড-১৯-এর মুখ্যকেন্দ্র বার্গেমোতে প্রতি চারজনের একজন বৃদ্ধ, জুনের প্রথম দিকেই তাদের ৬০ ভাগের দেহে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে। সুইডেনে লকডাউন ছিল সামান্য মাত্র, কিন্তু প্রতিবেশী নরওয়ে ও ফিনল্যান্ডে যথার্থ লকডাউন হবার কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই-ই কম। চিকিৎসকরা ব্যক্তির রক্ত গঠন এবং টি-সেল প্রভাবিত রোগ প্রতিরোধকের কথাও বলছেন যা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভিন্ন ভিন্নভাবে কাজ করবে। তবে এটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করোনা ভাইরাস শুরুতেই যতটা ভয়ঙ্কর মনে হয়েছিল, সার্বিকভাবে ততটা নয়, অধিকন্তু হার্ড ইমিউনিটি অর্জনে ৬০%, ৭০% সংক্রমণেরও প্রয়োজন নেই। বাকি অংশ আগামীকাল ড. এম এ মোমেন : সাবেক সরকারি চাকুরে, নন-ফিকশন ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App