×

সারাদেশ

সব নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপরে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২০, ১০:৪৩ এএম

সব নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপরে

যমুনা নদীর পানি বেড়ে জামালপুরে বন্যার আরো অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে মানুষ। গতকাল জেলার ইসলামপুরের চিনাডুলী ডেবরাইপ্যাচ এলাকার দৃশ্য - ভোরের কাগজ

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা, জামালপুর ও বগুড়ায় যমুনা এবং টাঙ্গাইলে যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীতে পানি আরো বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ছে রাজশাহীর পদ্মায়ও। এদিকে সামান্য কমলেও লালমনিরহাটে তিস্তা এবং সুনামগঞ্জে সুরমার পানি এখনো প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ওপর দিয়ে। সব মিলিয়ে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এসব এলাকায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বানভাসি মানুষরা। অন্যদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। বাড়িঘর,ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস হচ্ছেন নদীতীরের বাসিন্দারা। বন্যা কবলিত এলাকার দুর্গতদের জন্য সরকারিভাবে নগদ অর্থ ও ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্দের কথা জানানো হয়েছে সব জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। নিচে এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন রিপোর্ট-
গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি শহর পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো মারাত্মক অবনতি হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ৪৯ হাজার মানুষ। এছাড়া পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙনও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙনকবলিত ও পানিবন্দি লোকজন তাদের বাড়িঘর ছেড়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, গবাদিপশু ও আসবাবপত্র নিয়ে নৌকায় করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ফুলছড়ি ইউনিয়নের জামিরা ও নামাপাড়া গ্রামের ৫৭টি, এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের জিগাবাড়ী, আলগারচর, ভাটিয়াপাড়া, পূর্ব হরিচণ্ডী, পাগলারচর, তিনথোপা গ্রামে নদীভাঙনের শিকার হয়ে ৮৫টি পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছে। অন্যদিকে আকস্মিক বন্যায় বালাসী ঘাটের দক্ষিণ পাশে ফুলছড়ি উপজেলার রসুলপুর ও কাইয়ারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও গাইবান্ধা শহর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তবে বাঁধ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন সোমবার জেলার বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে। বাঁধগুলো যাতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে বহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও ঘাঘট শহর রক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে গ্রাম পুলিশসহ স্বেচ্ছাসেবীদের সার্বক্ষণিক তদারকিতে নিয়োগ করা হয়েছে। জামালপুর : জামালপুরে ক্রমাগত বাড়ছে যমুনার পানি। এতে নদীসংলগ্ন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে ২ শিশু। বন্যাকবলিত ইসলামপুর উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন মানুষ। এদিকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। এছাড়াও পৌর এলাকা, চিকাজানি, চুকাইবাড়ী, ডাংধরা ও বাহাদুরাবাদ, সরিষাবাড়ীর পিংনা, পোগলদীঘা, আওনা, কামারাবাদ ও সাতপোয়া ও বকশীগঞ্জে মেরুরচর ও সাধুরপাড়া ইউনিয়নসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় নিম্নাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানিয়েছেন, জেলার নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরে ৩৫০ টন চাল, নগদ ৭ লাখ টাকা ও ২ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জেলার ৪৬১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য। বন্যাকবলিত এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা-নেয়ার জন্য ইঞ্জিনচালিত ১২টি নৌকা রাখা হয়েছে। অপরদিকে জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুড়ীর মির্জাপুরে রবিবার সন্ধ্যায় বন্যার পানিতে ডুবে সোহান নামে ৭ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়। এছাড়াও সোমবার দুপুরে মেলান্দহ উপজেলার দুরমুঠ ইউনিয়নের রোকনাই গ্রামে সানি নামে ১০ বছর বয়সী এক শিশু বন্যার পানিতে ভেসে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তার মরদেহ উদ্ধার করে। চারঘাট (রাজশাহী) : পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চারঘাট উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। উজান থেকে বেয়ে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে পদ্মা নদীর পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পদ্মা তীরবর্তী চারঘাট উপজেলার গোপালপুর, পিরোজপুর, রাওথা, চন্দনশহর, ইউসুফপুর, টাঙ্গনসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভাঙন আতঙ্কে রাতে ঘুমাতে পারেন না। নদীভাঙনের কবলে পড়ে নদী তীরবর্তী এলাকার অনেক মানুষ বাড়িঘর, সহায়-সম্বল এমনকি ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ইউসুফপুর ইউনিয়নের টাঙ্গন ও রাওথা গ্রামের নদীতীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। নদীর বাঁধ নির্মাণ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা বলেন, আমি ইতোমধ্যে টাঙ্গন ও রাওথায় পদ্মা নদীতীরবর্তী এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে তিস্তার পানি। আর এতেই দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ ও তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে জেলার ৫ উপজেলার নদী তীরবর্তী ১৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ৮০০ হেক্টর পাট, ভুট্টা ও চীনা বাদামের জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, তিস্তার পানি সোমবার সকাল