×

অর্থনীতি

বেতন হয়নি ৪০ কারখানায়, আন্দোলনে শ্রমিকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২০, ১০:৩৯ এএম

মে মাসের বেতন পেয়েছে ৯৮ শতাংশ পোশাক শ্রমিক

দেশে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত সর্বমোট এক হাজার ৯২৬টি তৈরি পোশাক কারখানা চালু রয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার ৮৮৬ টির মালিক তাদের শ্রমিকদের মে মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছেন। তবে এখনও ৪০ কারখানার শ্রমিক বেতন-ভাতা পাননি।

শনিবার (২৭ জুন) রাতে এ তথ্য জানিয়েছে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। অবশ্য, এপ্রিল মাসে ৬০ শতাংশ বেতন পেলেও এবার তারা শতভাগ বেতন পাচ্ছেন। তবে অধিকাংশ কারখানাতেই শ্রমিকদের মধ্যেই কাজ করছে ছাঁটাই আতঙ্ক। ন্যায্য পাওনা আদায়ে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিককে প্রতিদিনই নামতে হচ্ছে রাস্তায়। সব মিলিয়ে শ্রমিকরা ভালো নেই। এদিকে, ছাঁটাই বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পোশাক মালিকদের সংগঠনগুলোকে চিঠি দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

বিজিএমইএ’র সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২৭ জুন পর্যন্ত এক হাজার ৯২৬ কারখানার মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় রয়েছে ৩৩৩টি। এর মধ্যে মে মাসের বেতন দিয়েছে ৩২৩টি প্রতিষ্ঠান। গাজীপুরের ৭১৩টি কারখানার মধ্যে বেতন দিয়েছে ৭০২টি, সাভার-আশুলিয়ায় ৪১২টির মধ্যে বেতন দিয়েছে ৪০৬টি, নারায়ণগঞ্জের ১৯৮টি কারখানার প্রত্যেকে তাদের মে মাসের বেতন পরিমোধ করেছে। এছাড়া চট্টগ্রামের ২৫২টি কারখানার মধ্যে ২৪০টি এবং প্রত্যন্ত এলাকার ১৮টি কারখানার মধ্যে ১৭টি বেতন পরিশোধ করেছে।

সব মি‌লিয়ে মে মাসের বেতন প‌রিশোধ করেছে চালু থাকা এক হাজার ৮৮৬টি (৯৮ শতাংশ) কারখানা। তবে ৪০টি কারখানার (২ শতাংশ) শ্রমিকদের বেতন ২৭ জুন পর্যন্ত পরিশোধ করেনি মালিকপক্ষ।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে রপ্তনিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এ প্যাকেজ থেকে উৎপাদনের ন্যূনতম ৮০ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করছে এমন সচল প্রতিষ্ঠান সুদবিহীন সর্বোচ্চ ২ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিয়ে ঋণ নিতে পারছে।

জানা যায়, তহবিল থেকে ঋণ পেতে বিজিএমইএর সদস্য এক হাজার ৩৭০টি ও বিকেএমইএর সদস্য ৫১৯টি কারখানা আবেদন করেছিল। বিভিন্ন কারণে বিকেএমইএর ৯৯ সদস্য কারখানাসহ বেশি কিছু আবেদন বাতিল হয়। তবে এরপরও পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের সিংহভাগ অর্থই ঋণ হিসেবে পেয়েছেন পোশাকশিল্পের মালিকরা। ফলে দুই মাস ধরে পোশাক শ্রমিকদের একটি বড় অংশের মজুরি হচ্ছে প্রণোদনার টাকায়।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চলমান সংকটে শ্রমিক-কর্মচারীদের আরও তিন মাসের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য বিশেষ অর্থ বরাদ্দ চান দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকরা। এই বরাদ্দ চেয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেয় রফতনিমুখী পোশাক মালিকদের বড় দু‌টি সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাভারের একটি কারখানার শ্রমিক জানান, ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে তাদের কারখানায় আন্দোলন হয়েছিল। পরে ঈদের দিন গ্রামে চলে যান। এখনো কাজে ফেরেননি। কারণ শ্রমিকরা ভাঙচুর চালানোর পর ওই কারখানায় আর কাজ শুরু হয়নি। ফলে বাধ্যতামূলকাভবে তিনি এখন বেকার হয়ে পড়েছেন।

রাজধানীর ড্রাগন সোয়েটারের নিয়মিত চলছে বেতনের দাবিতে আন্দোলন। ওই কারখানার এক শ্রমিক জানান, সম্প্রতি ঢাকা থেকে তাদের কারখানা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ন্যায্য পাওনা দেয়া হয়নি। ফলে তারা এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। স্মারকলিপি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও।

বেতনের বিষয়ে বিজিএমইএমইএ’র পরিচালক (শ্রম) রেজওয়ান সেলিম বলেন, বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত কারখানায় মে মাসের বেতন নিয়ে এখনো কোন সমস্যা হয়নি। আর বেতন দেয়ার প্রক্রিয়াটি চলমান রয়েছে। প্রায় শতভাগ কারখানায় এরই মধ্যে বেতন দেয়া শেষও হয়েছে।

জানতে চাইলে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, সরকার যদি প্রথম থেকে কঠোর হতো, বলত আমরা ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছি, তোমরা কোনোভাবে শ্রমিকের সঙ্গে অন্যয্য কিছু করতে পারবে না, তাহলে এ পরিস্থিতি এত খারাপ হতো না। তিনি বলেন, রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন হচ্ছে। করোনার মধ্যেও আমরা যথেষ্ট মিটিং-মিছিল করেছি। কেবল চাপ প্রয়োগ করলেই মালিকরা তার অবস্থান থেকে সরে আসছেন। মালিকরা শুধু মুনাফার কথা ভাবছেন, শ্রমিকরা যে সংকটের মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন, সেদিকে ভাবনা নেই। এখন সরকার যদি মালিকের পক্ষ না নিয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা নেয়, তাহলে শ্রমিকরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App