×

সারাদেশ

যমুনার চরাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২০, ১১:১৭ এএম

যমুনার চরাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ

ফাইল ছবি

গত কয়েকদিনের অবিরাম বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে সিরাজগঞ্জের যমুনার চরাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্নের ফসল। চলতি মৌসুমে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করা কৃষকদের সেই স্বপ্ন এখন ভেঙে গেছে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায়।

জেলার চরাঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে চরের শত শত হেক্টর জমির পাট, তিল, বাদাম, ভুট্টা, আউশ, কাউন, আখ ও সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে থাকা এসব ফসল পচতে শুরু করেছে। এ কারণে পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই ফসল কাটতে শুরু করেছেন অনেক কৃষক। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন অন্যের জমি বর্গা ও চড়া সুদে টাকা নিয়ে চাষাবাদ করা চাষিরা। হঠাৎ নদীতে পানি আসায় তা কৃষকদের মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঠেছে।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জে ৯৫৫ হেক্টর পাট, ৩৭১ হেক্টর তিল, ১০ হেক্টর ভুট্টা, ৫৫ হেক্টর আউশ, ২৩ হেক্টর সবজি, ১৭ হেক্টর কাউন, ৭৮ হেক্টর আখসহ মোট ১ হাজার ৫০৯ হেক্টর জমি নিমজ্জিত হয়েছে। এতে কৃষকের ৫০ ভাগ ক্ষতি হবে।

সদর উপজেলার মেছড়া ইউনিয়নের কৃষক আমজাদ হোসেন (৫৫), আমিনুল ইসলাম (৪৫) ও মগবুল হোসেন বলেন, প্রতিবারের মতো আমরা চলতি মৌসুমে ৬ একর জমিতে পাট, তিল, আউশ চাষ করেছি। এক সপ্তাহের বৃষ্টিপাতে নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে আমাদের অধিকাংশ জমির ফসল, যা এখনো পরিপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। অপরিপূর্ণ ফসলগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা উৎপাদন নিয়ে চিন্তিত। পানিতে তলিয়ে থাকা কিছু অংশের ফসল কাটতে শুরু করেছি, যা থেকে অর্ধেক পাটও উৎপাদন হবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে।

সদর উপজেলার মেছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ জানান, যমুনায় হঠাৎ পানি বাড়ায় বেশ কিছু ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি দ্রুত নেমে না গেলে ফসল ঘরে তুলে নেয়াও সম্ভব নয়। এর ওপর চলছে নদীভাঙন। চরাঞ্চলের মানুষ চরম বিপাকে দিনাতিপাত করছেন। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করেছি।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, দ্রুতগতিতে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় নদীর পানি হ্রাস বা বৃদ্ধি পায়নি। তবে আশা করা হচ্ছে পানি আর বৃদ্ধি পাবে না। দুয়েক দিনের মধ্যে হ্রাস পেতে পারে। প্রতিনিয়ত নদীর তলদেশ সার্ভে করছি, যাতে কোথাও কোনো ত্রু টি থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতে পারি। বাঁধগুলোর অবস্থা ভালো আছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডি) মো. হাবিবুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির পানিতে জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ৩০টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ১ হাজার ৫০৯ হেক্টর জমি নিমজ্জিত হয়েছে। ফসল বেশিদিন পানিতে থাকলে গোড়া পচে গাছ মরে যাবে। তবে দ্রুত পানি নেমে গেলে গাছ বেঁচে যাবে ও উৎপাদন স্বাভাবিক হবে। কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক কৃষকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App