×

অর্থনীতি

প্রত্যাশার পুরোটা প্রতিফলন ঘটেনি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২০, ০১:৫৬ পিএম

প্রত্যাশার পুরোটা প্রতিফলন ঘটেনি

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন সদ্য পাস হওয়া জাতীয় বাজেটকে ‘আপাতদৃষ্টিতে ভালো’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, বাজেট নিয়ে প্রত্যাশার প্রতিফলন পুরোটা ঘটেনি। কারণ, কালো টাকা সাদা করার যে ফর্মুলা কার্যকর হওয়ার কথা আমরা মনে করেছিলাম, সেটা করা হয়নি। আমাদের ফর্মুলা ছিল আমরা মনে করি, অপ্রদর্শিত আয় ও কালো টাকা অর্থনীতির মূলধারায় আনতে হলে এখনো সরকার এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারেন। এজন্য প্রথমত, বছরে যে ৬০০-৭০০ কোটি ডলার দেশের বাইরে পাচার হয়ে চলে যায়, এটাকে সর্বশক্তি দিয়ে বন্ধ করতে হবে। তাহলে ওই টাকাটা দেশের ব্যাংকে জমা পড়বে। দ্বিতীয়ত, এভাবে ১০ শতাংশ হারে সুযোগ না দিয়ে বাজেটে যে ইনকাম ট্যাক্সের স্তরগুলো আছে সেই স্তর অনুযায়ী রেটে মূলধারায় আনা। যেমন যদি কেউ চার কোটি টাকা এভাবে মূলধারায় আনতে চান, তাহলে সবচেয়ে উপরের স্তর হবে শতকরা ২৫ শতাংশ দিয়ে মূলধারায় আনা। তৃতীয়ত, সরকার নিশ্চয়তা দেবে, এভাবে অপ্রদর্শিত অর্থ মূলধারায় আনলে কোনো ধরনের প্রশ্ন করা হবে না। এ প্রস্তাব অবশ্য সরকার ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছে। চতুর্থত, আগামী বছরের পহেলা জুলাইয়ের পর যদি কারো কাছে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা পাওয়া যায় তবে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। পঞ্চমত, দেশীয় শিল্প বিকাশে যে শুল্ক কমানোর কথা আছে ওইখানে গুঁড়া দুধের মন্ডে ডিউটি বাড়াতে হবে। ফরাসউদ্দিন বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে ব্যাংকে যে আবগারি শুল্ক, এটা ব্রিটিশদের তৈরি করা ছিল। যেন মানুষ ব্যাংকে টাকা না রাখে। কিন্তু আমরা তো ব্যাংকে টাকা রাখতে চাই। এটাতে সরকার তেমন কোনো লাভবান হয় না। অথচ মানুষের খুব কষ্ট হয়। এ বিষয়ের পরিবর্তন আনতে হবে। সাবেক এই গভর্র্নর বলেন, একটা সুপারিশ আমি গত পাঁচ বছর ধরে করে আসছি। বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন এর একটা অদ্ভুত বিধি আছে। তা হলো, একজন শেয়ারহোল্ডার যদি তার কোম্পানিতে শতকরা ২ ভাগ মূলধনের মালিক না হন তাহলে তিনি ওখানে পরিচালক হতে পারবেন না। এ বিষয়টিতেও পরিবর্তন আনা দরকার। এছাড়া বাজেটের বাকি সব ঠিক আছে। মানুষ বলে বাজেটের আকার বড়। আমি মনে করি, আকার ঠিকই আছে, বরং আরো বাড়ানো উচিত ছিল। বাজেট বাস্তবায়নের দুইটা দিক রয়েছে। এর একটা হলো রাজস্ব আদায়, অপরটি বাড়তি ব্যয় কমানো। চলতি বছরে ঘাটতি মিটিয়ে আগামী বছরের আরো এক লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা যাবে তা আমার মনে হয় না। যদি না বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। অর্থমন্ত্রী অবশ্য গতকাল সংসদকে বলেছেন, এখন যে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও শতকরা ১০ ভাগের কম আছে, এটাকে তিনি আগামী অর্থবছরে ১৪ ভাগে উন্নীত করবেন। এর চেয়ে ভালো খবর আর কিছু হতে পারে না। এটা করতে পারলে বাজেট বাস্তবায়নে অনেক সুফল পাওয়া যাবে। অন্য একটি দিক হচ্ছে, অতিরিক্ত খরচ কমাতে হবে। আরেকটি হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা বলয়। ওইখানে সংশোধিত বাজেটে ছিল একাশি হাজার কোটি টাকা। আর আগামী বছরের বাজেটে বাড়িয়ে রাখা হয়েছে ৯৫ হাজার কোটি টাকা। আমি মনে করি, এই খাতে যেহেতু লোকজন আরো বেড়েছে। কোভিড-১৯ এর কারণে প্রবাসীরা চলে এসেছে, পোশাক খাতে কর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে। তাই এটা অন্তত সোয়া লাখ কোটি টাকায় উন্নীত করা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App