×

জাতীয়

করোনা আতঙ্ক নেই শিমুলিয়া গ্রামে, সবকিছু স্বাভাবিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২০, ০১:২৬ পিএম

করোনা আতঙ্ক নেই শিমুলিয়া গ্রামে, সবকিছু স্বাভাবিক

ফাইল ছবি

সাভার উপজেলার উত্তর প্রান্তে সর্বশেষ ইউনিয়ন শিমুলিয়া। এর উত্তরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর, পূর্বে জয়দেবপুর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ধামরাই উপজেলা। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি), শতবর্র্ষী শিমুলিয়া শ্যামাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়, কবিরপুর অঞ্জনা মডেল হাই স্কুল, গোহাইলবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ও টেঙ্গুরী মাদ্রাসাসহ ইউনিয়নের অন্তর্গত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তবে থেমে নেই মানুষের কর্ম চাঞ্চল্য, সবকিছু চলছে স্বাভাবিক নিয়মে, আগের মতোই। বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে এখানকার মানুষের মধ্যে নেই ভীতি, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। সবার চলাফেরা ও দৈনন্দিন কাজ এখানে ভাবলেশহীন। অবশ্য জিরানী এলাকায় পোশাক কারখানার কিছু শ্রমিকের বসবাস থাকায় সেখানকার লোকজন মাস্ক পরে চলাচল করেন। অনেকে চেষ্টা করেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। এছাড়া ইউনিয়নের অন্য কোথাও নেই করোনার কোনো ছাপ।

প্রায় অর্ধলাখ মানুষের বসতি আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত মুনসুরবাগ, আষাড়িয়াটেকী, উত্তর ও দক্ষিণ নাল্লাপোল্লা, খান কলেশ্বরী, গাজীবাড়ি, স্বামেরটেকী, রাঙ্গামাটি, গোহাইলবাড়ি, জিরানী, নিশ্চিতপুর এলাকায় সরজমিন ঘুরে কোথাও জনমনে করোনার উদ্বেগ চোখে পড়েনি। এরমধ্যে শিমুলিয়া, গোহাইলবাড়ি ও নাল্লাপোল্লা বাজারের চিত্র যেন চিরচেনা, আগের মতোই। নাল্লাপোল্লা বাজার শুরু হয় ভোর ৬টায় শেষ হয়ে যায় সাড়ে ৬টার দিকে। এরমধ্যে মাছ, তরিতরকারি যার যা প্রয়োজন তা কিনে নেয়। যারা নিয়মিত হোটেলে নাস্তা সেরে অভ্যস্ত তারা এখনো তাই করছেন। চায়ের স্টলে বসে গল্প করে চা-সিগারেট পান করে আর টিভি দেখে সময় কাটছে অনেকের। সকাল থেকে রাত ১০টা অবধি চলছে আড্ডা। টিভি পর্দায় খবরে চোখ রাখলেও অধিকাংশ সময় তারা বিভিন্ন চ্যানেলে সিনেমা দেখে আগের মতোই সময় পার করছেন।

নাল্লাপোল্লা বাজারের আলমগীর হোসেন, মিজানুর রহমান ও আরমান মিয়ার নাস্তার হোটেল সকাল ৬টা থেকে আগের মতোই জমজমাট। সকাল ৮টার মধ্যে শেষ হয়ে যায় নাস্তা বিক্রি। এরপর আলমগীরের চা স্টল খোলা থাকে সন্ধ্যা অবধি।

সেখানে লক্ষণ চন্দ্র সরকার নামে এক কৃষক জানালেন, ক্ষেতের শাকসবজি বিক্রি করে বাড়ির নিত্যপণ্য কিনতে প্রতিদিনই তিনি বাজারে যান। সেখানে তিনি নাস্তা সারেন। করোনা নিয়ে এলাকার কারো মধ্যে কোনো ভীতি নেই। তারা মাস্ক ব্যবহারও করেন না। বরং মাস্ক পরলে কেমন যেন সবাইকে অচেনা লাগে। দক্ষিণ নাল্লাপোল্লা আলীর চায়ের দোকানে সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত লোকজন জটলা করে চা-সিগারেট পান করে গল্পে মশগুল। তরুণ ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম শুভ জানান, ওই গ্রামে বা আশপাশের গ্রামে কেউ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এমন খবর তাদের জানা নেই। কারো মধ্যে করোনার কোনো লক্ষণও নেই। তাই তারা ভীত নন।