থেকে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় নদীর পানি ঢুকে পড়েছে। ওই সব এলাকার অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে। এতে লোকজন নিরাপদ পানি এবং খাদ্য সংকটে পড়েছেন। এদিকে হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, সিঙ্গামারী, সিন্দুর্না,পাটিকাপাড়া ও ফকিরপাড়া ইউনিয়নের তিস্তা ও সানিয়াজানে নদীভাঙনে প্রায় ২০০ ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় ৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা ও ৮০ টন জিআরের চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ডিমলা (নীলফামারী) : নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সোমবার তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদীর অভ্যন্তরে চরাঞ্চলে বন্যার পানি বয়ে যাওয়ায় ঘরবাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মেজবাহুর রহমান মানিক বলেন, উপজেলার বন্যাকবলিত ৬টি ইউনিয়নে তিস্তার বন্যায় দুর্গতদের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় পানিবন্দি ৩ হাজার ২২০টি পরিবারের জন্য ৪৮.৬৭৫ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনো বিপদসীমার ৩৮ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে জেলার বিশ^ম্ভরপুর, তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায়। রবিবার বিকালে পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ সড়কের ১০০ মিটার ভেঙে গেছে। ফলে এই সড়কটি একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার প্রায় ৬৫ হাজার পরিবার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় আছে ৬ লক্ষাধিক মানুষ। পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসাবাড়িতে পানি কমতে শুরু করেছে। জেলায় এখন পর্যন্ত ১২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যাকবলিতদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪১০ টন চাল ও নগদ ৩০ লাখ টাকা বিভিন্ন উপজেলায় দেয়া হয়েছে। পূর্বধলা (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের কালিকাবর বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় ভুগছেন স্থানীয়রা। গত কয়েক দিনে নেত্রকোনা জেলার প্রধান প্রধান নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলার ঠাকুরকোনা কলমাকান্দা সড়কের বাহাদুরকান্দা এলাকায় প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলার দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, বারহাট্টা উপজেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলের সব কয়েকটি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে যমুনা, ঝিনাই ও ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার সকাল ৯টায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি ৪৩ সেন্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর পানি ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। টাঙ্গাইলে সব নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, গোপালপুর ও নাগরপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া, হুগড়া, কাতুলী, মামুদনগর, ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা, অর্জুনা, গোবিন্দাসী, নিকরাইল, কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর, গোহালিয়াবাড়ী, সল্লা, দশকিয়া, গোপালপুর উপজেলার হেমনগর, নগদাশিমলা, ঝাউয়াইল ও নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ, ভাড়রা, মোকনা, পাকুটিয়া ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রাম সম্পূর্ণ ও শতাধিক গ্রাম আংশিক প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত ও চরাঞ্চলের মানুষ তাদের বাড়িঘর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় ৩০ হাজার পরিবার ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে ধরলার পানি বিপদসীমার ৭৬ ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া দুধকোমর নদীর পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি প্রায় দেড় লাখ মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম পানি বৃদ্ধির তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, তিস্তার ভাঙনে উলিপুরের নাগরাকুড়া টি বাঁধের বøক পিচিংসহ ৫০ মিটার অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে সারডোব, নুনখাওয়া ও মোঘলবাসা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ ১৫টি স্পটে। পানির চাপে বাঁধ ভেঙে রৌমারী উপজেলা শহর প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় প্রায় ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হুহু করে বাড়তে থাকায় এ দুটি নদীর অববাহিকায় ৫০ গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। সাড়ে ৩০০ চর ও নদীসংলগ্ন প্রায় সাড়ে ৩০০ গ্রামের দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যা ও ভাঙনকবলিতদের সরিয়ে আনতে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া বন্যা ও ভাঙনকবলিত ৯ উপজেলায় ৩০২ টন চাল ও ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। শিগগির ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে। বগুড়া : বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে দেখা দিয়েছে আগাম বন্যা। ডুবতে শুরু করেছে ফসলি জমি। এরই মধ্যে বসতঘরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে বন্যার পানি। সোমবর সন্ধ্যা ৬টায় পানি ৩৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ইতোমধ্যে ধুনট উপজেলার বৈশাখী চরের মানুষের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। তারা তাদের আসবাবপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া শুরু করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি হাট, শেরপুর, কাজলা, বোহাইল ও ধুনট উপজেলার ভাণ্ডাবাড়ী ইউনিয়নের বেশ কিছু চরে পানি প্রবেশ করেছে। ওই সব এলাকায় ডুবে গেছে পাট, আউশ ধান, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলি জমি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App