×

রাজনীতি

অনলাইনে পশুর হাটের প্রস্তুতি ডিএনসিসির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২০, ০৯:৩০ এএম

অনলাইনে পশুর হাটের প্রস্তুতি ডিএনসিসির

(ফাইল ছবি)

বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এবার কুরবানির পশুর হাট স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনার কথা বলা হলেও এ নিয়ে জনমনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ ও পশুর সমাগমস্থলে কীভাবে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব উঠছে সেই প্রশ্নও। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রয়োজনে হাট কমানোর তাগিদ দিয়েছেন। আবার অনেকে মনে করছেন, হাটের সংখ্যা বাড়ালে ভিড় কম হবে, ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কিছুটা হলেও কমবে। এই প্রেক্ষাপটে রাজধানীতে ২৪টি অস্থায়ী পশুর হাটের বাইরে অনলাইনে গরু-ছাগল কেনার জন্য আরো একটি পশুর হাটের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে উত্তর সিটি করপোরেশন। এতে ঘরে বসেই কেনা যাবে কুরবানির পশু। পরে হাট কর্তৃপক্ষ ট্রাকে করে তা পৌঁছে দেবে ক্রেতার বাড়ি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবার বলেছেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে কুরবানির পশুর হাট সংক্রমণের হার আরো বাড়িয়ে দেয়ার আশঙ্কা থাকায় এ বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে কার্যকর গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে পশুরহাটের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। যত্রতত্র পশুরহাটের অনুমতি দেয়া যাবে না, কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন না করলে কুরবানির পশুরহাট স্বাস্থ্যঝুঁকির ভয়ানক মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আগেই করণীয় নির্ধারণের আহ্বান জানান তিনি।

ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম এরই মধ্যে সাংবাদিকদের বলেছেন, সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কুরবানির পশুর হাট বসবে। তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি বলছেন, ক্রেতা, বিক্রেতা, ইজারাদার সবাইকেই মাথায় রাখতে হবে, কুরবানির হাট যখন বসছে তখন একটা চরম মহামারির মধ্যে আছি আমরা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মমিনুর রহমান মামুন জানান, সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মিলে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বৈঠক করেছেন। হাটের স্বাস্থ্যবিধি নির্দেশনা তৈরির কাজ চলছে। প্রশাসন, ইজারাদার, ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই মিলে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে। সবাইকে নিজ নিজ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, এবার উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের পাশে একটি অনলাইন পশুর হাটের আয়োজনের চিন্তা ও চেষ্টা চলছে। দুএক দিনের মধ্যে তা চূড়ান্ত হবে। এতে হাটে শুধু গরু-ছাগল থাকবে। কোনো ক্রেতা থাকবে না। ছবি ও দাম দেখে ক্রেতার পছন্দ হলে হাসিল কেটে ট্রাকে করে তার বাড়িতে পশু পৌঁছে দেয়া হবে। এছাড়া হাটগুলোতে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ থাকবে আলাদা। ক্রেতা-বিক্রেতার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পাশাপাশি প্রবেশ মুখে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া নিশ্চিত করতে নির্দেশনা প্রস্তুত হচ্ছে। পাশাপাশি লোকজনকে অনলাইনে কেনাকাটায় আগ্রহী করতে প্রচারণা চালাবে সিটি করপোরেশন।

ঢাকা দক্ষিণের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. শরীফ আহমেদ বলেন, ঢাকা শহরে বেশিরভাগ হাট বসে রাস্তার উপরে। এই জায়গাগুলো এমন যে সেখানে প্যারামিটার দেয়া খুব মুশকিল। তারপরও আমরা কিছু বিষয় নিয়ে আলাপ করেছি। ক্রেতা-বিক্রেতার দূরত্ব রাখা, অসুস্থ ব্যক্তি যাতে হাটে না আসে এরকম বেশ কিছু পয়েন্ট আমরা নোটডাউন করেছি, যেগুলো মাইকে বলা হবে। আমরা ভিড় সামলাতে পুলিশের সাহায্য নেব। এছাড়াও আরো কিছু পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রমণ রোগ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিচালক ডা. শাহনিলা ফেরদৌস বলেন, স্বাস্থ্যবিধি তো একটা রয়েছে। অধিদপ্তর ইতোমধ্যেই সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংক্রমণ রোধে ৬২ পাতার একটি নির্দেশনা দিয়েছে। যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে আলাদা করে বলে দেয়া আছে। যেমন স্কুল, মসজিদ, অফিস, কাঁচাবাজার, বিনোদনকেন্দ্র এগুলো সম্পর্কে আলাদা করে বলা হয়েছে। তবে পশুর হাট যেহেতু খোলা জায়গায় অস্থায়ী একটি ব্যবস্থা, সেটার জন্য আমরা আলাদা করে চিন্তা করে একটা পরিকল্পনা করব।

তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলছেন, যদি এবার পশুর হাট বসতে অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হবে। এই রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যে প্রয়াসগুলো আমরা নিচ্ছি তার সবটাই ব্যর্থ হবে। অন্তত এবার সরকার রাশ টেনে ধরুক। তিনি বিকল্প কিছু চিন্তা করার পাশাপাশি অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপে পশু বিক্রি উৎসাহিত করার আহ্বান জানান।

এদিকে ঢাকার ২৪টি হাটের ইজারাদারদের মধ্যে অধিকাংশই এবার নতুন মুখ। তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। একাধিক ইজারাদার বলছেন, হাটে প্রবেশমুখে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, মাস্ক পরা নিশ্চিত করার কথা বলা হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের মধ্যে এসব নিশ্চিত করা সহজ ব্যাপার নয়। আবার ক্রেতারা গরুর কাছে গিয়ে হাত দিয়ে ধরে যাচাই কবরেন, এর দাম নিয়ে কথা বলবেন। প্রায়ই একটি পশুর জন্য একাধিক ক্রেতা ভিড় করে থাকেন। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। বড় গরুর ক্ষেত্রে একটি গরু ধরতে কয়েকজন লোক লাগে। সেক্ষেত্রে সামজিক দূরত্ব নিশ্চিত কিভাবে সম্ভব? এ অবস্থায় হাটের সংখ্যা বাড়ানো হলে মানুষের ভিড় কম হতো বলে মনে করেন তারা।

অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় মুখে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ বেশকিছু নির্দেশনা ভাবনায় থাকলেও ভিড় কীভাবে সামলানো হবে, ক্রেতা-বিক্রেতা, ইজারাদারদের কর্মী মিলে কতজনকে একসঙ্গে হাটে ঢুকতে দেয়া হবে এসব নিয়ে সিটি করপোরেশন বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেউই এখনো পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারছেন না। তাছাড়া তাপমাত্রা পরিমাপ করা, দূর-দূরান্ত থেকে হাটে পশু বিক্রি করার জন্য যারা আসবেন তারা কীভাবে আসবেন, তাদের থাকার জায়গাগুলো কেমন হবে, রাস্তার হাটগুলো কীভাবে পরিচালিত হবে এসব প্রশ্নেরও উত্তর নেই। শুধু তাই নয়, এক পরিবার থেকে কজন হাটে যেতে পারবেন; যারা বাড়ি বাড়ি গরু পৌঁছে দেন, তারা তা করতে পারবেন কিনা; গরু জবাই করার যেসব সামগ্রী হাটে বিক্রি হয় এবার সেগুলো বসতে দেয়া হবে কিনা সেগুলোও ভাবা হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App