×

জাতীয়

স্বপ্নের ঢাকা ছেড়ে অনিশ্চিত গন্তব্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২০, ১১:০১ পিএম

স্বপ্নের ঢাকা ছেড়ে অনিশ্চিত গন্তব্য

ঢাকা ছাড়ছে অসংখ্য মানুষ। ছবি: সংগ্রহ।

স্বপ্নের ঢাকা ছেড়ে অনিশ্চিত গন্তব্য

স্বপ্নের ঢাকা ছেড়ে আগের গন্তব্যে মানুষ। ছবি: সংগ্রহ।

স্বপ্নের ঢাকা ছেড়ে অনিশ্চিত গন্তব্য

উল্টো গন্তব্যের যাত্রা। ছবি: সংগ্রহ।

স্বপ্নের ঢাকা ছেড়ে অনিশ্চিত গন্তব্য

শহর ছেড়ে বহুদূরে। ছবি: সংগ্রহ।

স্বপ্নের ঢাকা ছেড়ে অনিশ্চিত গন্তব্য

অনিশ্চিত গন্তব্য। ছবি: সংগ্রহ।

কর্মসংস্থান আর খানিকটা ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে যারা গ্রাম ছেড়ে রাজধানীতে এসে একদিন ঠাঁই নিয়েছিলেন, শুরু করেছিলেন হাঁটি হাঁটি পা পা করে স্বপ্নের যাত্রা আজ তারাই একে একে বিদায় জানাচ্ছেন স্বপ্নের ঢাকাকে। চেনা শহর, চেনা পথ, চেনা কর্মসংস্থানের অলিগলি ছেড়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন আগের গন্তব্যে। যে গন্তব্য ধূসর, ধোঁয়াশায় ঢাকা। তবুও অনিশ্চিত এক উল্টোযাত্রায় প্রতিদিন সামিল হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। স্বপ্নের ঢাকা ছেড়ে অনিশ্চিত জীবনের দীর্ঘ গন্তব্যের এসব মানুষকে নিয়ে লিখেছেন ভোরের কাগজ লাইভের রিপোর্টার মেহেদী হাসান।
বেশ কয়েক বছর আগে পরিবার নিয়ে উত্তরের শহর বগুড়া থেকে ঢাকায় এসেছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের উচ্চশিক্ষিত যুবক শাহিন সরদার। বড় স্বপ্ন ছিল- নিজের পায়ে শক্তভাবে দাঁড়াবেন। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। সন্তানদের সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াবেন। বেসরকারি এক প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে একটু একটু করে স্বপ্নের সেই পথেই হাঁটছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তার জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। করোনার থাবায় চারদিকের সবকিছু স্থবির হয়ে গেছে। গেল মার্চ থেকে তার অফিসও বন্ধ। আশায় ছিলেন মাস দুয়েক পরে হয়তো অফিস চালু হবে। কিন্তু না, তার অফিস পড়েছে আর্থিক সংকটে। ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। আর্থিক সংকটের কারণে হাতে গোনা কিছু লোক বাদে সবাইকে চাকরি থেকে না করে দেয়া হয়েছে। মিরপুর ছেড়ে পরিবার নিয়ে ঢাকা ছাড়ার মুহূর্তে কথা হয় শাহিন সরদারের সঙ্গে। ভোরের কাগজ লাইভকে বললেন, এই মুহূর্তে নতুন চাকরি পাওয়ার সুযোগ নেই। তাই সবাইকে নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য স্বপ্নের ঢাকাকে গুডবাই জানিয়ে গ্রামে ফিরতে বাধ্য হচ্ছি। জানি না, গ্রামে গিয়ে কী ব্যবস্থা করবো। কীভাবে চলবো। বলতে পারেন অনিশ্চিত এক গন্তব্যে যাচ্ছি। শাহিন সরদারের মতোই স্বপ্নের ঢাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজধানীর কাফরুলে বসবাস করা ইলিয়াস আহম্মেদ। ধানমন্ডিতে একটি প্রকাশনায় দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করতেন। করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে বন্ধ হয়ে যায় তার কাজ। সেই সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় প্রতিদিনের আয়ের পথও। গেল দুই মাসে কর্মহীন বাসায় বসে থেকে থাকা, খাওয়ার জন্য হাতে সঞ্চিত সব টাকা শেষ। তাই মা আর বোনদের নিয়ে বরিশালে নিজ গ্রামের পথ ধরেছেন। [caption id="attachment_229287" align="aligncenter" width="700"] উল্টো গন্তব্যের যাত্রা। ছবি: সংগ্রহ।