×

অর্থনীতি

স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়তে পারে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২০, ০৯:৪৪ এএম

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। মানুষের জীবন বাঁচাতে করোনা মোকাবিলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারও বিষয়টি চ‚ড়ান্ত বাজেটে বিবেচনা করার চিন্তা করছে। এছাড়া কর ও ভ্যাট কাঠামোতে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না। আগামী ৩০ জুন জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পাস হবে। জানা গেছে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও করোনা মোকাবিলায় এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ কর ছাড় দেয়া হয়েছে। যদিও মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটভিত্তিক সেবার ক্ষেত্রে কিছুটা ভ্যাট ও ট্যাক্স ও বেড়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে মোবাইল ব্যবহারের ওপর কর কমানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। নিত্যপণ্য চাল, চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ এবং লবণের মতো অতিপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। এদিকে, কর ছাড়ের বাজেট হওয়ায় অর্থায়ন ও বাস্তবায়নে কিছুটা চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত রয়েছেন। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে মানবিক বাজেট আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, এবারের বাজেটে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়, মানুষকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মানুষ না থাকলে বাজেট কার জন্য? করোনার সংক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচাতেই হবে। অন্যবার আমরা রাজস্ব আয়ে বেশি নজর দেই। কিন্তু এবার আগে খরচ করব। মানুষকে বাঁচাব। পরে আয়ের চিন্তা। এটা একই সঙ্গে অর্থনৈতিক এবং মানবিক বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে সবচেয়ে অগ্রাধিকার পাওয়া খাত উল্লেখ করে উন্নত স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য মোট ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বাজেটের বড় একটি অংশ ১৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা খরচ হবে পরিচালন ব্যয়ে। বাকিটা মূলত ব্যয় হবে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে। প্রসঙ্গত, আগামী অর্থবছরের বাজেটে মোট ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। যা বিদায়ী বছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৩ ভাগ বেশি। এরমধ্যে পরিচালন ব্যয়েই চলে যাবে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে উন্নয়নে। কোভিড-১৯ পরবর্তী উত্তরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সময়ে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। করোনায় বিপর্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন বাজেটে স্বস্তিদায়ক কর-ভ্যাট নীতি অবলম্বন করা হয়েছে। নাগরিকদের ওপর করের বোঝা চাপানো হচ্ছে না। বড় অঙ্কের বাজেট ঘাটতি মেটানো ও ব্যয় সামাল দিতে বিদেশি সহায়তা ও ঋণ নেয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। বিড়ি ও সিগারেটের মতো জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক পণ্যের ওপর কর ও ভ্যাট বাড়ানো, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের করমুক্ত আয়সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকার করার প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া বাজেটে করোনার মতো ভাইরাসজনিত রোগবালাই মোকাবিলা ও সুচিকিৎসায় স্বাস্থ্য খাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের কর্মসূচি রয়েছে। এসব বিনিয়োগে সহজ শর্তের ঋণ ও দীর্ঘমেয়াদে কর অবকাশ সুবিধা দেয়া হবে। খাদ্যপণ্য আমদানি ও উৎপাদনে এবার কর ছাড় দেয়া হবে। জানা গেছে, আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা এক রকম অসম্ভব বলে মনে করছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। রাজস্ব আদায় সফল করতে রাজস্ব খাতের প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার ও কর ফাঁকি রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তারা। এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, টাকা শুধু চাইলে হবে না, তা সংগ্রহ করতে হবে। আর তার জন্য অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামগ্রিক পরিবেশ ঠিক থাকতে হবে। এ বছর যে ট্যাক্সগুলো দেয়া হবে, সেটা ইনকাম ট্যাক্সের ক্ষেত্রে আগামী বছর কম হবে। এর মূল কারণ, ব্যাংকগুলো প্রফিট করেনি। অন্যান্য করপোরেট খাতেরও প্রফিটের সম্ভাবনা নেই। এই প্রেক্ষাপটে আগামী বছর ৩৬ শতাংশ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আমার কাছে বোধগম্য নয়। আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ভরসা করা হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর বা মুসক-এ। মুসক থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। আয়কর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা, শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ২০ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার ৬৮ শতাংশই আশা করা হচ্ছে পরোক্ষ কর থেকে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডির) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অপ্রত্যক্ষ করের চাপ সাধারণ মানুষের ওপরেই বেশি পড়ে। এটা আদায় করা সহজ। তবে কর ফাঁকি রোধের কৌশল নির্ধারণই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। প্রত্যক্ষ কর আদায়ের বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারি করা প্রয়োজন। করোনা মোকাবিলায় গুরুত্ব : করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তাবিত বাজেটে চারটি কৌশল নেয়া হয়েছে। এর বাইরে করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও জীবন বাঁচাতে বাজেটে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। শুধু করোনা মোকাবিলায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করবে সরকার। আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হবে। তখন করোনা চিকিৎসা আরো সহজ হবে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাজেটের বাইরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া করোনা থেকে জীবন বাঁচাতে নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুক‚লে ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দসহ আরো ১২ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এদিকে, করোনা মোকাবিলায় চারটি কৌশল হচ্ছে- সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কর্মসৃজনকে প্রাধান্য ও বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রবর্তন এবং দেশে-বিদেশে উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো। তৃতীয় কৌশলটি হলো হতদরিদ্র ও কর্মহীন জনগণকে সুরক্ষা দেয়া ও বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানো। তবে এ কৌশলটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করা হচ্ছে যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। জানা গেছে, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগ খাতে নতুন অর্থবছরে প্রায় ১২ হাজার জনবল নিয়োগ করা হবে। এছাড়া করোনা ঝুঁকি মোকাবিলায় দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আরো দুটি প্রকল্প নেয়া হবে। ভাইরাসজনিত রোগ নির্ণয় ও এ সংক্রান্ত গবেষণার লক্ষ্যে ৩০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App