×

মুক্তচিন্তা

২০২০-২১ বাংলাদেশ বাজেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২০, ০৮:০৩ পিএম

২০২০-২১ বাংলাদেশ বাজেট

জাফরুল্লাহ চৌধুরী

দুঃসময়ের বাজেট নিয়ে আলোচনার উত্তাপ নেই। দেশের এতজন বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ব্যাংকার, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী বা রাজনীতিবিদ কেউ সাহস করে সত্য কথা জনসাধারণকে জানাচ্ছেন না। সবাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষমাণ। তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন, এমনকি তোফায়েল, আমু সবাই, তাদের সংশয় কেন? তারা তো শেখ হাসিনার নির্ভরশীল রাজনৈতিক সহকর্মী।

বিপন্ন পণ্য : বিশ্ব পুঁজিবাদ সম্প্রতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দ্রুতগতিতে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্যতা বেড়ে উল্কার বেগে ছুটছে। ফলে অনেক রাতকানা দার্শনিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গভীরভাবে প্রচার করতে শুরু করেছেন যে, সাম্যবাদী সমসুযোগের সমাজ ব্যবস্থার সম্ভবত কোনো ভবিষ্যৎ নেই। ‘কার্ল মার্কস ইজ ডেড’, বেইজিংয়ের তিয়ানমিয়ান স্কোয়ারে বিস্মৃত মাও সে তুং, হোচিমিন সিটির স্কোয়ারে শায়িত হো চি মিন। হাভানা স্কোয়ারের কোথাও নেই ফিদেল ক্যাস্ট্রোর ভাস্কর্য, তবু তার উপস্থিতি অনুভবনীয়, চুরুটবিহীন হাসিও আকর্ষণীয়। হাভানার বহু জায়গায় চে গুয়েভারা দৃশ্যমান, চিরতরুণ। কৃষক-শ্রমিকের লাল ঝাণ্ডা কি আর উড়বে না? বিশ্ব পুঁজিবাদ হঠাৎ ভয়ানক ধাক্কা খেল এক অজানা, অদৃশ্য কিন্তু সর্বত্র বিরাজমান ক্ষুদ্র ভাইরাস নভেল করোনা কোভিড ১৯-এর কাছে। প্রায় অজানা করোনা ভাইরাস সারা পৃথিবীকে ধাবড়িয়ে তুলোধুনো করেছে, ধনী, দরিদ্র, সৎ, দুর্জন, দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদ, আমলা, শিক্ষক, কৃষক জনতাকে। কারো পালাবার পথ নেই। করোনা ভাইরাস ছাত্র, শ্রমিক সবাইকে একটি কঠিন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে- রাষ্ট্র ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় ফিরে আসবে তো? প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন মূলকথা নয়, মূলকথা সুন্দর জীবন-জীবিকা এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে সব নাগরিকের সমঅধিকার ও সমসুযোগ। যার অনুপস্থিতির কারণে কি করোনা ভাইরাসের প্রতিশোধমূলক প্রয়াস, যার থেকে কারো রক্ষা নেই? তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ চীনের উহানকে ছাড়িয়ে গেছে, শিল্প ও স্বাস্থ্য খাত পুরোপুরি বিপর্যস্ত। কেবল সুষ্ঠুভাবে চালু আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী, সিএমএইচ এবং কয়েকটি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিএসএমএমইউ হাসপাতাল সম্পর্কেও প্রশ্ন উঠেছে। হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে, কয়েক শিক্ষকের করোনা মৃত্যুর ঘটনায় প্রায় ‘লকডাউন’। স্বাস্থ্য ব্যয় বিল এবং অক্সিজেনের স্বল্পতার আলাপ না-ই বা হলো। দেশের প্রায় ৫০০০ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের একজন ডাক্তারও সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান দূরে থাকুক, নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। ঝড় উঠবে সেখানে। অর্থনীতির সংবাদ আরো দুর্বিষহ। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মতে- দরিদ্র্যের হার ২০ থেকে বেড়ে ৩২ শতাংশ হবে। উন্নয়ন অন্বেষণের পরিচালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ তিতুমীরের হিসাবে এই বছরই বাংলাদেশে দারিদ্র্য বেড়ে ৪২-৪৩ শতাংশে পৌঁছবে। ভয়ানক তথ্য, হিসাবে খুব ভুল নাও হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বাংলাদেশে অন্যূন ৫০ লাখ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হবে। অতিরিক্ত ২ কোটি দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবার খাদ্য সংকটে আছে, তাদের আয় ভয়ানকভাবে কমেছে, দ্রুত অবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।

