×

জাতীয়

আইসিইউতে ট্রায়ালের অপেক্ষায় ৪টি নমুনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২০, ০৯:৪৪ এএম

আইসিইউতে ট্রায়ালের অপেক্ষায় ৪টি নমুনা

ফাইল ছবি

দেশে ভেন্টিলেটর তৈরির প্রচেষ্টায় এখনো চূড়ান্ত সফলতা না এলেও হাল ছাড়েননি গবেষকরা। বারবার ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধনের পর অন্তত ৪টি প্রটোটাইপ বা নমুনা এখন ক্লিনিক্যাল টেস্টের (মানুষের শরীরে স্থাপন করে পরীক্ষা) অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে যন্ত্রগুলো গ্যাস ফ্লো এনালাইজারসহ সব ধরনের যান্ত্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে সেগুলো বিশেষ সর্তকতায় হাসপাতালের আইসিইউতে ব্যবহার করা হতে পারে।

করোনার কারণে বিশ^জুড়ে ভেন্টিলেটরের সংকটের মধ্যে গত মার্চে বিশ^খ্যাত মেডিকেল পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মেডট্রনিক্স তাদের পিবি-৫৬০ মডেলের ছোট এক ধরনের ভেন্টিলেটরের নকশা, সফটওয়্যারসহ স্বত্ব উন্মুক্ত করে দেয়। মেডট্রনিক্সের প্রধান ওমর ইশরাক একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚ত মার্কিন নাগরিক। তিনি ইনটেলেরও চেয়ারম্যান। এরপর থেকে বিশে^র অনেক দেশই ভেন্টিলেটর তৈরির প্রচেষ্টা শুরু করে।

বাংলাদেশেও ভেন্টিলেটর তৈরির প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসে ওয়ালটন, মিনিস্টার, নিটল, আরএফএলসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহায়তা কেন্দ্রের (বিটাক) পাশাপাশি ব্যক্তিগত পর্যায়েও কয়েকজন ভেন্টিলেটর তৈরির উদ্যোগ নেয়। তবে যন্ত্রটি তৈরি করতে গিয়ে দিন-রাত চেষ্টার পরও সমস্যায় পড়তে হয় সবাইকে।

এ অবস্থায় নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বিনিময়ের জন্য ২০ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসে সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্প, এটুআই। এ প্রসঙ্গে এটুআইয়ের সমন্বয়কারী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ জুয়েল বৃহস্পতিবার (২৫ জুন)ভোরের কাগজকে জানান, আগে যন্ত্রটি তৈরি করতে গিয়ে নানা জায়গায় আটকে যাচ্ছিলেন গবেষকরা। কেউ হয়তো একটা যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করতে পারছিলেন না, যা আরেক জনের কাছে আছে। কারো একটু মেকানিক্যাল সমস্যা হচ্ছে, যার সমাধান অন্য কারো জানা। তাছাড়া হাসপাতালে মানবদেহের ওপর পরীক্ষার আগে অনেক প্রটোকল ও নিয়ম-কানুনের বিষয় আছে। আমরা এসব সমন্বয় করতে সবাইকে একই প্ল্যাটফরমে নিয়ে আসি। ফলে কাজ দ্রুত হয়।

যন্ত্রটি তৈরির সর্বশেষ অবস্থা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত আমরা ৪টি প্রটোটাইপকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য উপযুক্ত করতে পেরেছি। সেগুলোর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদকে (বিএমআরসি) চিঠি দেয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে এক বা একাধিক হাসপাতালের আইসিইউতে প্রটোটাইপগুলো পরীক্ষামূলকভাবে স্থাপন করা হবে। তিনি জানান, আইসিইউতে ডাক্তারদের সহায়তায় সেগুলো খুব সতর্কতার সঙ্গে রোগীর শরীরে স্থাপন করতে হবে। কোনো সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে যেন মূল ভেন্টিলেটর ব্যবস্থায় রোগীকে ফিরিয়ে আনা যায়, সেই প্রস্তুতি রাখা হবে। তবে কোন প্রতিষ্ঠানের প্রটোটাইপ উপযুক্ত হয়েছে বা কোন কোন হাসপাতালে তা স্থাপন করা হবে- তা জানাতে রাজি হননি তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এমআইএসটি, বিটাক, মিনিস্টার ও আমার সোর্সের তৈরি প্রটোটাইপগুলো এখন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এমআইএসটির প্রটোটাইপটি পরীক্ষা করা হতে পারে। মিনিস্টারের তৈরি প্রটোটাইপটি আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে পরীক্ষা করার কথা থাকলেও কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা করায় সেখানে আর তা হচ্ছে না। এখন অন্য কোনো হাসপাতালে ওই প্রটোটাইপটি পরীক্ষা করা হবে। জানা গেছে, ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার জন্য করোনা আক্রান্ত কোনো রোগীর শরীরে এসব ভেন্টিলেটর স্থাপন করা হবে না। সাধারণ শ্বাসকষ্টজনিত রোগীকে এগুলো দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে এমআইএসটির ল্যাবে অত্যাধুনিক গ্যাস ফ্লো এনালাইজার মেশিনের মাধ্যমে ১৮-২০টি প্রটোটাইপ দফায় দফায় পরীক্ষা করা হয়। সেগুলোর অক্সিজেন সরবরাহ ক্ষমতা, এয়ার প্রেশার, মেকানিক্যাল ফাংশন, সার্কিটে কোনো দুর্বলতা বা ত্রুটি আছে কিনা ইত্যাদি অনেক ধরনের পরীক্ষা করতে হয়েছে। এছাড়া কৃত্রিম ফুসফুসে স্থাপন করেও টানা ৮-১০ দিন যন্ত্রগুলোকে পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে কোনো কোনো যন্ত্রের ত্রুটি ধরা পড়েছে। এরপর সেগুলো আবার সংশোধন করা হয়েছে। এভাবে অন্তত ৩ বার সংশোধন ছাড়া কোনো যন্ত্রই ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার উপযুক্ত হয়নি।

এদিকে ওয়ালটন ৩টি মডেলের প্রটোটাইপ ডিজাইন করেছে। এগুলোও চ‚ড়ান্ত হওয়ার পথে বলে জানা গেছে। ওয়ালটনের কর্মকর্তা গোলাম মোর্শেদ জানান, মেডট্রনিক্সের ভেন্টিলেটরে এমন কিছু কম্পোনেন্ট ব্যবহার করা হয়, যা বিশে^র দুয়েকটি কোম্পানি ছাড়া অন্য কেউ বানায় না। আমরা মেডট্রনিক্সের সহায়তায় সেসব কম্পোনেন্ট আনার চেষ্টা করছি। খুব দ্রæতই ভেন্টিলেটর তৈরিতে দেশ সফল হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App