×

মুক্তচিন্তা

২০২০-২১ বাংলাদেশ বাজেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২০, ০৬:০১ পিএম

সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সুবিধা ছাড়া আধুনিক জীবনযাত্রা অসম্পূর্ণ ও অকল্পনীয়। করোনা প্রতিরোধে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মূল ভ‚মিকা, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও সেবিকারা মূল সেনানি। এখানে বিনিয়োগ হবে অর্থবহ এবং অবশ্য প্রয়োজনীয়। কেবল যন্ত্রপাতি ক্রয় নয়, যন্ত্রপাতির সহায়তায় সময়মতো স্বাস্থ্যসেবা প্রদানই লক্ষ্য। চিকিৎসক ও সেবিকাদের জ্ঞান ও সেবার উন্নয়ন হবে করোনা ও অন্য মহামারি থেকে আত্মরক্ষার প্রধান অস্ত্র।

(গতকালের পর)

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্য সুবিধা ছাড়া আধুনিক জীবনযাত্রা অসম্পূর্ণ ও অকল্পনীয়। করোনা প্রতিরোধে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মূল ভূমিকা, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও সেবিকারা মূল সেনানি। এখানে বিনিয়োগ হবে অর্থবহ এবং অবশ্য প্রয়োজনীয়। কেবল যন্ত্রপাতি ক্রয় নয়, যন্ত্রপাতির সহায়তায় সময়মতো স্বাস্থ্যসেবা প্রদানই লক্ষ্য। চিকিৎসক ও সেবিকাদের জ্ঞান ও সেবার উন্নয়ন হবে করোনা ও অন্য মহামারি থেকে আত্মরক্ষার প্রধান অস্ত্র।

আগামী ১০-১৫ বছরে একটি ইউনিয়নের লোকসংখ্যা পৌঁছবে ৫০ থেকে ৭০ হাজারে। জনগণের চিকিৎসাসেবা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য ৬ ফুট উঁচু, ৮০০ অধিক রানিং ফুটের নিরাপত্তা বেষ্টনী, গভীর নলকূপ ও ইলেকট্রিসিটির ব্যবস্থা, সঙ্গে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিচালকের জন্য ১ হাজার বর্গফুটের বিনা ভাড়ায় পারিবারিক বাসস্থান, মেট্রন, একজন দন্ত চিকিৎসক, একজন ফিজিওথেরাপিস্ট, একজন ফার্মাসিস্ট, দুজন নবীন চিকিৎসক ও দুজন ইন্টার্ন চিকিৎসকের জন্য ৬০০ বর্গফুটের ৮টি ফ্রি বাসস্থান, মেডিকেল, ডেন্টাল, নার্সিং, ফিজিওথেরাপি ছাত্র ও টেকনিশিয়ানদের জন্য ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, বিনোদন কক্ষ, ডাইনিং রুম, টয়লেট সুবিধাসমেত ৪ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ডরমিটরি এবং ২০ শয্যার ইনডোর হাসপাতাল, চিকিৎসকের চেম্বার, প্যাথলজি, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম ও ছোট অপারেশন কক্ষ বাবদ ৫ হাজার বর্গফুট স্থাপনা হবে জনগণকে দেয়া বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্য সুবিধা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি রক্ষার প্রমাণ।

যেসব চিকিৎসা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সম্ভব হবে না সেগুলো রেফার হবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসকরা কমিউনিটি ক্লিনিকেও প্রতি সপ্তাহে চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন, স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী ও ধাইদের ক্রমাগত আধুনিক চিকিৎসা তথ্য জ্ঞাত করাবেন। তদুপরি তারা মেডিকেল ও অন্য ছাত্রদের শিক্ষাদানের দায়িত্ব পালন করবেন, যার জন্য একটা শিক্ষকতা ভাতা (Teaching Allowance) পাবেন। তিন মাস মেয়াদি কোনো একটা সার্টিফিকেট অধ্যয়ন ও পরীক্ষা দিয়ে জুনিয়র বিশেষজ্ঞ পদে উন্নীত হবেন। কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত ভাতা পাবেন। বিনা ভাড়ায় বাসস্থান সুবিধা পাবেন। গ্রামবাসীদের নিরন্তর চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য চিকিৎসকদের জন্য জনগণের পুরস্কার। সব সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল, ডেন্টাল ও নার্সিং কলেজ এক বা একাধিক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে উন্নত মানের চিকিৎসাসেবা প্রদানের অংশ হিসেবে। ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধ ও দরিদ্র শ্রেণির সঙ্গে পরিচিতি দেশপ্রেমের অংশ এবং শিক্ষাদানের প্রধান হাতিয়ার।

