×

শিক্ষা

শতবর্ষের বড় উপহার হবে ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২০, ১২:০৪ পিএম

শতবর্ষের বড় উপহার হবে ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী/ফাইল ছবি।

আজ পহেলা জুলাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। নিরানব্বই বছর পেরিয়ে একশো বছরে পা রেখেছে জাতির বাতিঘরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া দেশের সর্বোচ্চ এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, ডাকসু নির্বাচনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করাই হবে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য শতবর্ষে পদার্পনের বড় একটি উপহার। বুধবার (১ জুলাই) সকালে ভোরের কাগজের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে আলাপকালে মুঠোফোনে তিনি এ কথা বলেন। স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রাখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য- 'শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রসংসদের ভূমিকা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপরিহার্য উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বদানের ক্ষমাতা বিকশিত হবে৷ পরবর্তীতে তারাই দেশের ক্রান্তিকালে ভূমিকা রাখবে। সাংস্কৃতিক ও খেলাধূলাসহ নানা কাজে তারা নেতৃত্ব দিবে। তিনি আরও বলেন, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ২৮ বছর ছাত্রসংসদ ছিল না। তবে এরপর যে ছাত্রসংসদ হয়েছে, তা কার্যকর না হলেও একে "মন্দের ভাল" বলা চলে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়মিত হওয়া এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হবে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একটি বড় উপহার। ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এবারের প্রতবষ্ঠাবর্ষিকী সম্পর্কে ভোরের কাগজকে বলেন, "মুজিববর্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শততম জন্মবার্ষিকীর সাল একই হওয়ায় এবারের দিবসটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এ দিবস নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু, বর্তমানে বিরাজমান মহামারির কারণে শিক্ষার্থীদের নিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে এ দিবসটি পালন করা সম্ভবপর হচ্ছে না। স্বল্প পরিসরেই এবারের আয়োজনটি সাজানো হয়েছে।’ শিক্ষার মান, মানসম্পন্ন গবেষণা ও প্রকাশনার অভাব ও বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিংয়ে তলানিতে স্থান পাওয়ার মতো নানা নেতিবাচক খবরের শিরোনাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে গেস্টরুম ও গণরুম প্রথা। আবাসন সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী একত্রে গাদাগাদি করে থাকে যা গণরুম হিসেবে পরিচত। এর পাশাপাশি অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির ফলে সৃষ্ট গেস্টরুম প্রথা। তাদের মতের বাইরে গেলে শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে হলছাড়া করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাদের কথামত গভীররাতেও প্রোগ্রাম, মিছিল মিটিং করতে হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শততম প্রতবষ্ঠাবার্ষিকীতে তাদের প্রথম দাবিই হচ্ছে আবাসন সংকটের নিরসন। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ভোরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি প্রধান সমস্যার কথা বলেছেন। তার মতে, প্রথম সমস্যা হল, মেধার পরিবর্তে দলীয় আনুগত্যের বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ। এতে করে মেধাবীরা এ পেশায় আসতে পারছেন না। ফলে জ্ঞানের চর্চা হচ্ছে না৷ এর পাশাপাশি অনেকেই উচ্চশিক্ষা নিতে চলে যাচ্ছেন বিদেশে। তারপর তারা আর ফিরে আসেন না। এ মেধা পাচারও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এচাড়াও বর্তমান সমাজব্যবস্থায় জ্ঞানকে তার প্রাপ্য মূল্যও দেয়্ হয় না। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ভর করে গবেষণা ও প্রকাশনার উপর, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিতান্তই কম গুরুত্ব পাচ্ছে। ফলে র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ছে দেশের সেরা এ বিদ্যাপীঠ। উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ অর্থবছরে গবেষণা খাতে বরাদ্দের পরিমান ছিল মাত্র ৫ দশমিক ০৪ শতাংশে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের গুরুত্ব উল্লেখ করে এ ইমেরিটাস অধ্যাপক বলেন, তৃতীয় সমস্যাটি হল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যকরী স্বায়ত্তশাসনের অভাব। দেশ স্বাধীনের এত বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কখনো পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসনের স্বাদ পায় নি। শাষকগোষ্ঠী সবসময়ই বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব হয় নি। দেশের স্কুল কলেজের শিক্ষাব্যস্থার একটা বড় প্রভাব উচ্চশিক্ষায় পড়ছে বলে মনে করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, তিন ধারার শিক্ষার(স্কুল, মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যম) ফলে একটা বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। বর্তমান এ শিক্ষা ব্যবস্থা বৈষম্যমূলক। উচ্চবিত্তের সন্তানরা ইংরেজি মাধ্যমে, এরপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ে বিদেশে চলে যায়। এ বিভাজন উচ্চশিক্ষার জন্য ক্ষতিকর। দেশ স্বাধীনের পর আমরা একমুখী একটি শিক্ষাব্যবস্থা চেয়েছিলাম। শতবর্ষে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও গবেষণা প্রসঙ্গে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভোরের কাগজকে বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব করার জায়গা হচ্ছে তার শিক্ষা এবং গবেষণার ও প্রকাশনার মান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ জায়গায় কিছু সীমাবদ্ধতা আছে যা অস্বীকার করা যায় না। এসকল সংকট ও সীমাবদ্ধতাকে রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তারপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসছে। এ ধারা অব্যহত রাখার পাশাপাশি পরিকল্পনামাফিক কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করে তার পেছনে শ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন এ শিক্ষাবিদ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এত সব সংকট থাকা স্বত্বেও তা উত্তরণে অনেকটাই আশাবাদী বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, শিক্ষার মান, গবেষণা ইত্যাদি বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মান উন্নয়ন, গবেষণা কর্মে বরাদ্দন বৃদ্ধি, র্যাংকিংয়ে অগ্রগতিসহ নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App