×

আন্তর্জাতিক

জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে যুদ্ধপ্রস্তুতি ভারতের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২০, ১০:১৫ এএম

জলে-স্থলে-অন্তরিক্ষে যুদ্ধপ্রস্তুতি ভারতের

সতর্ক অবস্থায় ভারতীয় সেনা। ছবি : ইন্টার্নেট

লাদাখ সংঘাতের ধারাবাহিকতায় চীন-ভারতের মধ্যে তৃতীয় দফা কোর কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠকের পরও সমাধান হয়নি কোনো। গালওয়ান উপত্যকা ও প্যাংগং লেকে ঘটানো সেনা সমাবেশ সরাতে রাজি হয়নি চীন। এদিকে বেজিংয়ের যে কোনো পদক্ষেপের জবাব দিতে স্থল, নৌপথ ও আকাশপথে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ভারতও। এবার প্যাংগং লেকে যাচ্ছে নৌসেনারা। সূত্র : আনন্দবাজার। প্যাংগং লেকে টহলদারির জন্য চীনা সেনাদের রয়েছে ৯২৮বি ভেসেল। তার সঙ্গে সমান তালে টক্কর দিতে স্টিলবোট পাঠানো হচ্ছে। ভারতের ৩ বাহিনী যৌথভাবে এসব বোট পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সি-৭ হেভি লিফটার বোয়িং বিমানের মাধ্যমে বোটগুলো নিয়ে যাওয়া হবে। গালওয়ান উপত্যকা, প্যাংগং লেকসহ ভারত-চীন সীমান্তের সর্বত্রই নয়াদিল্লির অবস্থান হলো আগে থেকে ভারত কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ নেবে না। কিন্তু চীনের দিক থেকে সেজাতীয় কোনো আগ্রাসী পরিস্থিতি তৈরি হলে যাতে সব দিক দিয়ে তার মোকাবিলা করা যায়, সেই প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি রাখা হচ্ছে না। ভারত ও চীনের কোর কমান্ডার পর্যায়ের তৃতীয় বৈঠক গত মঙ্গলবারই অনুষ্ঠিত হয়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ওই আলোচনায় সেনা সমাবেশ সরানো নিয়ে কথাবার্তা হয়। কিন্তু এর বাইরে গালওয়ান উপত্যকা বা প্যাংগং লেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে চীন তার সেনা সরাবে, এমন কোনো প্রতিশ্রুতি বা আশ্বাস মেলেনি বলে জানায় ভারতীয় সেনা সূত্র। বরং বিভিন্ন উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা, রসদ ও অস্ত্রশস্ত্র মজুত বাড়িয়েই চলেছে চীন। তৈরি করছে সেনা ছাউনির মতো নানা কাঠামো। এই পরিস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে সেনা সরিয়ে স্থিতাবস্থায় ফেরানো এবং বেজিংয়ের পক্ষ থেকে কোনো আগ্রাসন শুরু হলে তার উপযুক্ত জবাব দিতে নিজেদের প্রস্তুত রাখার কৌশল নিয়ে হাঁটছে নয়াদিল্লি। এ বিষয়ে দীর্ঘদিন প্যাংগং এলাকায় থাকা ভারতের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল এস ডিন্নি জানান, পাকিস্তানের সঙ্গে কার্গিল যুদ্ধের ফাঁকে প্যাংগংয়ে রাস্তা বানিয়ে ফেলে চীন। ওই যুদ্ধের সময় লাদাখে ভারতীয় সেনার নজরদারি কমেছিল। সেই সুযোগ নিয়ে প্যাংগং লেকের চারটি ফিঙ্গার পয়েন্ট নিজেদের বলে ধরে নেয় বেইজিং। কিন্তু গত কয়েক বছরে ভারত প্যাংগং এলাকায় পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করেছে। ফলে ইচ্ছাকৃতভাবেই বেপরোয়া আগ্রাসন চালাচ্ছে চীন। ভারতের পরিকাঠামো তৈরির ঘটনাটি মেনে নিতে পারছে না চীন। এ কারণেই বাড়ছে বিবাদ, হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি ও প্রাণহানির মতো ঘটনা। টহলদারি করতে গেলেই ভারতীয় সেনাদের বারবার চীনের বাধার মুখে পড়তে হয়। ওই রাস্তা তৈরির পর থেকেই চীন ওই এলাকায় তাদের নিজেদের একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মনে করছে। আবার দুদেশের চুক্তি অনুযায়ী কোনো পক্ষেও সেনারা বাধা দিলে, সেই বাধা এড়িয়ে আগানো যায় না। যদিও সাম্প্রতিক সমস্যা বাড়ার কারণ হিসেবে এস ডিন্নি বলেন, মে মাসের গোড়া থেকে চীন হঠাৎ প্যাংগং এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সেনা সমাবেশ বাড়াতে শুরু করে। ভারত সেখানে যেসব পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ করছে তাকে থামাতেই প্যাংগং লেক এলাকায় চীন বিপুল সেনা সমাবেশ ঘটায়। আগে যেখানে মাসে এক-দুই দিন দুপক্ষের সেনার মধ্যে হাতাহাতি বা বাধাদানের মতো ঘটনা ঘটত, এখন সেটাই কার্যত নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিবাদ সহজে থামার নয় বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। তার মতে, প্যাংগং লেকে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সম্পর্কে দুদেশের সেনাবাহিনীই ওয়াকিবহাল। কিন্তু চীনা বাহিনী যে চুক্তি বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ধার ধারে না, সেটাও তাদের হাবভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে। প্রতিবার গরমের সময় এই রকম ছোটখাটো হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। কারণ সেই সময় দুপক্ষেই সেনা তৎপরতা বাড়ে। তবে শীতকালে এই উচ্চতায় টহলদারি কার্যত অসম্ভব হয়ে ওঠে, তাই তখন গণ্ডগোলও কম হয়। ফলে শীতের মৌসুমের আগে এই বিবাদ থামার নয় বলে মনে করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App