×

সাহিত্য

ছবি এঁকে দুঃসহ সময়টা ভুলে থাকার চেষ্টা করছি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২০, ১২:১০ পিএম

ছবি এঁকে দুঃসহ সময়টা ভুলে থাকার চেষ্টা করছি

ভাস্কর আইভি জামান

ছবি এঁকে দুঃসহ সময়টা ভুলে থাকার চেষ্টা করছি

ভাস্কর আইভি জামান

ছবি এঁকে দুঃসহ সময়টা ভুলে থাকার চেষ্টা করছি

আইভি জামান

ছবি এঁকে দুঃসহ সময়টা ভুলে থাকার চেষ্টা করছি

আইভি জামানের সৃষ্টি

ছবি এঁকে দুঃসহ সময়টা ভুলে থাকার চেষ্টা করছি

আইভি জামানের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

ছবি এঁকে দুঃসহ সময়টা ভুলে থাকার চেষ্টা করছি

বিশেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইভি জামান

ছবি এঁকে দুঃসহ সময়টা ভুলে থাকার চেষ্টা করছি

একজন ভাস্কর আইভি জামান

ছবি এঁকে দুঃসহ সময়টা ভুলে থাকার চেষ্টা করছি

আইভি জামানের সৃষ্টি

ছবি এঁকে দুঃসহ সময়টা ভুলে থাকার চেষ্টা করছি

ভাস্কর আইভি জামান

বিশেষ সাক্ষাৎকার আইভি জামান ভাস্কর

আইভি জামান। বিশিষ্ট ভাস্কর। যিনি ভারতীয় ভাস্কর্যরীতি প্রত্যাখ্যান করেছেন, একই সঙ্গে ইউরোপের ভাস্কর্যের আধুনিকতা জয় করেছেন। বরাবরই তিনি স্পেস থেকে বিভিন্ন ফর্ম গড়েছেন। সমগ্র স্তব্ধতার মধ্যে গতি খুঁজেছেন, পাথর, মার্বেল, কিংবা কাঠের চিন্তা তাকে ভর করেছে, ভাস্কর হিসেবে তার প্যাশন হচ্ছে পাথর, মার্বেল, কিংবা কাঠের মধ্যে নিজেকে রূপান্তরিত করা। ভয় ও আতঙ্ককে তিনি নিজের মধ্যে অভ্যন্তরীণ অভিজ্ঞতা করে তোলেন, এই ভয় হচ্ছে তার নিজের মধ্যকার ক্রোধ। এই ক্রোধ জয় করে তিনি নিজের সঙ্গে কথা বলেন। এই কথা বলাটাই তার কাজ। শব্দ না করে নিজের সঙ্গে কথা বলা। কখনো কখনো তার কাজ গানের মতো, স্পষ্ট বোঝা যায়, কখনো বোঝা যায় না। আস্তে আস্তে, বারবার দেখতে গিয়ে, একটার পর একটা ইমেজ মনে তৈরি হয়। যা চোখ বুজে তাকালে, রং ও রেখা ধরা দেয়, সার সার ঘূর্ণনের মতো। যা একেবারেই মেদহীন ফর্ম হিসেবে আমাদের চোখে উদ্ভাসিত, এই উদ্ভাসন মানুষের দিকে এগিয়ে আসে। আইভির মতে, মানুষ জীবন্ত ভাস্কর্য। প্রকৃতি তার ক্লাসরুম। অনন্য এই শিল্পীর কাজ ছড়িয়ে আছে বাংলা থেকে বিশ্ব।

[caption id="attachment_228332" align="aligncenter" width="960"] আইভি জামান[/caption]

কোরিয়ার কিমচিয়ন সিটির জিক জি ভাস্কর্য পার্ক থেকে ভারতের শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে, জাতীয় জাদুঘরে, শিল্পকলা একাডেমিতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে, রংপুরের পায়রাবন্দে অবস্থিত বেগম রোকেয়া কমপ্লেক্সে, এশিয়াটিক সোসাইটিতে সহ বিদেশের অনেক স্থানে। করোনাকাল কেমন কাটছে ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনার এই সময়টাতে সংসারের সব কিছু নিজেকেই করতে হচ্ছে। আমি যে এত কাজ করতে পারি। তা ভেবেও অবাক হচ্ছি। এর ফাঁকে যখনই সময় পাচ্ছি ছবি আঁকছি। স্কাল্পচার করছি। কারণ এই সময়টাতে মনের যে অবস্থা তা যদি আমি এঁকে প্রকাশ করি তাহলে অনেকটা স্বস্তি পাচ্ছি। তাই ছবি এঁকে দুঃসহ এই সময়টা ভুলে থাকার চেষ্টা করছি। মনটা সবসময় অস্থির হয়ে আছে, প্রতিদিন দেশের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। কখনো কখনো নিজেরা আক্রান্ত হচ্ছি কি না এ নিয়েও আতঙ্কিত হচ্ছি। ভয়ে ভয়ে থাকি একার জন্য নয়, সবার জন্য। আমার দেশসহ সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য। যদিও আমরা ঘর থেকে বেরুচ্ছি না। তারপরও সবার জন্য মন কাঁদছে। করোনাকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি পাবো না।

[caption id="attachment_228334" align="aligncenter" width="960"] আইভি জামানের সৃষ্টি[/caption]