২০২০-২১ : দুঃসময়ের বাজেট কিন্তু আলোচনায় উত্তাপ নেই দুঃসময়ে গতানুগতিক বাজেটে উত্তীর্ণ হওয়া যায় না, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কল্যাণ অবসৃত থাকে, পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে কর্মদক্ষতায় ও প্রতিযোগিতায় পেছনে পড়ছে বাংলাদেশের শ্রমিকের উৎপাদন ক্ষমতা। প্রধানমন্ত্রীকে গণতান্ত্রিক আলোচনায় দেখা যায়নি ১৪ দলের সভায়, অধিকাংশ সময়ে তিনি ছিলেন আমলা পরিবৃত্ত, রাজনৈতিক সহকর্মীরা ম্রিয়মাণ। মৃত ব্যক্তির বন্দনা আছে, সঙ্গে আছে ঢাকঢোলের বাজনা অথচ কর্মীদের হৃদয়ে নেতার আকুতি অনুপস্থিত। একনাগাড়ে ২০ দিন গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসক ও প্যারামেডিকদের অতুলনীয় সেবা ও জনগণের ক্রমাগত দোয়ায় করোনামুক্ত হয়ে সরাসরি গত ১৪ জুন বনানী কবরস্থানে গিয়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধের সতীর্থ নাসিমকে শেষ অভিবাদন জানাতে। তখন রাষ্ট্রপতির গার্ড রেজিমেন্টের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন পর্ব চলছিল। শহীদ তাজউদ্দীন, নজরুল ইসলাম ও ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর কবর জিয়ারত না করে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সঙ্গে অন্য আওয়ামী লীগ কর্মীরা ফিরে গেলেন। বেগম ফজিলাতুন্নেছার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে কাউকে দোয়া করতে দেখলাম না। অধিকাংশ রাজনৈতিক কর্মী জানে না বনানী কবরস্থানে শায়িত আছেন মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানি প্রবাসী সরকার। কী দুর্ভাগ্য জাতির। ১. দুঃসময়ের বাজেট নিয়ে আলোচনার উত্তাপ নেই। দেশের এতজন বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ব্যাংকার, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী বা রাজনীতিবিদ কেউ সাহস করে সত্য কথা জনসাধারণকে জানাচ্ছেন না। সবাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষমাণ। তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন, এমনকি তোফায়েল, আমু সবাই, তাদের সংশয় কেন? তারা তো শেখ হাসিনার নির্ভরশীল রাজনৈতিক সহকর্মী। ২. বিএনপি তাদের স্ট্যান্ডিং ও উপদেষ্টা কমিটির সভায় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য নিবিড়ভাবে পড়ে, অধ্যয়ন করে একাধিক আলোচনা-সমালোচনা করে মননশীল সুষ্ঠু সুপারিশ সরকারকে জ্ঞাত না করে ভুল করছেন। দেশকে তো বাঁচাতে হবে। এটা কেবল হাসিনার দায়িত্ব নয়, খালেদা জিয়ারও। ৩. জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাংসদরা মুখে কলুপ বেঁধেছেন কেন? সুচিন্তিত বাগ্মিতারে সংসদ উত্তপ্ত রাখুন, ভয় পাবেন না, নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করুন। সংখ্যার চেয়ে সাহস বড়। ৪. এরশাদ সাহেব বেঁচে থাকলে বাজেটের প্রতি ওঃবস পড়ে বুঝে উপযুক্ত সমালোচনা উন্মুক্ত করতেন, জি এম কাদেরের মতো গৃহপালিত প্রাণীর আচরণ করতেন না। জি এম কাদের অনুগ্রহ করে হুক্কা হুয়া করা বন্ধ করুন। জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য আপনার অনেক কাজ বাকি। ৫. ওবায়দুল কাদের অনুগ্রহ করে মুখ বন্ধ রাখেন, বিরোধীদলীয় সব সমালোচনার উত্তর দিতে হয় না, এটা রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, অর্থমন্ত্রীকে উত্তর দেয়ার সুযোগ দিন। বাজেট অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব, আপনার নয়। ৬. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সর্বদলীয় রাজনৈতিক সভা ডাকুন, বিপদ মুক্তির বাজেট উদ্ভাবনের জন্য। নতুবা কোনো লাভ হবে না দেশের না দেশবাসীর, ওষুধের দাম কমবে না, কৃষক-শ্রমিক তার শ্রমের ন্যায্য মূল্য পাবে না, আইসিইউ (ICU) প্রতারণা বাড়বে, মৃত্যুর পরও চিকিৎসার বিল দিতে হবে, ফড়িয়ারা রাজত্ব করবে, শহরবাসী অত্যাধিক মূল্যে ফলমূল, শস্য কিনে প্রতারিত হবেন। স্বাস্থ্য খাতে নৈরাজ্য অব্যাহত থাকবে, ক্ষুধা-দারিদ্র্য বাড়বে, সঙ্গে যৌননিপীড়ন, নৈরাজ্য ও ব্যাপক দুর্নীতি।