৩. স্বাস্থ্য খাতের অন্য মৌলিক সংস্কার প্রায় ১ লাখ ব্যক্তি কারাবন্দি আছেন, জেল হাসপাতাল দুর্নীতির আখড়া এবং চিকিৎসক স্বল্পতা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। দেশের রাজনৈতিক নেতারা, আমলা, ব্যবসায়ীদের ভরসা সামরিক বাহিনীর হাসপাতাল সিএমএইচ, সব কারাগার, পুলিশ, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আনসার ও বর্ডার গার্ড, হাসপাতালগুলো সরাসরি Army Medical Corps (AMC) কর্তৃক পরিচালিত হলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, চিকিৎসকের অভাব হবে না। অগঈ হবে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, সব চিকিৎসক, সেবিকা ও টেকনিশিয়ানের পদবি হবে সামরিক বাহিনীর- অগঈ-এর। তারা সুযোগ-সুবিধা বেশি পাবেন। তাই তাদের কাজে থাকবে প্রশান্তি ও আনন্দ এবং সময়মতো পেশাতে অগ্রগতি। বেসামরিক অনেক সরকারি হাসপাতাল বর্তমানে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে অগঈ চিকিৎসকদের দ্বারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্য ও পরিবারবর্গ সামরিক বাহিনীর সমান সুযোগ পাবেন। সামরিক বাহিনীর মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নরতরা এমবিবিএস পাস করে ৫ বছর অগঈ-তে চাকরি করতে বাধ্য থাকবেন, নতুবা ক্ষতি পূরণ দেবেন ৩০ লাখ টাকা।

৪. ঢাকা শহরে জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স ও রেফারেল পদ্ধতির প্রবর্তন ঢাকা শহরে ১০০ ওয়ার্ডে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ বাজেটে জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স (GP) ও রেফারেল পদ্ধতির জন্য ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিন। ২ কোটি নগরবাসীর জন্য খুব বেশি বরাদ্দ নয়। ঢাকা শহরের সব জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স সেন্টারে চিকিৎসকের কাছে লিপিবদ্ধ নাগরিকরা বিনা ফিতে পরামর্শের পাশাপাশি ইসিজি, অক্সিজেন-পালস অক্সিমিটার ও নেবুলাইজার সুবিধা, ফার্মেসি, ছোট ল্যাব, এএনসি-পিএনসি ও ফিজিওথেরাপি সুবিধা পাওয়া যাবে। অতিরিক্ত থাকছে স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্কুল স্বাস্থ্য কার্যক্রম ও হোমভিজিট বাড়িতে গিয়ে রোগী দেখা এবং প্রেসক্রিপশন অডিট ব্যবস্থাপনা। অতিরিক্ত ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার অপচয় বটে, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরও বটে।

৫. পুষ্টি ব্যতীত স্বাস্থ্য অকল্পনীয় দেশে ২ কোটি দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারকে করোনা উদ্ভ‚ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আগামী ৬ মাস ফ্রি রেশন দেয়া সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। ৪-৬ জনের পরিবারের জন্য প্রতি মাসে চাল ২০ কেজি, আটা ৫ কেজি, আলু ১০ কেজি, সরিষার তেল ১ লিটার, সয়াবিন তেল ১ লিটার, পেঁয়াজ ১ কেজি, মসুর ডাল ২ কেজি, আদা ২০০ গ্রাম, রসুন ২০০ গ্রাম, শুকনো মরিচ ২০০ গ্রাম, লবণ ১/২ কেজি, চিনি ১/২ কেজি ও সাবান ২টিসহ মোট খাদ্য প্যাকেট ব্যয় হবে অনধিক ২ হাজার টাকা। ফ্রি খাদ্য রেশনে কেন্দ্রীয় সরকারের মাসিক ব্যয় মাত্র ৪ হাজার কোটি টাকা। খাদ্য গুদামে স্থান বাড়বে, যা কৃষকের শস্য উৎপাদনে আকর্ষণ বাড়াবে।