তবে শহর থেকে কেউ হঠাৎ করে গ্রামে গেলে গ্রামের মানুষ তাকে ভালো চোখে দেখেন না, এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। শিমুলিয়া বাজারের পাগলনাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বিক্রি আগের মতোই। সকাল থেকেই ভিড় জমে নাস্তার টেবিলে। প্রথমে কয়েকদিন মানুষের মধ্যে করোনা ভীতি থাকলেও এখন তা কেটে গেছে।

ওই দোকানে নাস্তা করতে যাওয়া ভ্যানচালক নূরু মিয়া জানান, যারা কাজ করে খায় করোনা তাদের ধরে না। জ্বর সর্দি কাশি এমনিতে সবার হয়ে থাকে। এটা নিয়ে ‘ডরের’ (ভয়ের) কোনো কারণ নেই। রাঙ্গামাটি স্ট্যান্ডে রয়েছে সুবল ও কালামের নাস্তার হোটেল। এছাড়া ডালপুরি, সিঙ্গারা, পিয়াজু, নিমকিও তারা বিক্রি করেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ তাদের দোকানের নিয়মিত যাতায়াত করেন। যা আগের মতোই রয়েছে। গোহাইলবাড়িতে প্রতি শুক্রবার হাট বসে। সাপ্তাহিক এই হাটের দিন সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা আগের মতোই রয়েছে। সেখানে রয়েছে প্রেমা ও আনছুর হোটেল। যেখানে সকালে নাস্তার জন্য ভিড় রয়েছে। লোকজন আয়েশ করে বিড়ি ফুঁকছেন।

অন্যদিকে গ্রামগুলোতে ক্ষেতের ধান কাটার পর মাড়াই শেষ হয়েছে। কৃষকের ঘরে এখন নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধ। সকালেই গরু নিয়ে মাঠে ছুটছেন কৃষক। অনেকের উঠানে গরুর খাবারের জন্য খড়ের পালা দেখা গেছে। পুরুষের পাশাপাশি মহিলারা সমানতালে কাজ করছেন মাঠে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে আষাড়িয়াটেকী গ্রামে নেমে আসে রাজ্যের নীরবতা। সন্ধ্যায় রাতের খাবার সেরে তারা নিদ্রা যায়। আবার ভোরে উঠে শুরু হয় তাদের দৈনন্দিনের কাজ। ভরাট হতে হতে সরু হয়ে যাওয়া বংশী নদীতে নতুন পানি আসতে শুরু করেছে। সেখানে গরু ঝাঁপানোর (গোসল করানো) কাজ চলছে।

এছাড়া মুনসুরবাগ, স্বামেরটেকী, কলতাসূতী ও শিমুলিয়া গ্রামে কয়েকটি পুকুর ও বিলে মাছ চাষ করতে দেখা গেছে। সেখানে তৈরি করা ডেরায় দিনরাত পালাক্রমে পাহারার ব্যবস্থা রয়েছে। দিনের বিভিন্ন সময় ওইসব পুকুর বিলের পাড়ে মানুষ জড়ো হলেও করোনা ভীতির লেশমাত্র নেই কারো চোখমুখে। মুনসুরবাগ গ্রামের মৎস্যচাষি রফিকুল ইসলাম জানান, গ্রামে সবাই ভোর থেকে কাজে ব্যস্ত। বিকেলে গরু গোয়ালে না নেয়া পর্যন্ত তাদের অবসর নেই। এরপর পুরুষরা চায়ের দোকানে ঢু মারেন। ‘করোনা রোগের কথা মাথায় থাকলেও তা নিয়ে কেউ ডরায় না, ভাবেও না।’ কিছু লোক অবসর কাটান তাস খেলে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App