×

সারাদেশ

জিপিএ-৫ পেয়েও তপন এখন রাজমিস্ত্রি!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২০, ০৮:৫৫ পিএম

জিপিএ-৫ পেয়েও তপন এখন রাজমিস্ত্রি!

কালীগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তপন দাস রাজমিস্ত্রীর কাজে ব্যস্ত। ছবি; প্রতিনিধি

জিপিএ-৫ পেয়েও তপন এখন রাজমিস্ত্রি!

মা সুমিত্রা দাসের সঙ্গে ছেলে তপন দাস

তপন দাসের ভূমিহীন বাবা হরেন দাস এক সময়ে ছিলেন মোটর গাড়ি চালক। কিন্ত বয়সের ভার আর রোগাক্রান্ত হয়ে হারাতে বসেছেন দৃষ্টিশক্তি। এখন আর গাড়ি চালাতে পারেন না। মা সুমিত্রা দাস পরের বাসায় কাজ করেন। সাংসারিক এমন অভাবের মধ্যেই তপন সারাবছর রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ করে চালিয়ে গেছে নিজের লেখাপড়া। চলতি বছরে তপন দাস কালীগঞ্জ সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ হাইস্কুল থেকে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে জিপিএ-৫ পেয়েছে। কিন্ত এখন কীভাবে আসবে কলেজের লেখাপড়ার খরচ সে চিন্তায় পড়েছে তার পরিবার। তারা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ফয়লা মাস্টারপাড়ার মনো মোল্যার বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করছে। সরেজমিনে রবিবার দুপুরে তপন দাসের ভাড়া বাড়িতে গেলে দেখা যায়, মাটির মেঝের ওপর টিনের ছাউনি ও বেড়ার দুটি ঝুপড়ি ঘরে ভাড়ায় বসবাস তাদের। হতদরিদ্র মেধাবী তপন দাস জানায়, এতোদিন বাড়িতে থেকে রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ করেও লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে হয়তো ভর্তি শুরু হবে। কাজ করে অল্প কিছু টাকা জোগাড় করেছি। বাকিটা কোথায় পাবো আর কীভাবেই বা দূরের কোনো কলেজে ভর্তি হয়ে খরচ চালাবো এটা ভেবে পথ পাচ্ছি না। মা সুমিত্রা দাস বলেন, আমাদের নিজেদের কোনো জায়গা জমি নেই। পরের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছি। আমার অন্য ছেলেরাও দিনমজুর। তারাও পৃথক সংসার করছে। অভাবের সংসারে স্বামী কোনো কাজ করতে পারে না। আমিও অসুস্থ তবে বেঁচে থাকার তাগিদে এলাকার শ্যামল বিশ্বাসের বাসায় কাজ করি। ছোট ছেলে তপন দাস লেখাপড়া করে। [caption id="attachment_228603" align="aligncenter" width="700"] মা সুমিত্রা দাসের সঙ্গে ছেলে তপন দাস[/caption] সুমিত্রা দাস আরো জানান, সংসারের অভাবের তাগিদে নিজের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে তাকে রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ করতে হয়। স্কুল বাড়ির কাছে হওয়ায় এতোদিন লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পেরেছে। এখন কারিগরি কলেজে ভর্তি হতে হলে শুনছি ঝিনাইদহ অথবা যশোর যেতে হবে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তিনি আরও বলেন, চেয়েছিলাম নিজেরা না খেয়ে থাকলেও ছোট ছেলেটাকে একটু লেখাপড়া শেখাবো। কিন্ত অভাবের সংসারে আমাদের কাছে এটা দুঃসাধ্য এক ব্যাপার হয়ে গেছে। উপজেলার ফয়লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম মিঠু জানান, তপন দাসের পরিবার ভূমিহীন ও অভাবী। তপন দাস নিজে রাজমিস্ত্রির জোগালের কাজ করেও পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় তাকে ধন্যবাদ দিতে হয়। প্রতিবেশি রাজু আহম্মেদ জানান, তপন দাসের সাংসারিক অবস্থা বিবেচনা করলে কথাটা দাঁড়ায় এমন সাধ আছে কিন্ত সাধ্য নেই। শুধু লেখাপড়ার কথাই না তারা ঠিকমতো খেতেও পায় না। তারপরও লেখাপড়ার প্রতি তপনের আগ্রহ ও ফলাফল সন্তোষজনক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App