[/caption] তবে বাড়ি ছাড়ার সময় ইলিয়াস আহম্মেদ পড়েন আরেক বিপদে। হঠাৎ বাসা ছাড়ার ঘোষণা দেয়ায় বাড়িওয়ালা অতিরিক্ত টাকা দাবি করে বসেন। পুলিশকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করেই স্বপ্নের ঢাকা ছাড়ছেন। বছর কয়েক আগে নীলফামারী ছেড়ে পরিবার নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন রিকশাচালক মিঠু মিয়া। শ্যামলী এলাকায় বাসাভাড়া নিয়ে রিকশা চালিয়ে ভালোই রোজগারপাতি করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করোনাকাল তার সে পথচলায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি ছুটি আর লকডাউনের পর থেকেই বিপদে পড়তে হয়েছে তাকে। আগের মতো আর রিকশার যাত্রী পান না। আয় রোজগারও কমে গেছে। রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তার সিংহভাগই জমা দিতে হয় মালিকের হাতে। বাকি টাকায় সংসার চলে না। হাত পাততে হয় অন্যের কাছে। নিরূপায় হয়ে, পরিবার নিয়ে ঢাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মতিঝিলের একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করেন সজিবুর রহমান। সাধারণ ছুটির পর থেকে বেতন বন্ধ। জুন থেকে অফিস খুললে আবারো কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তবে গত এক মাস ধরে বেতন পাননি। কোনো নিশ্চয়তাও নেই। ইতোমধ্যে তার পরিবারকে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন নিজে আর কতদিন থাকবেন তা বলতে পারছেন না। ভোরের কাগজ লাইভকে জানান, চাকরি আছে বেতন নাই- এমন হলে তো আর চাকরি করতে পারবো না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে গ্রামেই ফিরতে হবে। [caption id="attachment_229288" align="aligncenter" width="1144"] শহর ছেড়ে বহুদূরে। ছবি: সংগ্রহ।[/caption] বগুড়ার শাহিন সরদার, বরিশালের ইলিয়াস, নীলফামারীর মিঠু মিয়া, ময়মনসিংহের সজিবের মতো অসংখ্য মানুষ জীবন আর স্বপ্নের টানেই একদিন এসে ভিড়েছিলেন স্বপ্নের শহর ঢাকায়। একটু একটু করে পায়ে দাঁড়াতেও শুরু করেছিলেন। বাড়তি আয়ের কিছু অংশ গ্রামেও পাঠাতেন কেউ কেউ। শহরে কিংবা গ্রামে পায়ের তলার মাটি শক্ত করার জন্য দিনরাত মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ছুটছিলেন। তবে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারির থাবায় সব স্বপ্ন ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে।
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বন্ধ কিংবা সীমিত হয়ে পড়েছে অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খেটে খাওয়া মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস। প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস গার্মেন্টস শিল্পে চাকরির সুযোগ নেমে এসেছে ৫০ শতাংশের নিচে। বন্ধ হয়ে গেছে বহু গার্মেন্টস। বেকার হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার শ্রমিক। বেসরকারি ফার্ম, প্রতিষ্ঠানও আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাঁটাইয়ের ধুম লেগেছে। বেকার হয়ে পড়ছেন বেসরকারি আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বহু পেশার মানুষ।
[caption id="attachment_229289" align="aligncenter" width="700"] অনিশ্চিত গন্তব্য। ছবি: সংগ্রহ।[/caption] জনজীবনে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ অর্থসংকট। মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তসহ খেটে খাওয়া মানুষের হাতে গচ্ছিত অর্থ গেল কয়েক মাসে শেষ হয়ে গেছে। গ্রামে ফিরেও কী করবেন, পরিবার পরিজন নিয়ে কীভাবে বাঁচবেন- তা নিয়ে নেই নিশ্চয়তা। তারপরও জীবনের টানে যেন অন্ধকারে ছুটে চলা। জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান ভোরের কাগজ লাইভকে বলেন, করোনা সংকট শুধু বাংলাদেশের নয়, এটা বিশ্ব সংকট। দুর্যোগপূর্ণ এই সময়ে সবাইকে আরো ধৈর্য ধরতে হবে। ক্ষতিটাকে সবাই ভাগাভাগি করে নিলে কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে। তার আগে এই যুদ্ধে আমাদের জয়ি হতে হবে। তবে যুদ্ধটা সরকারের একার নয়, সবাইকে সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App