×

জাতীয়

পাপুলের অঢেল সম্পদের তথ্য দুদকের হাতে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২০, ০৯:৪৯ এএম

বাংলাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্যে আলোচিত চরিত্র লক্ষ্মীপুরের এমপি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল। মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গত ৬ জুন কুয়েতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর এই সাংসদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশেও অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে তার শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে স্বাধীন এই সংস্থাটি। অঢেল সম্পদের বৈধ উৎস দেখাতে না পারলে অনুসন্ধান শেষে তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। এরপরই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। জানা গেছে, এমপি পাপুলের পরিবার মূলত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। দেশে তার ব্যবসাও একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর সঙ্গে। সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্যগড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লক্ষ্মীপুর থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। পাপুল নিজে এমপি হওয়ার পর স্বতন্ত্র সাংসদদের কোটায় পাওয়া সংরক্ষিত একটি আসনে তার স্ত্রী সেলিনাকে এমপি করে আনেন। মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগে আদম ব্যবসায়ী পাপুলকে গত ৬ জুন কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সেদেশের পুলিশ। কুয়েতকাণ্ডের পর দেশে তাকে নিয়ে আলোচনার মধ্যে এ বিষয়ে অনুসন্ধানে সংস্থার উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিনকে দায়িত্ব দেয় দুদক। এরপরই পাপুলের স্ত্রী সেলিনা, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দেয় দুদক। চিঠিতে বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে মানি-লন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই তারা যাতে বিদেশ যেতে না পারেন, সেবিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে পাপুল দেশে ফিরলে আর যেন বিদেশে যেতে না পারেন, সেবিষয়েও ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এর আগে গত ৯ জুন অনুসন্ধান কর্মকর্তা সালাহউদ্দিন এই ৪ জনের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টিআইএন নম্বর, আয়কর রিটার্নসহ ব্যক্তিগত সব নথিপত্র তলব করেছিলেন। এছাড়া তাদের বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তথ্য চেয়ে দুদক থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে তাদের কিছু নথিপত্র দুদকে পৌঁছেছে। পাপুল বর্তমানে কুয়েতের কারাগারে আছেন। সে দেশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা তার বিরুদ্ধে মানবপাচার ও বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাচারের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ পায়। এদিকে বাংলাদেশেও পাপুলের সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। রাজধানীর গুলশানে স্ত্রীর নামে ২টি ও কন্যার নামে একটি বিশাল আকৃতির ফ্ল্যাট ছাড়াও গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে বিপুল জায়গা-জমির সন্ধান পেয়েছে দুদক। এছাড়া সিলেট নগরীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা নাইওরপুল মোড়ে পাপুল ও তার স্ত্রীর নামে প্রায় ২৫ কোটি টাকার জায়গা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ২০১২ সালে ওই জায়গা সিলেটের ব্যবসায়ী আতাউল্লাহ সাকেরের কাছ থেকে কিনেছেন পাপুল। আর ব্যাংকে তার বিপুল অর্থ থাকার কথা আগেই প্রকাশিত হয়েছে। এমপি পাপুল কুয়েতের অপরাধ তদন্ত সংস্থার কাছে নিজের অপকর্মের কথা স্বীকার করে কুয়েতে তার সহযোগীদের নাম এবং ঘুষ দেয়ার তথ্যও প্রকাশ করেন। অপরাধ স্বীকারের পর পাপুলের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মারাফি কুয়েতিয়ার অ্যাকাউন্টে থাকা প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করার জন্যও উদ্যোগ নিয়েছে কুয়েত সরকার। পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫-২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন। প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে। ইতোমধ্যে তাকে ওই ব্যাংক থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির দিকে পাপুলের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম। অনুসন্ধানে তখন কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়েছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন থাকায় অনুসন্ধান কাজ কিছুটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন অফিস শুরু হওয়ায় দ্রুত অনুসন্ধান শেষ করার চেষ্টা চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনুসন্ধান শেষে যদি মামলা হয়, তখন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App