×

রাজধানী

২০ কোটি টাকা খাবারের বিল অস্বীকার 

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২০, ০৬:৪০ পিএম

২০ কোটি টাকা খাবারের বিল অস্বীকার 

চলছে উদ্ধার কাজ। ছবি: ভোরের কাগজ।

২০ কোটি টাকা খাবারের বিল অস্বীকার 

হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে এম নাসির উদ্দিন।

ঢাকা মেডিকেলে ১ মাসে চিকিৎসকদের খাবারের বিল ২০ কোটি টাকা এই অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে এম নাসির উদ্দিন। হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্টদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই এই বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি তার। তবে দাবির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বিলের ডকুমেন্ট চাইলে তিনি তা দিতে নারাজ হয়ে জানান, সব আয় ব্যায়ের হিসাব মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ জুন) দুপুরে হাসপাতালে তার কার্যালয়ে সংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে হাসপাতাল পরিচালক এসব কথা বলেন।

হাসপাতাল পরিচালক বলেন,  মিডিয়াতে দেখছি আমরা এক মাসে খাবারের বিল ২০ কোটি টাকা ব্যয় করেছি এমন একটি তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এটি যে কত বড় মিথ্যা কথা, এটি বলার মধ্য দিয়ে এ হাসপাতাল ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট যারা কাজ করে আসছি আমরা সবাই অত্যন্ত অপমান বোধ করছি এবং দুঃখ পেয়েছি। আমরা যেখানে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য আমাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছি, এখন আমরা কোথায় আছি, কি খাচ্ছি সেটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আমরা অতিরিক্ত ব্যয় করেছি কিনা সেটি দেখার জন্য আমাদের অথরিটি রয়েছে, মন্ত্রণালয় রয়েছে। এই অথোরিটির নির্দেশনার বাইরে আমরা কোনো কাজ করতে পারিনা এবং আমরা কোনো কাজ করিওনি। অতিরিক্ত যদি আমরা কিছু ব্যয় করে থাকি সেটি মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তর তদন্ত করে দেখবে।

তিনি বলেন, এই অপপ্রচার করে প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান সম্পৃক্ত সকলকে অপদস্ত করা হয়েছে। আমি আজ মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দিচ্ছি, দুদিন পর হয়তো তদন্ত কমিটির সামনে আমাকে বক্তব্য দিতে হবে। এখানে ভ্রান্ত কিছুই করা হয়নি আমি কনফিডেন্ট। সে ক্ষেত্রে যারা এ বক্তব্য দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা আমার জানার অধিকার রয়েছে। এবং যিনি বক্তব্য দিয়েছেন তাকে মিডিয়ার সামনে এনে বক্তব্য দিতে হবে তিনি এই তথ্য কোথা থেকে পেয়েছেন এবং কিভাবে পেয়েছেন। এই বক্তব্য দিয়ে সমাজে আমাদেরকর হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে, আমাদের সব কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। সেজন্য আমি বিচার চাই।

নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা কিভাবে কাজ করছি কিভাবে ব্যায় করছি, আমাদের কাজের প্রক্রিয়া কি, কতজন কর্মরত ছিল, এটি আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতনদের কাছে লিখিত দিয়েছি। নিশ্চয়ই তারা সেটি দেখবেন।

তিনি বলেন, ২ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে করোনা রোগীদের চিকিৎসা শুরু হয়। এরপর ১৬ মে শুরু হাসপাতালের নতুন ভবনে করোনা রোগীদের ভর্তি। এখনো ৭শ এর মতো করোনা রোগী প্রতিদিন ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের জন্য ডাক্তার নার্স স্টাফ টেকনিশিয়ান আনসার কাজ করছেন। ডাক্তার এবং নার্স ৭ দিন ডিউটি করছে এবং ১৪দিন হোমকোয়ারেন্টাইন পালন করছে। আর হোম রেস্ট করছে। কর্মচারী ও আনসার সদস্য কম থাকায় তারা ১৫ দিন ডিউটি করছেন ও ১৫ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন।

তিনি আরো বলেন, সোমবারও ১৯শর মত ম্যানপাওয়ার ৩ ব্যাচে হোটেলে আছে। এইসব ম্যানপাওয়ার এর জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩০টি হোটেল রাখা হয়েছে। এই হোটেল দেখাশোনার জন্য একটি কমিটিও আছে। হোটেল নির্বাচনের সময় নিরাপত্তা বাহিনী সেটি যাচাই-বাছাই করেছে, প্রাইজ নির্ধারন করেছে ও প্রাইজটি কমিটি নিশ্চিত করেছে। তাদের প্রতিজনের খাবারের জন্য সকাল, দুপুর ও রাত ৫শ টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৮৮ জন ইতিমধ্যে ৮ সপ্তাহ ডিউটি করেছে, হোটেলে থেকেছে ও যাতায়াত করেছে। এদের যাতায়াতের জন্য ১৩ টি মাইক্রোবাস, ১মিনিবাস ও ২টি বাস রয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন, ইতোমধ্যে ২৫০ নার্স, দেড়শত ডাক্তার ও একশোর মতো কর্মচারী ও আনসার সদস্য ডিউটি করতে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে আবার সুস্থ্য হয়ে কাজে ফিরেছেন।

তিনি বলেন, ২ মে থেকে এ পর্যন্ত আমাদের ৩৬৮৮ জন ম্যানপাওয়ার ডিউটি করেছে। তারা হোটেলে থেকেছে, খেয়েছে এবং হাসপাতালে যাতায়াত করেছে। এই হিসাবটি আমরা আনুমানিক হিসেবে উপস্থাপন করেছি সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেখে পরে অর্থমন্ত্রণালয় উপস্থাপনা করেছেন। এরপর অর্থমন্ত্রণালয় সেটি অনুমোদন দিয়েছেন।

পরিচালক পরিসংখ্যান দেখান, হাসপাতালের নতুন ভবন ও পুরাতন বার্ন ইউনিটে করোনা ইউনিট করার পর থেকে ৩সপ্তাহে মোট ডাক্তার লেগেছে ৫১০ জন, নার্স ৬৩৬ জন, কর্মচারী ৪৫৬ জন, টেকনিশিয়ান ৭৬ জন, সিকিউরিটি ২১৬ জন। মোট তিন সপ্তাহের জন্য ১৮৯৪জন লেগেছে। এবং রেস্টে ছিল ৩৮২ জন। অর্থাৎ এক মাসে লেগেছে ২২৭৬ জন ম্যানপাওয়ার। তাহলে দুই মাস লেগেছে ৪৫৫২ জন ম্যানপাওয়ার। এখন এই আমাদের বরাদ্দ হওয়া ২০ কোটি টাকাকে দুই মাসে এই এতো ম্যানপাওয়ার এর সাথে ভাগ করলে বোঝা যাবে কেমন খরচ করা হয়েছে।

এই পরিসংখ্যান ও খাবার বাবদ বিলের ডকুমেন্ট দেখতে চাইলে তিনি "এখন এগুলো দেওয়া যাবে না, পরে দেখা যাবে" বলে জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App