কোভিড-১৯: ভিটামিন ‘ডি’ হতে পারে প্রতিরোধের হাতিয়ার

আগের সংবাদ

করোনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা নরওয়ে রাষ্ট্রদূতের

পরের সংবাদ

জন্মনিবন্ধনে ভুল, সংশোধন না করতে পেরে আত্মহত্যা

প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০২০ , ৫:৪২ অপরাহ্ণ আপডেট: জুলাই ১, ২০২০ , ৭:৫২ অপরাহ্ণ

জন্মনিবন্ধনে বয়স ভুল, ঠিক করতে তিনদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের দৌঁড়ঝাঁপ করেও বিষয়টিরও সুরাহা না করতে পেরে অবশেষে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন স্কুল শিক্ষার্থী দুর্জয় দাশ। সে কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবার নাম মিলন দাশ। ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার (২৯ জুন) রাতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের কৈনপুরা জলদাশপাড়ায়। এ মৃত্যুর জন্য দায়ী কে প্রশ্ন তুলেন নিহতের স্বজনরা।

বিদ্যালয়ে জেএসসি পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশনের কার্যক্রম চললেও করোনা পরিস্থিতির কারণে বিষয়টা জানতো না স্কুল ছাত্র। জেনেছে অনেক পরে। যখন জেনেছে তখন তার হাতে সময় ছিল মাত্র ৪ দিন। কিন্তু রেজিষ্ট্রেশন করতে গিয়ে জানতে পারে, জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী, তার বয়স তিন বছর বেশি। ফলে তার রেজিষ্ট্রেশন হবে না। এটা শোনার পর সে বিভিন্ন দপ্তরে ঘোরাঘুরি করতে থাকে।

প্রথমে চাতরী ইউনিয়নের তথ্য সেবাকেন্দ্রে গেলে সেখান থেকে তাকে বলা হয় স্কুল থেকে একটা প্রত্যয়নপত্র নিয়ে আসতে। দ্রুত টাকা নিয়ে প্রত্যয়নপত্রের জন্য ছুঁটে যায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে। প্রধান শিক্ষক ২০০ টাকার বিনিময়ে তাকে প্রত্যয়নপত্র দেন। প্রত্যয়নপত্রটি নিয়ে সে ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্রে গেলে তারা সাফ জানিয়ে দেয় এটি নতুন করে সংশোধন হবে না।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ভারপ্রাপ্ত) সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাদের ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্র থেকে জন্মনিবন্ধন সংশোধন করে আনতে বলেন। এদিকে স্কুল থেকে জানানো হয় ৩০ জুনের পর রেজিষ্ট্রেশন আর হবে না। জেএসসির রেজিষ্ট্রেশন করতে না পেরে ক্ষোভে আর অভিমানে অবশেষে আত্মহত্যা করে বলে জানায় দুর্জয়ের ছোট বোন পুষ্প দাশ। তিনি বলেন, বিকেলে আমি ভাইয়াকে খুঁজতে গিয়ে ঘরের সঙ্গে রশিতে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখি। সঙ্গে সঙ্গে আমি দা দিয়ে রশি কেটে ভাইয়াকে কাটে শোয়াই।

দুর্জয় দাশের পিতা মিলন দাশ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছোট ছেলেটা স্কুলসহ বিভিন্ন অফিসে গিয়েও সোমবার (২৯ জুন) বিকালে আমাকে জানাল সংশোধন করতে পারেনি এবং স্কুল থেকে বলেছে জেএসসি পরীক্ষাও দিতে পারবে না। কিছুক্ষণ পর শুনলাম ছেলে আত্মহত্যা করেছে। সে এতো হয়রানি থেকে বাঁচতে কোনো উপার না পেয়ে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। আমি সুষ্ঠ বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

চাতরী ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের উদ্যোক্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে তার কাগজপত্র দেখে জন্মনিবন্ধনটি ঠিক করে দিতে বলেন। এখন দেখি যেটা আছে সেটা নাকি হবে না। আমি তাকে স্কুল থেকে জন্ম তারিখটা লিখে একটি প্রত্যায়নপত্র নিয়ে আসলে জন্মনিবন্ধন সংশোধন করা যাবে, বলছিলাম।

কৈনপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু চন্দ্র দেবনাথ বলেন, বয়সের ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালা আছে। ওই শিক্ষার্থীর বয়স জন্মনিবন্ধন ও পিএসসি সনদে বেশি হওয়ায় তাকে তা সংশোধন করে আনতে বলেছি। বেশি বয়সে কেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করালেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তখন আমরা এটা খেয়াল করিনি।

আনোয়ারা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম বলেন, স্কুল শিক্ষার্থী আত্মহত্যার ঘটনাটি আমি শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। এখানে যদি আমাদের কোন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল মাহমুদ বলেন, কৈনপুরা এলাকায় স্কুলছাত্র আত্মহত্যার বিষয়টি শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে থানা কোনো অভিযোগ করা হয়নি।

এসআর

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়