পরিশোধতব্য সুদ ২০২০-২১ বাজেটে আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রাপ্য বিদেশি ঋণের সুদ এবং পিপিপি (Public Private Partnership) ভর্তুকি ও দায়বদ্ধতা পরিশোধ করতে ১ লাখ ৪১১ কোটি টাকা প্রয়োজন, যা ২০২০-২১ বাজেটের মোট বরাদ্দের ১৭.৬৮ শতাংশ। খাদ্য, দুর্যোগ, কৃষি, পানি সম্পদ ও স্থানীয় সরকারের মোট বরাদ্দের ১৩.৩৬ শতাংশ চেয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ মাত্র ৭৯ হাজার ৯৪১ কোটি, যা বাজেটের ১৪.২৫ শতাংশ। স্মরণতব্য ঋণ পরিশোধের জন্য প্রয়োজন ১৭.৬৮ শতাংশ বরাদ্দ। সংসদে এই সম্পর্কে প্রশ্ন না ওঠা দুর্ভাগ্যজনক। পরিশোধতব্য বিদেশি ঋণের বিষয়টি জনসাধারণের শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ব্যর্থতা রাজনীতিতে তাদের অপরিপক্বতার পরিচায়ক এবং দুঃখজনক।

শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও ভালোবাসা দল-মত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক কর্মী এবং গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ কৃষক শ্রমিকের জন্য ছিল শেখ মুজিবুরের অফুরন্ত ভালোবাসা, তার হৃদয়ের দরজা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত, তাদের খাদ্য নিরাপত্তা দেয়া, কৃষক-শ্রমিক সন্তানের শিক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা ছিল তার জীবনের ব্রত। সবাই তার একান্তজন, আত্মীয়তুল্য। যাকে একবার শেখ মুজিব দেখেছেন, তাকে তিনি স্মরণ রেখেছেন স্নেহডোরে। কেন্দ্রিকতা তাকে করাচি ও ইসলামাবাদের শাসনের কথা বারবার স্মরণ করিয়েছে নির্মমভাবে। পাকিস্তানের কেন্দ্রিকতা পূর্ব পাকিস্তানবাসীর সমসুযোগ ও সমউন্নয়নের ছিল প্রধান বাধা ছিল কেন্দ্রিকতা, যানজট, শাসনজট ও সময়মতো স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে বঞ্চনার নির্মম মাফিয়া শাসন। পাকিস্তান ভাঙার অন্যতম কারণ কেন্দ্রিকতা, ধর্মের অপব্যবহার এবং কেন্দ্রিকতা দুর্নীতির সোপানও বটে। মুখে রক্ত সঞ্চারের মতো। শহরের সব সুযোগ নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন শেখ মুজিব গ্রামবাসীদের জন্য, সঙ্গে নির্মল বাতাস ও