৬. অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস সামাজিক বৈষম্য নিরসনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ক) নিত্য নতুন সিনিয়র সচিব সৃষ্টি কাম্য নয়, কোনো আমলাকে চাকরিতে এক্সটেনশন দেয়া অনভিপ্রেত। এরা রাজনীতিবিদদের প্রতিপক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনবিরোধী, সুখের পায়রা, জনগণ বিচ্ছিন্ন। জনগণের স্বার্থের চেয়ে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি এবং জবাবদিহিতাহীন প্রশাসনে এদের বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে। খ) ইনসপেক্টার থেকে ওএচ, ক্যাপ্টেন থেকে জেনারেল, সেকশন অফিসার থেকে সিনিয়র সচিব, লেকচারার থেকে উপাচার্য, করপোরেট কর্মকর্তা, ব্যাংকার, বিচারক থেকে বিচারপতি, সাংসদ, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের আগামী এক বছর ২০ শতাংশ বেতন ও ভাতা হ্রাস করা হবে করোনা সৃষ্ট পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য এবং দেশের সার্বিক অধিক অবস্থার বিবেচনায় যৌক্তিক কার্যক্রম। এক শ্রেণির নাগরিক তারা প্রাচুর্যে জীবনযাপন করবেন আর শ্রমিকরা অর্ধাহারে কালাতিপাত করবেন, তা সভ্য নয়। গ) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া সব প্রাইভেট বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রদের টিউশন ফি ২৫ শতাংশ হ্রাস বাঞ্ছনীয়। ঘ) সরকারি অর্থায়নে বিদেশে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন না সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট বা অন্য কোনো নাগরিক। সবাইকে নিজ দেশে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। ঙ) ক্ষতিপূরণ ব্যতিরেকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার কুইক রেন্টাল ২০২০ বাজেট থেকে প্রত্যাহার, দেশবাসী আর কতদিন ব্যবসায়ীর হাতে প্রতারিত হবেন। মেগা প্রকল্পের লাগাম কিছুদিন ধরে রাখুন। চ) জনপ্রশাসন (আমলাতন্ত্রের) বিভাগের ব্যয় ৫০ শতাংশ হ্রাসের ব্যবস্থা নিন। ছ) প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীসহ সব ভিআইপির নিরাপত্তা ব্যয় ৫০ শতাংশ কমানো হলে পুলিশ ও এলিট ফোর্সের সদস্যরা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অধিক মনোযোগ দেয়ার সুযোগ পাবেন, খুন-খারাবি কমবে এবং রাহাজানি, ছিনতাই, পথে-ঘাটে যৌন নিপীড়ন হ্রাস পাবে, সফলতার জন্য পুলিশ পুরস্কৃত হবেন। পুলিশ হবেন জনগণের সত্যিকারের বন্ধু। জ) মাদ্রাসা শিক্ষায় এত বেশি বিনিয়োগ কি পর্যাপ্ত ‘ডিভিডেন্ড’ দিচ্ছে? অধিক হারে মসজিদভিত্তিক বেকার সৃষ্টি নয় কি? বিজ্ঞান শিক্ষাকে মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করে সব সম্প্রদায়ের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মসজিদকে কি প্রাক স্কুল হিসেবে ব্যবহার করা যায়? ঝ) ব্যয় হ্রাসের অজুহাতে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই চলবে না।

