×

জাতীয়

পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২০, ১০:০৮ এএম

পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরি সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ

তৈরি পোশাক শ্রমিক ছাটাই ও নির্যাতন বন্ধ এবং স্বাস্থ্য, খাদ্য ও চাকরির নিরাপত্তা দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতারা। এ সময় তারা মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করলে মৎস্য ভবন মোড়ে বাধা দেয় পুলিশ ভোরের কাগজ

করোনার কারণে দেশে প্রকট আকার ধারণ করছে। এরইমধ্যে অসংখ্য মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছেন; হারানোর ঝুঁকিতে আছেন আরো অনেকে। সীমিত হয়ে আসছে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও। সরকারি চাকুরে ছাড়া প্রায় সব খাতের কর্মজীবীদের চরম দুর্দিন চলছে। গার্মেন্টস থেকে শুরু করে করপোরেট প্রতিষ্ঠান সব জায়গায় চলছে ছাঁটাই। করোনা সংকট শুরু হওয়ার পর হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মচারী, ভাসমান হকার, আ্যপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং, নির্মাণশ্রমিক সব পেশায়ই কাজ হারিয়ে বেকার মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। করোনা পরবর্তী সময়ে এসব খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সীমিত আকারে মার্কেট-শপিংমল খুললেও বেচাকেনা নেই বললেই চলে। এতে দেশে প্রায় ৯০ লাখ দোকান কর্মচারীর চাকরি হুমকির মুখে। এছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁ শ্রমিক প্রায় ৩০ লাখ, নির্মাণশ্রমিক প্রায় ৫০ লাখ। করোনার কারণে বন্ধ তাদের কাজ। কাজ হারিয়ে ইতোমধ্যে অর্ধেক মানুষ নিজের আদি নিবাসে ফিরে গেছেন। এছাড়া যারা রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে খণ্ডকালীন কাজ করতেন, তারা আগেই ফিরেছেন গ্রামে। ভাসমান হকাররা পেশা পরিবর্তন করে অন্য কিছুর চিন্তা করছেন। আর দেশের শিক্ষিত তরুণরা কর্মসংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। করোনার কারণে বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী এখন বেকার। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির হিসাবে ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটিতে তিন কোটি ৬০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছে। নতুন করে হতদরিদ্র হয়েছে দুই কোটি ৫৫ লাখ মানুষ। ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে সময়কালে সব মিলিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে ছয় কোটি ১৫ লাখ মানুষ। এছাড়া হাজার হাজার প্রবাসী শ্রমিক কর্মসংস্থান হারিয়ে দেশে ফিরেছেন। আরো লাখো শ্রমিক দেশে ফেরার অপেক্ষায়। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে কর্মহীন মানুষ নিয়ে নানা তথ্য তুলে ধরেছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার দুই হাজার ৩৭১ জনের সাক্ষাৎকার নিয়ে মে মাসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ৩৬ শতাংশ লোক চাকরি বা কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। ৩ শতাংশ লোক চাকরি থাকলেও বেতন পাননি। আর দৈনিক মজুরিভিত্তিতে যারা কাজ করেন, তাদের ৬২ ভাগই কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। করোনার কারণে ১০টি জেলার মানুষের আয় কমে গেছে। ঢাকা জেলার মানুষের আয় কমেছে ৬০ ভাগ। আরেক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) তাদের গবেষণায় বলেছে, করোনার কারণে প্রায় দেড় কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে কথা হয় সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অব ইকোনোমিক মডেলিং (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হানের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, প্রথমত সংক্রমণ ঝুঁকি যে হারে বাড়ছে, তাতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হলেও তা কার্যকর হবে না। কর্মসংস্থান তৈরি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এক্ষেত্রে সরকার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারত। স্থানীয় পর্যায়ে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে সেসব প্রকল্পে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যেত। এছাড়া যারা করোনার কারণে চাকরি হারিয়েছেন, তাদের জন্য বাজেটে বেকার ভাতার জন্য কিছু বরাদ্দ দিতে পারত সরকার। সবচেয়ে বড় কথা সরকারের পক্ষ থেকে যেসব প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে, সেসব প্রণোদনা পেতেও নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। অনেকে প্রণোদনার অর্থ পাচ্ছেন না। ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে স্বাস্থ্যবিধি ঠিকমতো মানা হচ্ছে না। এতে সংক্রমণ আরো বাড়ছে। করোনাকালীন সময়ে গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হয়। আগামী ৩০ জুন বাজেট পাস হওয়ার কথা রয়েছে। এই বাজেটকে অর্থমন্ত্রী মানুষ বাঁচিয়ে রাখার বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। করোনার কারণে যারা কর্মহীন হয়েছেন তারাসহ নতুন কর্মসংস্থানের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ তহবিল ঘোষণা করেছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বেকার মানুষের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সেই তুলনায় এই বরাদ্দ অপ্রতুল। তা সত্তে¡ও নতুন বছরে সরকারকে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান তৈরির উপায় খুঁজতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App