লোকজ সংস্কৃৃতির বিস্তার। তৃণমূলের অধিকার আদায় ও জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬৪ জেলায় ৬৪ জন গভর্নর নিয়োগ দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৭ জুলাই মাসে, আগস্ট মাস অবধি চলছিল গভর্নরদের প্রশিক্ষণ। তিনি বুঝেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানে শিল্প নেই কিন্তু ব্যাপক কৃষি সম্ভাবনা আছে। আছে শিল্পের উৎপাদন সৃষ্টির, তাই কৃষি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তার বাহন, পদ্ধতি হবে ইউরোপীয় সমবায় ব্যবস্থাপনা, মেজর খালেদ মোশাররফের ছোট ভাই রাশেদ মোশাররফকে ইউরোপে পাঠিয়ে ছিলেন সমবায় পদ্ধতি অবলোকন ও অধ্যয়নের জন্য। উদ্যোগ নিয়েছিলেন মৌলিক সংস্কারের, যা আজো অসম্পূর্ণ। দ্রুত বিপদ মুক্তির জন্য সবচেয়ে বেশি সরকারি বিনিয়োগ করতে হবে বেসরকারি কৃষি উৎপাদনে, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তদারকিতে উদ্ধৃত্ত হয়ে ফিরে আসবে সব বিনিয়োগ। ব্যাংক খেলাপির ঝামেলায় ঘুম হারিয়ে যাবে না। শিল্পপতিদের বিশ্বাস করা যায় না, কিন্তু কৃষককে বিশ্বাস করা যায়, তারা মিথ্যাচার কম করেন, কারণ তারা ধর্মে বিশ্বাসী ও নীতিবান, তাদের ক্ষুধা সীমিত। মৎস্য, পানিসম্পদ, পোলট্রি, স্বাস্থ্যসেবা, ডেইরি ও খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাপক বিনিয়োগ নিশ্চিত করুন নির্ভাবনায়। BIDS (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিস) ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শজারু তদারকির মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে সঠিক নিবন্ধন, সঠিক কৃষককে সময়মতো ঋণদান ও দুর্নীতিমুক্ত ঋণপ্রাপ্তি। সঙ্গে রাখুন ঘএঙদের, তারা তৃণমূলে সম্পৃক্ত এবং পরিশ্রমী, ক্ষুদ্রঋণ দ্রুত প্রসার করে নারীদের ক্ষমতায়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। ক্ষুদ্রঋণের উদ্ভাবক নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ব্র্যাকের প্রয়াত স্যার ফজলে হাসান আবেদ ও ‘আশা’র শফিকুল হক চৌধুরীর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণযোগ্য।