আপনি বললেন ছবি আঁকছেন, আপনার এসব ছবিতে করোনার কোনো প্রভাব আছে কী? বিশিষ্ট এই শিল্পী বলেন, হ্যাঁ করোনার প্রভাব তো আছেই। করোনা ভেতরটাকে বেশ নাড়িয়ে দিচ্ছে। সরাসরি তো করোনার ভয়ংকর রূপ আঁকা যায় না। এটার নান্দনিক রূপ দেয়ার চেষ্টা করছি। প্রকৃতিরও অনেক ভাস্কর্য আছে। আমার ভাস্কর্যের অনেক বিষয়ই প্রকৃতি থেকে নেয়া।

আমি মনে করি প্রকৃতিই আমার ক্লাসরুম। আমি প্রকৃতি থেকে নিই, তবে হুবহু নয়। আমি প্রকৃতি থেকে এর নির্যাসটা নিয়ে আমার মতো করে একটা বলিষ্ঠ ফর্মের চিন্তা করি। স্বস্তি যেন ফিরে আসে এমন ছবিও উঠে আসছে তুলির আঁচড়ে। এ কারণে গ্রামবাংলার ছবিও আঁকছি, পাশাপাশি করোনার আগের সময়ের ছবিও আঁকছি। মাথায় সব ঘুরছে। এ ছাড়া একটু আধটু লেখারও চেষ্টা করছি। লেখাটা আমার স্বামী ভাস্কর হামিদুজ্জামানকে নিয়েই লিখছি। তিনি তার কাজ নিয়ে সারাজীবন কোথায় কোথায় ছুটোছুটি করেছেন, মূলত তাই নিয়ে লিখছি। এ ছাড়া ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজ থেকে শুরু করে বিখ্যাতদের জীবনী পড়ছি। তবে সময়টা নষ্ট না করে ছবি আঁকাটাই বেশি করছি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি সেভেনে পড়ছি। তখন লেখাপড়া বাদ দিয়ে আমরা এ থেকে সে গ্রাম ঘুরে বেড়াতাম। তখন এমন আতঙ্ক বোধ করিনি। আর এখন সারা পৃথিবীর বাচ্চারা লেখাপড়া থেকে অনেকটা ছিটকে পড়েছে। ভার্চুয়ালি তারা যে যেভাবে পারে আগাচ্ছে। এ অভিজ্ঞতা যেন সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য বিরাট অভিজ্ঞতা। যে অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। যে অভিজ্ঞতাটা একসঙ্গে সবাই শেয়ার করছি। এই একটা ভাইরাস সারা পৃথিবীর কষ্ট এক করে দিয়েছে।

আইভি জামান বলেন, করোনার মধ্য দিয়ে প্রকৃতি আমাদের একটা শিক্ষা দিল। প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের আচরণ ভালো করতে হবে। প্রকৃতি যাতে ভালো থাকে সে চেষ্টাই আমাদের সবাইকে করতে হবে। আমরা যাতে কোনো প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস না করি। সবাই এই পৃথিবীকে এসেছে জীবনটা বাঁচাতে। সে জীবনটা যেন স্বস্তিতে থাকে। এই পৃথিবীতে সবার অধিকার সমান। কীটপতঙ্গ প্রাণী এসবেরও বাঁচার অধিকার আছে। তাদের বিরক্ত করা যাবে না। এটা আমাদের অনুভব করতে হবে।

যেমন এই যে হাত ধোঁয়ার অভ্যাসটা আমার বরাবরেরই অভ্যাস। আমার বাবা ডাক্তার ছিলেন। ছোটবেলায় থেকেই তাকে দেখতাম সবসময় হাত মুখ ধুতেন। বাবার মতো আমারও সে অভ্যাস আছে। তবে এখন ডাবল করতে হচ্ছে, সারা জীবনে যা করিনি তা মনে হচ্ছে পুষিয়ে দিচ্ছি। কিছুক্ষণ পরপরই হাত পরিষ্কার করছি। আমার মতো সবাইকেও দেখছি, তা মানছে। তবু সংক্রমিত হচ্ছেই, কমছে না কিছুতেই। তবে আশা করছি কমে যাবে।

[caption id="attachment_228336" align="aligncenter" width="960"] বিশেষ মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইভি জামান[/caption]

করোনার কারণে আপনার চেনা পৃথিবীটার কতটা বদল ঘটেছে বলে মনে করছেন? আইভি জামান বলেন, কেবল আমার নয় সারা পৃথিবীর মানুষেরই জীবন আমূল বদলে গেছে। আমি আশাবাদী এটা ঠিক হয়ে যাবে। আগে বাইরে বেরুলে ধুয়ার দূষণ, ধুলার দূষণ নাকে লাগত, দম বন্ধ হয়ে আসত। এখন তা নেই। ফিরে এসেছে নির্মল বাতাস, সতেজ প্রকৃতি। সুন্দর নীলাকাশ। চারিদিকে ঘন সবুজ যেন আরো ঘন এবং সতেজ হয়ে উঠেছে। সত্যি বলতে কী আমরা পৃথিবীর সঙ্গে রাফ আচরণ করেছি। এর মধ্য দিয়ে আমাদের জীবনে একটা বড় শিক্ষা হলো। আমরা অপ্রয়োজনে কিছু করব না। যেটা করলে প্রকৃতির কষ্ট হবে বা প্রকৃতি দূষণ হবে এমন কাজ করব না। পাশাপাশি হাত ধোয়ার অভ্যাসটা যেন আমাদের সবার থাকে।

[caption id="attachment_228340" align="aligncenter" width="640"] আইভি জামানের সৃষ্টি[/caption]

বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে মনে করেন কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। হয়তো এক মাস দু’মাস থাকবে। তবে করোনাকে আমরা জয় করবই। এখন সেই গানটাই বেশি মনে পড়ছে-আমরা করব জয় একদিন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App