×

স্বাস্থ্য

কোভিড-১৯: ভিটামিন ‘ডি’ হতে পারে প্রতিরোধের হাতিয়ার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২০, ০৫:৩৬ পিএম

কোভিড-১৯: ভিটামিন ‘ডি’ হতে পারে প্রতিরোধের হাতিয়ার

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার

ভিটামিন ‘ডি’ সৌরলোকের ভিটামিন নামে পরিচিত। কারণ এটা সূর্যের আলো থেকে আমরা পাই। ক্যালসিয়ামের মাধ্যমে শরীরের হাড় গঠন ও মজবুত শরীর গঠনে এর ভূমিকার কথা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু ২০০০ সালের শুরুর দিকে শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ এর অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে এবং এখনো গবেষণা চলছে। এরকমই কিছু গবেষণার ফলাফল তুলে ধরার চেষ্টা করছি আজকের লেখায়। যা কিনা আমাদের কোভিড-১৯ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এখানে যে বিষয়গুলো তুলে ধরব তা সবই আন্তর্জাতিক গবেষণার ফলাফল।

বর্তমান সময়ে কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা এখনো স্বীকৃত হয়নি। বরং কিছু চিকিৎসা যা আগে কার্যকর বলে ধরা হতো তা পরবর্তীতে ক্ষতিকর বলে দেখা গেছে। এমতাবস্থায় এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগতে পারে। বেশ কিছু ভিটামিন ও Trace elements আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। যা আমাদের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূরক ভিটামিন ‘ডি’ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও Respiratory infection বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। আর কোভিডের ক্ষেত্রে শ্বাসতন্ত্রই মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভিটামিন ‘ডি’ কীভাবে কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করতে পারে আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে শ্বাসতন্ত্রের কোষের ওপর ভিটামিন ‘ডি’ এর প্রভাব রয়েছে যা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন রোধে ভূমিকা রাখে। যে কোনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া আমাদের শরীরে ঢুকলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধের অন্যতম উপাদান ম্যক্রোফেজ যাকে আমরা পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে তুলনা করতে পারি, তারা সক্রিয় হয়ে উঠে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে ভিটামিন ‘ডি’ এই ম্যাক্রোফেজকে আরো সক্রিয় করে দেয় যাতে করে তারা দ্রুত রেসপন্স করে। ভিটামিন ‘ডি’ ম্যাক্রোফেজের পরিপূর্ণ গঠনেও সাহায্য করে ভিটামিন ‘ডি’।

ভিটামিন ‘ডি’ আমাদের শরীরে ক্যাথেলিসিডিন নামক একটি প্রোটিনের সংখ্যা বৃদ্ধি করে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং আমাদের শ্বাসতন্ত্রকে যক্ষ্মার জীবাণু, বিভিন্ন গ্রাম পজিটিভ , গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও এ জাতীয় অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যা পরবর্তীতে এজমার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যদি সম্পূরকভাবে ভিটামিন ‘ডি’ দেয়া হয়, তাহলে Acute Respiratory tract infection বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের হার কমিয়ে দেয়।

বয়স্কদের ওপর ভিটামিন ‘ডি’ এর প্রভাব বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ‘ডি’ বয়স্কদের মৃত্যুহার কমিয়ে দেয় যারা সাধারণত কোভিড-১৯ সহ বিভিন্ন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন। তবে এটা মনে রাখতে হবে এরকম কোনো প্রমাণিত তথ্য নেই যে ভিটামিন ‘ডি’ আপনাকে কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে আপনার যে কোনো ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে এবং আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যা বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত।

শিশুদের ওপর ভিটামিন ‘ডি’র প্রভাব বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে দুগ্ধপোষ্য শিশু থেকে বাড়ন্ত শিশু সকল পর্যায়ে ভিটামিন ‘ডি’ এর ঘাটতি রয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল শিশু মায়ের দুধ খায় তাদের ভিটামিন ‘ডি’ এর দৈনিক চাহিদা ৪০০ আন্তর্জাতিক ইউনিট (আইইউ)। কিন্তু তারা যে পরিমাণ মায়ের দুধ খায় তাতে তাদের ঘাটতি থেকে যায়। এসব শিশুর ভিটামিন ‘ডি’ এর চাহিদা পূরণের জন্য ছয় মাস পর ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ ফরমুলা দুধ দেয়ার কথাও বলেছে গবেষণাটি। এছাড়া বাড়ন্ত শিশুর দৈনিক চাহিদা ৬০০ আইইউ যা পূরণ করতে হলে তাদের দৈনিক ১০০০ মিলি দুধ খেতে হবে। এ কারণে তাদেরও ঘাটতি রয়ে যায়। এ কারণে গবেষণা বলছে তাদেরও ভিটামিন ‘ডি’ সম্পূরক ডোজ দরকার রয়েছে।

গর্ভবতী মহিলাদের ভিটামিন ‘ডি’ এর প্রভাব গর্ভবতী মায়েদের ওপর ভিটামিন ‘ডি’ এর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এ কারণে তাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন তারা। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন ‘ডি’ দরকার। এছাড়া এদের প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম দরকার। আর ক্যালসিয়াম শরীরে প্রবেশের জন্য ভিটামিন ‘ডি’ এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল গর্ভবতী মায়েরা ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবে থাকেন তাদের সন্তানদের জন্মের পর শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার স্যামন ফিস, টুনা ফিস, দুধ, ডিম, চিজ, কমলার জুস, ইয়োগারট ইত্যাদি।

কী পরিমাণ ভিটামিন ‘ডি’ দরকার প্রতিদিন কী পরিমাণ ভিটামিন ‘ডি’ দরকার সেটা নির্ভর করে রক্তে কী পরিমাণ ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে। তবে আমাদের স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি ১০০০ থেকে ৪০০০ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ সম্পূরকভাবে দৈনিক খাওয়ার কথা গবেষণায় প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যাদের রক্তে ভিটামিন ‘ডি’ এর ঘাটতি রয়েছে, তাদের আগে ঘাটতি পূরণ করা জরুরি। সেক্ষেত্রে আমরা ২০০০০ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ সপ্তাহে একটি করে অথবা নিয়োমিতভাবে ১০০০ থেকে ৪০০০ আইইউ ভিটামিন ‘ডি’ খেতে পারি।

বাজারে একাধিক কম্পানির ভিটামিন ‘ডি’ রয়েছে। এগুলো ক্যাপসুল হিসেবে পাওয়া যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এগুলো মাত্রা ঠিক করে খাওয়া যেতে পারে। এর সঙ্গে অনেক সময় ক্যালসিয়ামও অনেক সময় দরকার হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এগুলো সেবন করা সঠিক হবে না। যার যেটা দরকার সে অনুযায়ী চিকিৎসক নির্ধারণ করে দেবেন।

পরিশেষে বলতে চাই, কোভিড-১৯ থেকে রক্ষার কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো ঔষধ নাই। সেক্ষেত্রে আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলাই এতে আক্রান্ত হওয়ার আগে এর থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র হাতিয়ার। আর এজন্য আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ বাড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাড়াতে ভিটামিন ‘ডি’ কে আমরা বেছে নিতে পারি যার বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল তুলে ধরলাম। সবাই সুস্থ্য থাকুন, ভালো থাকুন- এই প্রত্যাশায়।

লেখক: কনসালটেন্ট কুরমিটোলা জেনারেল হাসপাতাল

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App