৭. রাষ্ট্রের আয় বৃদ্ধি উন্নয়নের জন্য অত্যাবশ্যক ক) দেশে বর্তমানে মাত্র ২২ লাখ ব্যক্তি আয়কর নিবন্ধিত আছেন। এটা হতে হবে কমপক্ষে ১ কোটি। ফেরিওয়ালা, নিরাপত্তা প্রহরী, চাওয়ালা, ছোট দোকানদার, ভ্যান-রিকশা-কার-বেবিট্যাক্সি ড্রাইভার ও ফুটপাতের ফল ও হোটেল মালিক, সিগারেটের দোকানদার, সবজিওয়ালা, সরকারি-বেসরকারি নিম্নশ্রেণির কর্মচারী, কিন্ডারগার্ডেন শিক্ষক, অনভিপ্রেত কোচিং সেন্টার মালিক সবাইকে নিবন্ধিত হতে হবে। গৃহকর্মীদেরও নিবন্ধিত হতে হবে তবে গৃহকর্মীদের নিবন্ধন ফি দেবেন গৃহকর্ত্রীরা। বার্ষিক নিবন্ধন ফি ১ হাজার টাকার, বিনিময়ে পাবেন পুলিশের হয়রানি থেকে রক্ষা এবং ব্যাংক, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স পরামর্শ ও ফ্রি স্বাস্থ্য সুবিধা, কতক ওষুধ ও বড় হাসপাতালে পূর্বাহ্নে নির্ধারিত রেফারেল সুবিধা। সরকারের আয় বাড়বে ১ হাজার কোটি টাকা। খ) আয়করমুক্ত করসীমা : ৫ লাখ টাকা আয়করমুক্ত করসীমা ৩.৫০ লাখের পরিবর্তে ৪.৫ লাখে নির্ধারণ করুন, বয়োবৃদ্ধ ও বিধবাদের জন্য অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা। বয়োবৃদ্ধদের ব্যক্তি স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় অত্যাধিক, যৌক্তিক আয়কর হবে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ। ব্যাংক ও করপোরেট ট্যাক্স ন্যূনতম ৪৫ শতাংশ নির্ধারিত থাকা বাঞ্ছনীয়। সঙ্গে বাধ্যতামূলক বিনিয়োগ শর্তও থাকবে। গ) সিগারেট, বিড়ি, জর্দা ও গুল এবং প্রসাধনীর মূল্যবৃদ্ধি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, পরিবেশের জন্য অমঙ্গলকর ধূমপান, জর্দা, পানসেবন, মাদকাসক্তি অপ্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন এবং ক্ষতিকর প্রসাধনী উৎপাদন ও বিপণন হ্রাস করার জন্য ১০০ ভাগ শুল্ক ধার্য যৌক্তিক উদ্যোগ। হাটবাজার, ট্রেন, বাসস্টেশন, পার্ক, লঞ্চ ঘাটে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়, ব্যত্যয় ঘটলে প্রতিবার জরিমানা হবে ১০০ টাকা, অর্জিত জরিমানা অর্ধেক পাবে পুলিশ, বাকি টাকা যাবে সরকারি তহবিলে। পানের পিক ফেললেও জরিমানা হবে, পার্কে, বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে পান সেবন দৃষ্টিকটু, স্বাস্থ্য ক্ষতিকর। ঘ) যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ও রোড ট্যাক্স বাড়ান দেশে প্রায় ৪৪ লাখ যানবাহন আছে, তন্মধ্যে ৫০ হাজার বাস, ১৫৩ হাজার ট্রাক, ৩ লাখ অটোরিকশা, প্রায় দেড় লাখ ‘কাভার্ড ও উন্মুক্ত’ ভ্যান এবং পিকআপ, ৩০ লাখ মোটরসাইকেল, জিপ ৬৫ হাজার, মাইক্রো ও মিনিবাস ১৩৫ হাজার, প্রাইভেট প্যাসেঞ্জার কার ৩৬০ হাজার, সামরিক যানবাহন হিসাব প্রকাশ্য জ্ঞাত নয়। সব সরকারি-বেসরকারি মোটরযান ও মোটরগাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ান, বার্ষিক রোড ট্যাক্স হওয়া উচিত ন্যূনতম ১ লাখ টাকা তবে মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা পর্যাপ্ত। সরকারি-বেসরকারি পাবলিক ট্রান্সপোর্টের রোড ট্যাক্স বৃদ্ধি বাঞ্ছনীয় নয়। আইনশৃঙ্খলা ও সামরিক বাহিনীর সব যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক এবং রোড ট্যাক্স হবে বেসামরিক যানবাহনের সমতুল্য। কৃষি যানবাহন, ট্রাক্টর রেজিস্ট্রেশন ও রোড ট্যাক্সের আওতায় আসবে। সব সরকারি-বেসরকারি কোম্পানির প্রত্যেক যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ফি প্রতি ৫ বছরে ১ লাখ টাকার অনধিক হওয়া বাঞ্ছনীয় হবে না, সমহারে বার্ষিক রোড ট্যাক্স বাড়বে। ঙ) কোর্ট ফি বৃদ্ধি কোর্টে নৈরাজ্য কমাবে কোর্টে নৈরাজ্য চলছে, লাগাম টেনে ধরার সময় এসেছে। ন্যূনতম কোর্ট ফি উচিত হবে ৫ হাজার টাকা, তিনবারের অতিরিক্ত প্রতিবার সময় প্রার্থনার জন্য বাধ্যতামূলক ফি হবে ৫ হাজার টাকা, শাস্তিমূলক কোর্ট ফি জমা দেয়ার পর নতুন তারিখ পাবেন। এক বছরের মধ্যে সমস্যার নিষ্পত্তি না হলে প্রতিবার ১০ হাজার টাকা কোর্ট ফি জমা দিতে হবে। সরকার পাবেন ৫০ ভাগ এবং প্রতিপক্ষ পাবেন ৫০ ভাগ। এতে অনাকাক্সিক্ষত মামলা কমবে। চ) কয়েকটি শুল্ক বৈষম্য ও ছাপার ভ‚ত স্বাস্থ্যের জন্য অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকর সব প্রকার মিনারেল ওয়াটার, বিয়ার, ভরমুথ, স্কচ, স্পিরিট, ইথাইল অ্যালকোহল, এক্সটাক্ট, এসেন্স, চিনি, লবণ, চুরুট, রিকনসটিউটেড তামাক, টেস্টিং সল্টস, (মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট), রোস্টেড কফি, নন-অ্যালকোহলিক এনার্জি ডিংকসের শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা হবে যৌক্তিক কাজ। রাষ্ট্রের আয় বৃদ্ধি হবে এবং নাগরিকদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে, স্থ‚লতা কমবে, উচ্চ রক্তচাপ ও বহুমূত্র সম্ভাবনাও কমবে। ওষুধের কাঁচামাল আমদানির ওপর কয়েক ধরনের শুল্কহার আছে। এন্টিবায়োটিকের জন্য দুটি দর- সব পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, টেট্রাসাইক্লিন ও ক্লোরাম ফেনিকল শূন্য শতাংশ, এজিত্রিমাইসিন ও ইরিত্রোমাইসিনে ১৫ শতাংশ অযৌক্তিক। সব এন্টিবায়োটিকের জন্য একটি শুল্ক দর থাকা বাঞ্ছনীয়, যাতে কাস্টমস হাউসে দুর্নীতির দরাদরি না হয়।

