×

সারাদেশ

করোনাকালে বন্যার অস্বস্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২০, ১০:০১ এএম

বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা ভাইরাসের তাণ্ডবে দিশেহারা দেশবাসী। এরই মধ্যে নতুন আশঙ্কার নাম বন্যা। বন্যায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। সঙ্গে মারাত্মক নদী ভাঙনের কবলে পড়বে বিভিন্ন নদনদী সংলগ্ন শহর-গ্রাম-জনপদ এমনটাই মনে করছেন পানি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, করোনার মধ্যে বন্যা মোকাবিলায় অস্বস্তিতে পড়বে সরকার। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। বন্যা ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়াতে পারে পার্বত্য এলাকা, হাওর ও উত্তরাঞ্চলের রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা। চলতি মাসের শেষে যমুনা নদী এলাকা অর্থাৎ দেশের মধ্যাঞ্চলে বন্যা হতে পারে। তারা বলছেন, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারাদেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে পার্বত্য এলাকায়। ফলে এখনই পার্বত্য ও হাওর এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। এবার চার অববাহিকায়ই বন্যার আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলা হয়, এটি তিন দফায় হতে পারে। উল্লেখ্য, দেশে সাধারণত চারটি অববাহিকায় বন্যা হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, মেঘনা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য অববাহিকা। আমাদের এখানে বন্যার উৎস মূলত দুটি। দেশের অভ্যন্তরে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানি। উদ্বেগের বিষয় হলো, ইতোমধ্যে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার মে মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। অন্যদিকে উজানের ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে নিয়মিত ৫০ থেকে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা দেশে বন্যার আশঙ্কা করছেন। বর্তমানে করোনা ভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বন্যার প্রাদুর্ভাব যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দেবে, তা বলাই বাহুল্য। টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের প্রধান নদনদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। যমুনার পানি বেড়ে ইতোমধ্যে গত ৩২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় জুন মাসে যমুনায় যে পরিমাণ পানি ছিল এবার তার চেয়েও বেশি পানি বেড়েছে। এতে সেই ’৮৮ সালের চেয়েও ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা, মেঘনা, কংসসহ অন্যান্য নদনদীর পানিও বাড়ছে। গত মে মাসে দেশে গড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৭ ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। জুন-জুলাই-আগস্টেও সম্ভাবনা অতিবৃষ্টির। তাছাড়া পরপর এই তিন মাসেই বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি নিম্নচাপের আভাস রয়েছে। ফলে দেশে অধিক বৃষ্টিপাত হবে। এ মুহূর্তে বঙ্গোপসাগরে রয়েছে ঘনঘোর মেঘমালা। পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, এ সময়ে ভারি বৃষ্টিপাত এবং নদনদীর পানি বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। তবে উজানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবিরাম ভারি বর্ষণ হলে গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, মেঘনা অববাহিকায় একযোগে পানি বাড়ে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাংলাদেশে বন্যার সৃষ্টি হয়। এবারও সে রকম বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এ জন্য সার্বিক প্রস্তুতি থাকতে হবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো যথাযথ মেরামত করতে হবে। যে বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে তা মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবশ্যই আগাম প্রস্তুতি থাকতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক আবদুল লতিফ জানান, যমুনা নদীতে পানি ক্রমশ বাড়ছে। ওই এলাকার বিভিন্ন বাঁধ হুমকির মুখে। এলাকাবাসীর মতে, এ যাবৎ বাঁধ নির্মাণে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয়েছে তা কাঁচাটাকায় বা কয়েন করে বস্তায় ভরে যমুনা নদীতে ফেললে যমুনা নদীই ভরে যেত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান বলেন, এখন তো দেশের অনেক এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। নদীর পানিও বাড়ছে। এর মধ্যে কোনো কোনো জায়গায় পানি বেড়ে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে মধ্যমেয়াদি বন্যা চলতি মাসের শেষেই হতে পারে। তিনি বলেন, সামনের কয়েকদিনের মধ্যেই পার্বত্য এলাকা, হাওর ও উত্তরাঞ্চলের রংপুর, লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর কারণে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বন্যার আশঙ্কা আছে। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাসহ আশপাশের এলাকা অর্থাৎ মধ্যাঞ্চলসহ যমুনা নদীর এলাকায় এ মাসের শেষের দিকে বন্যার শঙ্কা রয়েছে। করোনা ভাইরাসের মধ্যে বন্যা মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় যে ধরনের প্রস্তুতি থাকা দরকার আমাদের তা রয়েছে। দেশের খাদ্য চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ লাখ টন খাদ্য মজুত থাকলে যথেষ্ট। সেখানে আমাদের রয়েছে ১৩ লাখ টনের চেয়েও বেশি। তাই মনে করি বন্যা মোকাবিলায় সরকারের যথাযথ প্রস্তুতি রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App