×

পুরনো খবর

অবশেষে এন্টিবডি টেস্ট!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২০, ০৯:৪৯ এএম

বেশিসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তে আরটিপিসিআর টেস্টের পাশাপাশি এন্টিবডি টেস্টের ওপরও অনেক আগে থেকেই জোর দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তুলনামূলক ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ায় সর্বোচ্চসংখ্যক নমুনা পরীক্ষা নিশ্চিত করতে উন্নত দেশগুলোও এন্টিবডি টেস্টকে এখন সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো দেশ এরই মধ্যে এ নীতি অনুসরণের মাধ্যমে বেশ সফলতা পেয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও বেশ কয়েক দিন আগে থেকে জানানো হয়েছিল টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে নতুন কৌশল নিতে যাচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে গতকাল রবিবার র‌্যাপিড টেস্টিং এন্টিবডি কিট ব্যবহারের নীতিমালা চ‚ড়ান্ত করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলেই এই কিট ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হবে। গণমাধ্যমে পাঠানো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধিদপ্তর থেকে র‌্যাপিড এন্টিবডি টেস্ট কিটের অনুমোদন দেয়া হয়নি। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক ২৪ জুন কোভিড-১৯ এর এন্টিবডি টেস্ট কিটের (র‌্যাপিড ও ল্যাবরেটরি ইএলআইএসএ ম্যাথড) এনওসি/ইমার্জেন্সি ইউজ অথোরাইজেশন রেজিস্ট্রেশন দেয়ার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে যা জনসাধারণের অবগতির জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে আপলোড করা হয়েছে। জানা যায়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিনকে সদস্য সচিব করে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রে ওষুধ, ইনভেস্টিগেশনাল ড্রাগ, ভ্যাকসিন এবং মেডিকেল ডিভাইস মূল্যায়নের জন্য ১৪ সদস্যের এই কমিটি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিএসএমএমইউ, আইসিডিডিআরবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিনের প্রতিনিধি ও বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রয়েছেন এই কমিটিতে। ২১ ও ২৩ জুন দুই দফা বৈঠক করে কমিটি এই নীতিমালা চ‚ড়ান্ত করে। কিটের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে এ পর্যন্ত প্রায় ২০ থেকে ২২টি কোম্পানির আবেদনপত্র জমা হয়েছে। কী আছে নীতিমালায় : সেখানে বলা হয়েছে, সেরো সার্ভেইল্যান্স এবং কনভালসেন্ট প্লাজমা থেরাপি ও গবেষণার কাজে র‌্যাপিড টেস্টিং এন্টিবডি কিট ব্যবহার করা যাবে। ‘অপব্যবহার’ রোধে শুধু ল্যাবরেটরিতে এই কিট ব্যবহারের অনুমতি দেয়া যাবে। কিটের মোড়কে লেখা থাকতে হবে ‘দিস ইজ নট এ ডায়াগনস্টিক কিট, দিস কিট উইল বি ইউজড অনলি ফর ডিটেক্টিং এন্টিবডি, নট ইন একিউট স্টেজ’। এসব কিট ‘পয়েন্ট অব কেয়ারে’ ব্যবহার করা যাবে না। র‌্যাপিড এন্টিবডি কিটের কম্বাইন্ড আইজিএম (ইমিউনোগ্লোবিন এম, যা ইনফেকশনের শুরুতে তৈরি হয়) এবং আইজিজি (ইমিউনোগ্লোবিন জি, ইনফেকশনের বিলম্বিত পর্যায়ে তৈরি হয়) এর ন্যূনতম সেনসিটিভিটি (কোভিড-১৯ এর লক্ষণ-উপসর্গ কমে যাওয়ার ১৪ দিন পর রক্তে পাওয়া এন্টিবডির শতকরা হার) ৯০ শতাংশ ও স্পেসিফিসিটি ৯৫ শতাংশ হতে হবে। ঔষধ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, তারা এই কিট ব্যবহারের নীতিমালা করেছেন সার্ভেইলেন্সের জন্য। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হলে তার রক্তে ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে কিনা তা এই এন্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে বোঝা যাবে। এন্টিবডি থাকলে তিনি প্লাজমা দিতে পারবেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে সম্ভাব্য প্লাজমাদাতাদের চিহ্নিত করা সহজ হবে। এই নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনা ভাইরাসে সংক্রমিতদের বড় একটি অংশের মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। যদিও উপসর্গমুক্ত এ সংক্রমিতরাও উপসর্গযুক্তদের মতোই বেশ দ্রুত গতিতে সংক্রমণ ছড়ায়। উপসর্গ প্রকাশ না পেলে মানুষ পিসিআর টেস্টের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষা করাতে যাবে না, এটাই স্বাভাবিক। কারো শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল কিনা, তা নিশ্চিত করার জন্যই এই এন্টিবডি টেস্ট। সাধারণত সংক্রমণের এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে দেহে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এন্টিবডি তৈরি হয়। উপসর্গমুক্ত রোগীদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে এন্টিবডি টেস্ট কার্যকর হতে পারে। বিশেষ করে সংক্রমণের ব্যাপ্তির প্রকৃত চিত্র অনুধাবনের জন্যও এটি কার্যকর। এদিকে ২৫ জুন গণস্বাস্থ্যের এন্টিবডি কিটের সেনসিটিভিটি (কত শতাংশ কোভিড-১৯ পজিটিভ নমুনা সঠিকভাবে শনাক্ত করেতে সক্ষম) গ্রহণযোগ্য মাত্রার নিচে উল্লেখ করে এই কিটের রেজিস্ট্রেশন না দেয়ার সুপারিশ করেছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের টেকনিক্যাল কমিটি। ওই দিনই অধিদপ্তর প্রথমবারের মতো সফল এন্টিবডি টেস্ট কিট পরীক্ষার জন্য দুটি গাইডলাইন অনুসরণের কথা গণস্বাস্থ্যের কাছে উল্লেখ করে। এর একটি হলো মার্কিন কেন্দ্রীয় ওষুধ সংস্থা ফেডারেল ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন নির্ধারিত গাইডলাইন, অন্যটি হলো আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড (মান)/গাইডলাইন। অধিদপ্তর এবং লাইসেন্সিং অথোরিটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান গণস্বাস্থ্যকে দেয়া চিঠিতে বলেছেন, ওই নীতিমালার শর্ত পূরণ করতে না পারার জন্য এন্টিবডি টেস্ট কিটটির নিবন্ধন দেয়া সম্ভব হয়নি। এরপরই সরকারের বেঁধে দেয়া নতুন গাইডলাইনের শর্ত পূরণ করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রর এন্টিবডি টেস্ট কিটের গবেষক দলের সদস্যরা। গণস্বাস্থ্যর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের চিঠির আলোকে তারা তাদের পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণের বিকল্পগুলো খতিয়ে দেখছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও প্লাজমা থেরাপির জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ডা. এম এ খান বলেন, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী কোভিড-১৯ আক্রান্ত অনেকের শরীরে পর্যাপ্ত এন্টিবডি তৈরি হচ্ছে না। সে ধরনের দাতার প্লাজমা নিয়ে কোনো লাভ হবে না। তাই এই প্লাজমা নেয়ার আগে জানতে হবে দাতার প্লাজমায় প্রয়োজনীয় এন্টিবডি তৈরি হয়েছে কিনা। এজন্য এন্টিবডি টেস্ট জরুরি। রক্তে এন্টিবডির মাত্রা জানার পাশাপাশি এই টেস্টের মাধ্যমে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা ও পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, বর্তমানে করোনায় বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি তাতে টেস্টের পরিধি বাড়াতে হবে। অনেক দেরি হয়ে গেছে। দ্রুতই এন্টিবডি ও এন্টিজেন টেস্ট শুরু করতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক করোনা মোকাবিলায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির এক সদস্য বলেন, কমিটির পক্ষ থেকে সরকারকে এন্টিবডি টেস্ট করানোর বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আমাদের এখানে যেহেতু পিসিআর টেস্ট কম হচ্ছে তাই এন্টিবডি টেস্ট করা উচিত। অনেক সন্দেহভাজন রোগী টেস্ট না করেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। টেস্ট করানোর জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আবার একই পরিবারে সব সদস্যের পিসিআর টেস্ট করাতে বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এসব দিক বিবেচনায় কম খরচে ও সহজে কেউ করোনা আক্রান্ত হয়েছিল কিনা তা জানতে এন্টিবডি টেস্ট করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App