×

মুক্তচিন্তা

সাবধান, জঙ্গিরা কিন্তু সুযোগের অপেক্ষায় আছে...

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২০, ০৭:১৮ পিএম

করোনা মহামারির মধ্যেও জঙ্গিবাদী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশে নানা তৎপরতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ও চালিয়েও যাচ্ছে মর্মে বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দা সূত্রের খবরে প্রকাশ। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বাংলায় আটক ওই সংগঠনের কয়েকজন দুর্র্ধর্ষ সদস্যের কাছ থেকে এ বিষয়ক তথ্যাদি পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে বাংলাদেশে ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে নতুনভাবে সংগঠিত হতে শুরু করেছে এবং এখন গ্রামাঞ্চল ছেড়ে বিভিন্ন শহরাঞ্চলে তাদের ঘাঁটি সম্প্রসারণ করছে। আর এসব কাজে তারা কুয়েত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, লিবিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের তাদের মদদদাতাদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থের জোগান লাভ করে চলেছে। এছাড়া মাদক বিক্রি ও মানব পাচারের মাধ্যমেও তারা বিপুল পরিমাণ তহবিল সংগ্রহ করে যাচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হয়েছেন। উল্লেখ্য, সাউথ এশিয়া টেরোরিস্ট পোর্টালে এসব শঙ্কাপূর্ণ খবরাদি প্রকাশিত হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার ধর্মীয় উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করায় জঙ্গিরা ভারতের বিশেষ করে বাংলা ভাষা-ভাষী অঞ্চলে গিয়ে জড়ো হতে থাকে এবং সেখান থেকে বাংলাদেশ ও ভারতে জঙ্গি তৎপরতা চালানোর পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। নির্ভরযোগ্য ও ওয়াকিবহাল সূত্র মতে, গোয়েন্দা অনুসন্ধানে জানা গেছে কুয়েতের রিভাইভাল অব ইসলামিক হেরিটেজ, দাউলায়েতুল কুয়েত, আল ফুজিরা ও খায়রুল আনসার, বাহরাইনের দাউলায়েতুল বাহরিনি ও সৌদি আরবের আল হারমাইন ইসলামিক ট্রাস্ট ছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর অন্তর্ভুক্ত আরো প্রায় ৩৫১টি প্রতিষ্ঠান এই জঙ্গি তৎপরতায় আর্থিক সহযোগিতা জোগাচ্ছে। জেএমবির উত্থান বিষয়ে ওয়াকিবহাল পাঠকদের নিশ্চয়ই স্মরণে আছে যে, ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে ‘জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ’ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেছিল, যা কিনা ২০০৪ সালে নাম পরিবর্তন করে ‘জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশে’ রূপান্তরিত হয়। এই নবগঠিত সংগঠনটি ২০০৫ সালে দেশের ৬৪টির মধ্যে ৬৩টি জেলায় একনাগাড়ে বোমা হামলা চালিয়ে তাদের ভীতিকর অস্তিত্বের জানান দেয়। ২০০৭ সালে তদানীন্তন সরকার সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই ও শায়খ আব্দুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। অন্যদিকে অপর এক দুর্র্ধর্ষ জঙ্গি সালাউদ্দিন সালেহীন ২০১৪ সালে ময়মনসিংহে প্রিজন ভ্যান থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে সক্ষম হয়। পরে এই সালাউদ্দিন সালেহীনই দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে জামা’আতুল মুজাহিদীনের ভারতীয় শাখা গঠন করে। জঙ্গি তৎপরতার কারণে ভারত সরকার অবশ্য ২০১৯ সালেই এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যা হোক, প্রাপ্ত নানা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এ কথা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, বাংলাদেশে নাশকতামূলক তৎপরতা চালানোর উদ্দেশ্যে জেএমবি বর্তমানে ছোট ছোট গ্রুপে সংগঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের জেএমবি সদস্যরা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর মদদে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এমন তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানান, অনুরূপ হামলার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে প্রায় ৩০০ জঙ্গি ভারতে গোপনে প্রশিক্ষণ লাভ করেছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, গত ১০ জুন নাশকতার প্রস্তুতিকালে মহাখালী অঞ্চল থেকে নিরাপত্তা বাহিনী ২ জেএমবি জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে। আবার ওই একইদিনে ভালুকা থেকে গ্রেপ্তার হয় আরো ৩ জন। গত মে মাসে ঢাকার কাকরাইল এলাকা থেকে ১৭ জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়, যারা তথাকথিত জিহাদে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ও ভারতীয় সীমান্তপথে সৌদি আরবে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। এদিকে ভারতেও এই জঙ্গিদের তৎপরতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে চলতি মাসে কলকাতা পুলিশ জেএমবি প্রধান সালাউদ্দিন সালেহীনের পক্ষে অর্থকড়ি দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত জঙ্গি শেখ রেজাউল ওরফে কাজলকে গ্রেপ্তার করে। অন্যদিকে মুর্শিদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার হয় আব্দুল করিম ওরফে বড় করিম যে কিনা জেএমবি বাংলাদেশ শাখার তৃতীয় শীর্ষ ব্যক্তি এবং সে সালাউদ্দিন সালেহীনের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া সে ২০১৭ সাল থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতে দায়েরকৃত অনেক সন্ত্রাসী মামলার আসামি। এ কথা সবার জেনে রাখা দরকার যে, জেএমবির রয়েছে একটি শক্তিশালী মহিলা শাখা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে পুলিশ এই মহিলা শাখার প্রধান হিসেবে কথিত জনৈক আসমানি খাতুন ওরফে ‘আসমা’ ওরফে ‘বন্দি জীবন’ ওরফে ‘নিখোঁজ আলো’কে গ্রেপ্তার করে। উল্লেখ্য, গত বছরের মাঝামাঝি ও শেষের দিকে এবং চলতি বছরের শুরুর দিকে নব্য জেএমবি সদস্যরা চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা চালায়। মোদ্দাকথা, সারা বিশ্ব যখন করোনার কবলে পড়ে নাস্তানাবুদ হওয়ার জোগাড় ঠিক তখনই ওই জঙ্গিরা প্রতিপক্ষের ওপর আঘাত হানার পাঁয়তারা করে ফিরছে। এমতাবস্থায় বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, এ ব্যাপারে তাই সংশ্লিষ্ট সবার উচিত চোখ-কান খোলা রেখে পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা।

শাহীন রেজা নূর : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App