×

পুরনো খবর

চট্টগ্রামে ফুরিয়ে আসছে নমুনা পরীক্ষার কিট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২০, ১১:৩৯ এএম

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হটস্পট চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইসিইউ বেড, সাধারণ বেডের সংখ্যাও খুব সীমিত। তার ওপর করোনা শনাক্তে চট্টগ্রামের ল্যাবগুলোতে নমুনা পরীক্ষার কিটও ফুরিয়ে আসছে। সময়মতো কিট পাওয়া না গেলে আগামীকাল রবিবারের পর এখানকার প্রধান দুটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার ছুঁইছুঁই। এখানকার সরকারি চারটি এবং বেসরকারি দুটি মিলিয়ে মোট ছয়টি ল্যাবে করোনা ভাইরাস শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এসব ল্যাবে প্রতিদিনই নয়শ থেকে এক হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) এবং ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার কিট প্রায় শেষ। অন্য দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ল্যাবে যে পরিমাণ কিট মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আর মাত্র দুই থেকে তিন দিন পরীক্ষা চালানো যাবে।

বিআইটিআইডি ল্যাবের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ জানান, আমাদের কাছে সর্বশেষ ২৮৮টি কিট রয়েছে। যা দিয়ে আর মাত্র একদিন কাজ চালাতে পারব। রবিবারের জন্য আমরা ভিন্ন উপায়ে চিন্তা করছি। তবে পরীক্ষা বন্ধ রাখা যাবে না। কিট না আসা পর্যন্ত অন্য ল্যাব থেকে কিট এনে কাজ চালাব। চমেক ল্যাবের প্রধান আহসানুল হক কাজল বলেন, চমেকের ল্যাবে যে কিট রয়েছে তা দিয়ে শনিবার পর্যন্ত চালানো যাবে। নমুনা পরীক্ষার কিট চেয়ে ইতোমধ্যে ঢাকায় চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

সিভাসু ল্যাবের প্রধান অধ্যাপক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী বলেন, সিভাসু প্রতিদিন দেড় শতাধিক নমুনা পরীক্ষা করছে। সে হিসেবে আমাদের কাছে যে কিট আছে তা দিয়ে আরো কয়েকদিন পরীক্ষা চালানো যাবে। কারণ আমরা একটি কিট দিয়ে দুটি পরীক্ষা করছি। তবে এতে করে টেস্টে করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় করোনা ল্যাবের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মনিরুল ইসলাম জানান, শুক্রবার নমুনা পরীক্ষা শেষে তাদের কাছে আরো চার শতাধিক কিট থাকবে। এসব কিট দিয়ে আরো কয়েকদিন নমুনা পরীক্ষা করা যাবে।

এদিকে চট্টগ্রামে প্রতিদিনই করোনা রোগীদের মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। নানা জটিলতায় আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের জন্য এখানে নেই পর্যাপ্ত আইসিইউ বেড (ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের শয্যা)। সাধারণ শয্যার সংখ্যাও খুব সীমিত। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, করোনার হটস্পট চট্টগ্রামে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে আটটি হাসপাতালে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এসব হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা মাত্র ৬৯৭টি। সরকারি চারটি হাসপাতালের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ২০০টি, বিআইটিআইডিতে ৩২টি, জেনারেল হাসপাতালে ১৫০ এবং চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে ১০০টি শয্যা রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১০০টি, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ২৮টি, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে ৪৭টি এবং ফিল্ড হাসপাতালে আছে ৪০টি শয্যা। আক্রান্তের তুলনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক শয্যা না থাকায় এইসব হাসপাতালে রোগীর ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের জন্য চট্টগ্রামে আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ৩৫টি। তার মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মাত্র ১৬টি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ১৯টি। সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ছয়টি এবং জেনারেল হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড রয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে হলি ক্রিসেন্টে ১০টি, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ছয়টি এবং বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়ালে তিনটি আইসিইউ বেড আছে। এত অল্পসংখ্যক আইসিইউ বেড থাকায় মুমূর্ষু রোগীদের নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে স্বজনদের। আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পেয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার (২৬ জুন) দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৬০ জনের। শনাক্তকৃত মোট রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৪৬৬ জন। আক্রান্তের ৭০ ভাগই মহানগরীতে। বাকি ৩০ ভাগ বিভিন্ন উপজেলায়। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন মোট ৯০৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী। বৃহস্পতিবার রাতে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে চট্টগ্রামে নতুন করে আরো ২৪৬ জন করোনা ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। বয়স বিবেচনায় চট্টগ্রামে ২১ বছর থেকে ৪০ বছর বয়সীদের আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। মোট আক্রান্তের ২৭ শতাংশ ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২৪ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৮ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১৪ শতাংশ রোগী। তবে করোনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ৫১ বছরের বেশি বয়সী লোকজনের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App