শেখ মুজিবুরের স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং করোনার সঙ্গে যুদ্ধ ব্যয় অনতি বিলম্বে করণীয় বিষয়গুলো- ১. গভর্নর নিয়োগ ও সংবিধান সংস্কার : ৬৪ জেলা স্টেট কমিশন ও গভর্নর নিয়োগ এবং ৬ মাসের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে শেখ মুজিবুরের স্বপ্নের বাস্তবায়ন শুরু করুন। ২. খাদ্য নিরাপত্তা : ২ কোটি দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারকে ৬ মাস ফ্রি মাসিক খাদ্য রেশন সুবিধা দিন, যাতে প্রতি পরিবারের জন্য ব্যয় হবে ২ হাজার টাকা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে ২০০ টাকা অনধিক এবং শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও প্রসূতির ডিম, দুধ খাওয়ার জন্য ৫০০ টাকা ক্যাশ ওহপবহঃরাব, ঘএঙ সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রত্যেক বাড়ির সবজি বাগান সৃষ্টিতে সহযোগিতাদান। ৩. সঠিক নিবন্ধন : দুর্নীতি থেকে উত্তরণ, গবেষণা ও তদারকির জন্য ইওউঝ ও অন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয় অনুদান। ৪. কৃষিতে ব্যাপক বিনিয়োগ : ব্যাপক কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টির পাশাপাশি রপ্তানিও সম্ভব। বেসরকারি খাতে কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ, ডেইরি ও পোল্ট্রির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সুদবিহীন ব্যাপক সরকারি বিনিয়োগ তদারকি করবে ঘএঙ। ৫. তৃণমূল স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ আবশ্যক : (ক) করোনা প্রতিরোধের জন্য- ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নিরাপত্তা বেষ্টনীর, চিকিৎসক ও অন্যদের বাসস্থান, ডরমিটরি এবং ২০ শয্যার হাসপাতাল ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহে ব্যয়। (খ) ঈড়ৎড়হধ জরংশ অষষড়ধিহপব. (গ) চিকিৎসকদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন বিষয়ে ৩-৬ মাস মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স প্রবর্তন করুন এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ। সার্বক্ষণিকভাবে ন্যূনতম ২ বছর অবস্থানের পর বিশেষ প্রশিক্ষণ ও ভাতা পাবেন। ৬. ঢাকা শহরের ১০০টি ওয়ার্ডে জেনারেল প্র্যাকটিশনার্স ও রেফারেল পদ্ধতির প্রচলন। ৭. সিএমএইচ, কারাগার হাসপাতাল, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাসপাতালের সংযুক্তিকরণ এবং সামরিক মেডিকেল কোরের নিয়ন্ত্রণাধীনে আনা নতুন আধুনিক ব্যবস্থাপনার অংশ। ৮. প্রবাসী দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একত্রে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও আফ্রিকা পরিভ্রমণ প্রয়োজনে অভিবাসীদের আর্থিক সাহায্যদান। ৯. বয়োবৃদ্ধদের চিকিৎসা সেবা এবং স্কুল স্বাস্থ্য কার্যক্রম। ১০. যৌন নিপীড়ন নিবারণে ও যানবাহনে নারীর নিরাপত্তাদানের জন্য ঠওচ ডিউটি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত এলিট পুলিশ ও সামরিক সদস্যদের নতুন দায়িত্ব দিন পথে-ঘাটে, যানবাহনে, হাটে-বাজারে নারীদের নিরাপত্তাদান ও যৌন নিপীড়ন নিবারণ, নারী নির্যাতন ও যৌন নিপীড়ন অবসানের ভূমিকা রাখার জন্য মাদ্রাসা, মসজিদ ও অন্য শিক্ষকদের মানবিক উন্নয়ন প্রকল্প নিন, শহরে গ্রামে শত শত পথনাটক পরিচালিত হলে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সহজ হবে। নারী নির্যাতিত হলে রাষ্ট্র ও জাতির মর্যাদা হয় না। যৌন নিপীড়নের চেয়ে বড় কোনো ন্যক্কারজনক ঘটনা নেই। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে বিশেষ অনুদান। এসব খাতে বিশেষ বরাদ্দ লাগবে সর্বমোট ১ লাখ ৯২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ দাবি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অন্যায় আবদার নয়। ন্যায্য অধিকার আদায়ের অংশ। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর উন্নয়নই শেখ মুজিবুরের স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং তা হবে তার জন্মশতবার্ষিকীতে শ্রেষ্ঠ শ্রদ্ধার্ঘ্য। জয় হোক জনতার।

(সমাপ্ত)

জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী : চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা; গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App