×

অর্থনীতি

বড় পরিবর্তন ছাড়াই আজ পাস হবে নতুন বাজেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২০, ০৯:৪০ এএম

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) দুর্যোগে টিকে থাকা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশাকে সামনে রেখে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাস হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। এর আগে গতকাল সোমবার ছোটখাট কিছু সংশোধনীর মধ্যদিয়ে জাতীয় সংসদে অর্থবিল ২০২০ পাস হয়। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের শর্তও শিথিল করা হয়েছে। নতুন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এছাড়া কর কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ানো হলে করদাতাদের হয়রানি বাড়তে পারে এ আশঙ্কায় তাদের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাবও প্রত্যাহার করা হচ্ছে। দেশের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম বাজেট অধিবেশন মাত্র ৮ কার্যদিবসে শেষ হচ্ছে। গত ১০ জুন শুরু হওয়া অধিবেশন এ পর্যন্ত ৬ কার্যদিবস বসেছে। এরপর একদিন সমাপনী হবে। অর্থাৎ অতীতে বাজেট অধিবেশন দীর্ঘ হলেও করোনার কারণে এবার হয়েছে সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন।

জানা গেছে, ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামে গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। যা আজ কণ্ঠভোটে পাস হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা সত্ত্বেও একের পর এক সাংসদ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে যাতে কেউ করোনা আক্রান্ত না হন, সে জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। অধিবেশনে যোগ দেবেন এমন সাংসদদের করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করানো হয়েছে। বাজেট পাস হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

গতকাল পাস হওয়া অর্থবিলে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ৩ বছর বাজারে রাখার শর্ত কমিয়ে ১ বছর করা হয়েছে। এর সঙ্গে ছোটখাট কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে। বিল পাসের আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদকে বলেন, এবারের বাজেট বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে দেশের সব মানুষ; যারা আমাদের প্রাণশক্তি। আর সবার সহযোগিতা নিয়ে আমরা প্রমাণ করব, এত বড় বাজেটও বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। গতকালের অধিবেশনে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, বিরোধীদলীয় উপনেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অর্থবিলের বাজেটের ওপর আলোচনার সমাপনী টেনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে আগামী অর্থবছরে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ মোকাবিলায়  অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকার একটি থোক বরাদ্দ রয়েছে। বাজেট প্রণয়নের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী আমাদের শিকড়ের সন্ধানে গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমাদের শিকড় হলো কৃষি। আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি। এ জন্য কৃষি খাতকেও বাজেটে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বস, এই কৃষিই হতে পারে আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার এক মৌলিক খাত।

অর্থমন্ত্রী বলেন, কোভিডের কারণে যারা কাজ হারিয়েছে-প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ কৃষক-শ্রমিক, কামার-কুমার, জেলে-তাঁতী, স্বাস্থ্যকর্মী, ভ্যানচালক, রিকশাচালকসহ সব পেশার মানুষ। পান দোকান, মুদি দোকান থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র কুটির এবং ছোট-বড় সব ব্যবসায়ী, সব শ্রেণির, নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ যারা কষ্টে আছেন তাদের সবার জন্যই এবারের বাজেট। এ দেশের কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে এ বাজেট থেকে বাদ দিতে পারিনি বলেই বাজেটের আকার বড় হয়েছে। তিনি বলেন, সত্য বড় কঠিন। সব জেনেশুনে আমরা কঠিনকে ভালোবেসেছি। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এবারের বাজেটটি বাস্তবায়নযোগ্য নয়। কিন্তু আমরা এই বাজেট বাস্তবায়নের ব্যাপারে আশাবাদী। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি তথ্য তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিগত ৫ বছরের প্রত্যেকটি বাজেটে আমরা যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম তার চাইতে প্রকৃত অর্জন অনেক বেশি ছিল। বিগত ১০ বছরে জিডিপিতে আমাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৮৮ শতাংশ। যা বিশে^ সবার ওপরে। আমাদের কাছাকাছি ছিল চায়না (চীন) ১৭৭ শতাংশ নিয়ে। আর ভারত ছিল ১১৭ শতাংশে। গত ১১ বছরে আমাদের জিডিপির আকার বেড়েছে তিনগুণ।

তিনি বলেন, আমাদের দেশটি একটি বৈচিত্র্যময় দেশ। আমরা আমাদের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিগুলো এখনো সম্পূর্ণভাবে এক্সপান্ড করতে পারি নাই। আমরা কৃষির কথা বলেছি, শিল্পের কথা বলেছি, আমাদের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড (জনমিতিক লভ্যাংশ) বলেছি। কিন্তু কোনোটাই আমরা পূর্ণমাত্রায় অর্জন করতে পারি নাই’। তিনি বলেন, বারবার একটিমাত্র কথা উঠে আসে যে, আমাদের রেভিনিউ টু জিডিপির অনুপাত একদম কম, অনেক কম ১০ ভাগেরও নিচে। আমাদের মতো দেশ কারোরই ১৮ পার্সেন্টের নিচে না। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এই ১০ ভাগ থেকে যদি ১৪ ভাগে উঠতে পারি, তাহলে বছরে আমরা অর্জন করতে পারি আরো ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এ জন্য দরকার অটোমেশন।

বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শেষ হওয়ার পর শুরু হয় অর্থবিল ২০২০ পাসের আইন প্রণয়ন কার্যক্রম। এ কার্যক্রমের শুরুতেই বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যদের জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলের ওপর সরকার ও জাতীয় পার্টির সদস্যরা বেশ কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব আনেন। এর মধ্যে কিছু প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী গ্রহণ করেন, বাকিগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App