×

অর্থনীতি

বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসা বাড়াতে সমঝোতা স্বাক্ষর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২০, ০৯:২৫ পিএম

বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসা বাড়াতে সমঝোতা স্বাক্ষর

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকর সম্মেলন। ছবি: ভোরের কাগজ।

চলমান মহামারীর সময়ে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ ও উদীয়মান ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সম্মেলন অুনষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়িক নেতাদের সাথে সম্প্রতি ‘অপর্চুনিটিজ এন্ড চ্যালেঞ্জেস’ শিরোনামে একটি ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (সিআইআই)। যার মাধ্যমে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধাসহ অভ্যন্তরীণ বানিজ্যিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছে বক্তরা।

ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শ্রী ভি মুরলীধরনের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।

ভারতে বাংলাদেশ হাই কমিশনার মুহাম্মদ ইমরান, সিআইআই-এর মহাপরিচালক চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি, এক্সিম ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড রাসকুইনহা। এই ওয়েবিনারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ যৌক্তিকতাগুলোও তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে এফবিসিসিআই-এর সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, যুগ যুগ ধরেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মানবতার একটি সম্পর্ক রয়েগেছে। আর এই মানবিকতার অবদান রেখেছেন বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাদের নেতৃত্বে আমরা উভয় দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করতে পারছি। ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়নে একটি নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। যার ইতিবাচক ও উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে আমার দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এগিয়ে নেওয়াকে বলতে পারি। তার ফলসূতিতে, ২০১৯ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের মাধ্যমে ৯.৭৫ বিলিয়ন আয়।

সার্কের কোভিড-১৯-এর জরুরি তহবিল হতে বাংলাদেশের জন্য ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়ায় উভয় দেশের নেতাদের প্রশংসা করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, আমরা এই নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা ও দেশের অর্থনৈতিক সংকট পুনরুদ্ধারে জন্য ভারতীয় প্রতিনিধিদের সাথে কাজ করতে চাই। একই সাথে এই সংকট থেকে পুনরুদ্ধারে জন্য তাদের সহযোগিতাও কামনা করছি।

উভয় দেশের মধ্যের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বিলাটেরাল ভ্যালু চেন ইনিশিয়েটিভ (বিভিসি) এর উদ্যোগে এফবিসিসিআই বেশ কিছু শক্তিশালী খাত চিহ্নিত করেছে। তার মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশী পণ্য উৎপাদনের কাচাঁমাল, অভ্যন্তরীণ বাজারের ক্ষেত্রে এফকিউএফ পণ্য প্রবেশাধিকার বন্ধসহ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, এগ্রো- প্রসেসিং, কেমিক্যাল, পোশাক ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে বলে বক্তব্যে তুলে ধরেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থলবন্দর সংক্রান্ত নানা সমস্যা রয়েছে যা আমরা সরকারী-বেসরকারি ভাবেও কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতে পারি। এছাড়া উদ্ভাবনী উদ্যোগ, দক্ষতা, নলেজ ট্রান্সফার, জেভি ইন 4 আইআর, ফিনটেক, আইওটি, রোবোটিক্স, বিগ ডেটা, ডেটা অ্যানালিটিক্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, কোয়ান্টাম ইন্টারনেট ইত্যাদির ক্ষেত্রে আমার যৌথ ভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারি।

তিনি আরো বলেন, সিআইআইয়ের মধ্যে আমাদের একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে সর্বচ্চে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আমার বিভিসিআই এর মাধ্যমে এক সাথে কাজ করে যাবো। যার মাধ্যমে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে নতুন এক দিগন্ত তৈরি হবে।

বাংলাদেশে মেডিকেল সরঞ্জাম সরবরাহের মাধ্যমে বন্ধত্বপূর্ণ দেশেকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফাহিম বলেন, আমাদের বন্ধুদের প্রতি এফবিসিসিআই-এর পক্ষ থেকে অতি শীঘ্রই আমাদের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা পৌঁছে যাবে।

ওয়েবিনারে অংশগ্রহন করে বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাস বলেন, উভয় দেশের মধ্যে সুস্পষ্ট আমদানি ও রপ্তানি নিশ্চিত করতে উভয় দেশের মধ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। সেই উন্নয়ন কাঠামোকে কেন্দ্র করে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের কাছে আরও বিকল্প মাধ্যম রয়েছে। তারএকটি ভালো উদাহরণ হতে পারে, দুই দেশের মধ্যে রেল নেটওয়ার্ক সৃষ্টি । রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পণ্য রফতানি ও আমদানি উভয় দেশই ব্যাপক লাভবান হবে।

ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইবিসিসিআই)-এর প্রেসিডেন্ট আব্দুল মাতলুব আহম্মেদ বলেন, বাণিজ্যিক ভাবে দুই দেশের মধ্যে যে বন্ধত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এতে উভয় দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। যার ফলে আমার আরও অনেক কিছু পেতে পারি।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিআইডিএ) এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভারত ও বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যারা সাধারণ বিষয়গুলো একে অন্যের সাথে ভাগাভাগি করে নেয়। আমাদের সবচেয়ে নিকটতম ও বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ এটি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের আমাদের অবদানই জাতির ইতিহাসের কোন অংশে কম নয়। আমরা দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আমাদের জনগণের মঙ্গলের জন্য আমাদের একত্বতাকে আরও বাড়াতে চাই।

সভাপতিত্বের বক্তব্যে ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শ্রী ভি মুরলীধরন বলেন, দক্ষিণ-এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বন্ধত্বপূর্ণ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। উভয় দেশের নেতারা বেশ কয়েকটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি অর্জনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মধ্যে একটি ফলপ্রসূ সম্পর্ক ধরে রাখতে পেরেছি। যার মাধ্যমে উভয় দেশের উন্নয়নে আরও গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App