স্থানীয় শাসন কমিশন ও গভর্নর নিয়োগদান ১. বৃৃহত্তর জনসাধারণের কল্যাণই রাজনীতি। সঠিক সময়ে নির্ভয়ে সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন নিঃস্বার্থ রাজনৈতিক কর্মীকে মাথা উঁচু করে থাকা রাজনৈতিক নেতায় উন্নীত করে, ইতিহাসে স্থান করে দেয়। প্রাণপ্রিয় নেতার অসমাপ্ত কর্মসূচির বাস্তবায়নের জন্য প্রতিযোগিতামূলক স্বনির্বাচিত, স্বশাসিত ৬৪ জেলা স্টেট (District State) সৃষ্টির লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে কমিশন গঠন করুন, ৬৪ গভর্নর নিযুক্তি দিন তৃণমূল রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, শিক্ষক, আইনজীবী, অবসরপ্রাপ্ত আমলা, পুলিশ ও সামরিক কর্মকর্তা, বিচারক-বিচারপতি, দানশীল ব্যবসায়ী, প্রখ্যাত সাংবাদিকদের মধ্য থেকে। ৬ মাসের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কেন্দ্র ও জেলা স্টেটে প্রশাসনিক সামঞ্জস্য থাকবে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণে দ্রুত উন্নয়ন হবে কিন্তু দুর্নীতি বহুলাংশে কমবে, সমঅধিকার ও সমসুযোগ সৃষ্টি হবে, জবাবদিহিতা থাকবে, সুখের পায়রার বকবকুম শুনতে হবে না, জনপ্রতিনিধিদের সার্বক্ষণিকভাবে নিজ জেলা স্টেটে সপরিবারে অবস্থান হবে তাদের নৈতিক দায়িত্ব। সরকারি কর্মকর্তাদের বেলাতেও এ নিয়ম কঠোরভাবে প্রযোজ্য হবে। তাদের সন্তানদের স্ব-স্ব জেলা স্টেটে অধ্যয়ন করতে হবে স্থানীয় কৃষক-শ্রমিকের সন্তানদের সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে। দুই জায়গায় পরিবার রাখা মানে দুর্নীতিতে সজ্ঞানে অংশগ্রহণ, কর্তব্যে অবহেলা ও স্থানীয় উন্নয়নে মনোযোগ না দেয়া। স্বচ্ছ জবাবদিহিতামূলক দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন সৃষ্টির লক্ষ্যে দুটি প্রশাসন ক্যাডার সৃষ্টি বিবেচ্য হওয়া উচিত ব্যাপক জেলা স্টেট ক্যাডার এবং সীমিত কেন্দ্রীয় প্রশাসন ক্যাডার। কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, পররাষ্ট্র নীতি, আকাশ সমুদ্রপথ, আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থা, আয়কর ব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা। পুলিশ হবে জেলা স্টেট সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। কোটা নয় প্রতিযোগিতাই হবে প্রশাসনে প্রবেশ পথ। বয়স সময়সীমা অহেতুক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সামরিক বাহিনীতে যোগদানে বয়সসীমা বিবেচ্য হতে পারে, অন্যত্র নয়। সব কর্মচারী-কর্মকর্তাদের অবশ্যই ধূমপান, পানসেবন ও মাদকাসক্তমুক্ত হতে হবে- এগুলো দুর্নীতির প্রথম ধাপ। সবার আয়কর তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক। স্থানীয় শিক্ষিতদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হবে জেলা প্রশাসনে, কৃষি উৎপাদন সমবায়ে এবং কৃষি বাজারজাত সমবায়ে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের বিকাশ হবে। কমিউনিস্ট ও বাম রাজনৈতিক নেতারা তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার পুরস্কার অর্জন করতে পারবেন কোনো না কোনো জেলা স্টেটে, তাদের শাসনের ধরন নিশ্চয়ই ভিন্ন হবে। নির্মল পরিবেশে আধুনিক শিক্ষা সংস্কৃতির নতুন শহর গড়ে উঠবে জেলা স্টেটে, কেন্দ্রীয় রাজধানী ঢাকার সমমানের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সুবিধা, সঙ্গে মুক্ত চিন্তার সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যময় লোকশিল্প নিয়ে। শান্তির দ্বীপ হবে সব জেলা স্টেট, সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নারীর জীবনযাত্রা হবে নিরন্তর নিরাপদ ও আনন্দময় এবং সম্পত্তিতে সমান অধিকার। জনসংখ্যা ভেদে প্রতি জেলা সংসদে ৪০ থেকে ৮০ জন বিধায়ক সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। সর্বোচ্চ ১০ জনের মন্ত্রিসভা, প্রশাসন শীর্ষে গভর্নর। কেন্দ্র নিয়োগ দেবে জেলা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের জেলা স্টেটের সিভিল সার্জনের পরামর্শে, কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের (UHFWC) সব চিকিৎসক, সেবিকা ও কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের নিয়োগ উন্নয়ন নির্ধারণ করবেন জেলা স্টেট কর্তৃপক্ষ। (বাকি অংশ আগামীকাল) জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী : চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা; গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App