×

রাজধানী

গণস্বাস্থ্যের কিটের রেজিস্ট্রেশন না দেয়ার সুপারিশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২০, ১০:১৪ পিএম

গণস্বাস্থ্যের এন্টিবডি কিটের সেনসিটিভিটি (কত শতাংশ কোভিড-১৯ পজিটিভ নমুনা সঠিকভাবে শনাক্ত করেতে সক্ষম) গ্রহণযোগ্য মাত্রার নিচে। তাই এই কিটের রেজিস্ট্রেশন না দেয়ার সুপারিশ করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের টেকনিক্যাল কমিটি। কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযাযী সেনসিভিটি সর্বনিম্ন ৯০ শতাংশ। কিন্তু গণস্বাস্থ্যের কিটের ক্ষেত্রে এই সেনসিভিটি ৬৯ দশমিক ৭ শতাংশ।

এর আগে ১৭ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, গণস্বাস্থ্যের কিট পরীক্ষা করে তারা দেখেন করোনা শনাক্তে এই কিট কার্যকর নয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংক্রমিত হওয়ার পর দিন যত যাবে, তত এই কিটের সেনসিটিভিটি বাড়বে। ৮-১৪ দিন ধরে করোনায় আক্রান্ত ১০০ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এই কিট ৪১ জনের শরীরে এন্টিবডি শনাক্ত করতে পেরেছে এবং ৫৯ জনেরটা পারেনি। অন্তত ১৪ দিন যাবৎ উপসর্গ নেই, এমন ১০৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করার পর ৭৬ জনের শরীরে এন্টিবডি শনাক্ত করতে পারে এই কিট। তার মানে আক্রান্ত হয়ে সুস্থতার পথে আছেন, এমন ব্যক্তিদের শনাক্তে এই কিটের সেনসিটিভিটি ৭০ শতাংশ।

বিএসএমএমইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ১৮ দিন যাবত উপসর্গ নেই এই নমুনাদলের ৯৫ শতাংশ কনফিডেন্স ইন্টারভাল ৬০ দশমিক ১৯ শতাশ থেকে ৭৮ দশমিক ১৬ শতাংশর মধ্যে। বিএসএমএমইউ’র প্রতিবেদন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে জমা দেয় ১৬ জুন।

এদিকে বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) সকালে এক আলোচনা সভায় গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ও কোভিড-১৯ ডট ব্লট কিট প্রকল্পের সমন্বয়ক ডা. মুহিবুল্লাহ খোন্দকার অভিযোগ করেন, তাদের উদ্বাবিত কিটের অনুমোদন বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে সাথে মেইলে ও ফোনে যোগাযোগ করা হলেও অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মেইলের কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। তাদের কেউ ফোনও রিসিভ করেনি। তিনি বলেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিটের এন্টিজেন্ট অংশের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এর ফলাফল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে জমা দেয় ১৬ জুন। ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন কিছু আমাদের জানানো হয়নি। শুধুই তাই নয়, এ বিষয়ে আমাদের সাথে দেখা করতে রাজি নয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক থেকে শুরু করে পরিচালক পর্যায়ের কেউই। তারা কিছু একটার জন্য অপেক্ষা করছেন বলে মনে হচ্ছে। ২৪ জুন অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, তাদের সিদ্ধান্ত নিতে একটু দেরি হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে হয়তোবা একটা কিছু জানা যাবে।

ডা. মুহিবুল্লাহ আরো বলেন, আমাদের এই কিটকে আরও উন্নত করার জন্য বিএসএমএমইউ থেকে কিছু সুপারিশ ছিল। সেজন্য আমরা বলেছি, আমাদের কিছু রি-এজেন্ট আমদানির নো-অবজেকশন দিতে। সেটাও বৃহস্পতিবার সকালে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছি।

প্রসঙ্গত; চলতি বছরের ১৭ মার্চ করোনা পরীক্ষায় ‘জিআর র‌্যাপিড ডট ব্লট’ কিট উৎপাদনে যাবার কথা জানিয়ে ১৯ মার্চ কিট উৎপাদন শুরু করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে ড. নিহাদ আদনান, ড. মোহাম্মদ রাঈদ জমিরউদ্দিন, ড. ফিরোজ আহমেদ এই কিট তৈরি করেন। ১১ এপ্রিল সরকারের কাছে এই হস্তান্তরের কথা থাকলেও বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক ক্রটির কারণে তা সম্ভব হয়নি। ২৫ এপ্রিল কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠনের আয়োজন করা হলে সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে কেউ উপস্থিত ছিলেন না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং বিএসএমএমইউ’র প্রতিনিধির কাছে কিট হস্তান্তর করা হয়।

২৬ তারিখ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে উদ্ভাবিত কিট পৌছে দেয় গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। এরপর তিনদিন চলে এই কিটের পরীক্ষা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক। অবশেষে ৩০ এপ্রিল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বিএসএমএমইউ বা আইসিডিডিআর,বিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার অনুমতি দেয়। কিটের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউ প্রতিষ্ঠানের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. শাহীনা তাবাসসুমকে প্রধান করে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে ২মে। ১২ মে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ নমুনা কিট ও পরীক্ষার খরচ বাবদ অর্থ ব্যাংকে জমা দেয়ার জন্য গণস্বাস্থ্যকে চিঠি দেয়। ১৩ মে ব্যাংকে অর্থ এবং বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের হাতে নমুনা কিট হস্তান্তর করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এরপর ২০ মে রক্তের পরিবর্তে লালা থেকে কিটের সক্ষমতা যাইয়ের আবেদন করে গণস্বাস্থ্যের কর্তৃপক্ষ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App