×

জাতীয়

অনিশ্চয়তায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৩২ লাখ শিক্ষার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২০, ০৯:৪৪ এএম

অনিশ্চয়তায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৩২ লাখ শিক্ষার্থী
টানা ১০০ দিন ধরে বন্ধ আছে বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান এই ছুটি বলবৎ থাকবে। ফলে আরো ৪১ দিন নিষ্প্রাণ থাকবে পুরো শিক্ষাঙ্গন। দীর্ঘ এই ছুটির জেরে সব স্তরের শিক্ষার্থীরা কম-বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হলেও তছনছ হয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধ্যয়নরত ৩২ লাখ তরুণ-তরুণীর শিক্ষাজীবন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস নিয়ে সেমিস্টার চালু রাখলেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো এ ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে। ফলে সেগুলোতে দীর্ঘ সেশনজট সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিইউপি) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ (ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অনলাইনে শতভাগ কার্যক্রম চালাচ্ছে। কিন্তু শাবিপ্রবিসহ কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও তেমন সাড়া মিলছে না। অন্যদিকে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতে এ উদ্যোগ নেয়াই হয়নি। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে না। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি বা এইচএসসি পরীক্ষাও নেয়া হবে না। ফলে শিক্ষাঙ্গন কবে সচল হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ রকম পরিস্থিতিতে দেশের উচ্চ শিক্ষাঙ্গনের গতি কী হবে তা জানতে এবং করণীয় নির্ধারণে ভিসিদের নিয়ে বৈঠকে বসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় এই ভার্চুয়াল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, উচ্চশিক্ষায় হয়ে যাওয়া ক্ষতিপূরণে আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। কিন্তু আমরা আগে থেকে কিছুই চাপিয়ে দিতে চাই না। কোন পরিকল্পনা নিয়ে সামনের দিকে পথচলা শুরু করব তা জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের কথা শোনব। নিশ্চয়ই তাদেরও এ নিয়ে চিন্তাভাবনা আছে। এ জন্য আজ বৃহস্পতিবার তাদের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট তৈরি হলেও তা কাটাতে দক্ষ নেতৃত্বের দরকার। তবে আমি মনে করি, এই জটের ধকল সামলাতে দুই বছরের পরিকল্পনা প্রয়োজন হবে। দুই বছরের মধ্যে আমরা আবারো সেশনজটমুক্ত উচ্চশিক্ষা পাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৬ আগস্টের পর যদি আর ছুটি না-ও বাড়ে, তবু প্রায় ৫ মাসের ছুটিতে ৯ মাস থেকে ১ বছরের সেশনজট হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অক্টোবর-নভেম্বরে নতুন সেমিস্টার শুরু করা যাবে। ইউজিসির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, উচ্চশিক্ষার বিদ্যমান ক্ষতি কমিয়ে আনতে এখন পর্যন্ত দুটি বিকল্প ভাবনা উঠে এসেছে। একটি হচ্ছে সাধারণ ছুটির আগে নেয়া শ্রেণি কার্যক্রমে শেষ করা কোর্সের ওপর বিশেষ ব্যবস্থায় চলতি সেমিস্টারের পরীক্ষা নিয়ে রাখা। এমনটি করা সম্ভব হলে ছয় মাসের সেশনজট এখানেই কমে যাবে। এরপর জুলাইয়ে শুরু হওয়া সেমিস্টারের শ্রেণির পাঠদান অনলাইনে নেয়া। এ দুই কাজ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সেশনজট তৈরিই হবে না। অন্য বিকল্পটি হচ্ছে এখন পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে সেশনজট মেনে নিয়ে দুই বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা করা। এই পরিকল্পনা মতে, যখনই ক্যাম্পাস সচল হবে তখন থেকে কোর্সের শ্রেণি কার্যক্রম ও ল্যাবরেটরি ওয়ার্ক সাধারণভাবে চলবে। এ ক্ষেত্রে কোর্সের কিছু পাঠের বিষয় বাদ দেয়া যেতে পারে। এভাবে করা হলে ৬ মাসের সেমিস্টার ৪ মাসে নিয়ে আসা যাবে। সে ক্ষেত্রে ৯ মাস থেকে ১ বছরের জট তৈরি হলেও তা ২ বছরে পূরণ করা সম্ভব হবে। ইউজিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়ন করছে প্রায় ৩২ লাখ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে অধ্যয়ন করছে সাড়ে ২৪ লাখ শিক্ষার্থী। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে প্রায় পৌনে চার লাখ শিক্ষার্থী। করোনাকালে শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তারা ইতোমধ্যে অনলাইনেই চলতি সেমিস্টারের পরীক্ষা নিয়েছে। আগামী জুলাই মাস থেকে সামার সেমিস্টারের ভর্তি কার্যক্রমও অনলাইনে শুরু হবে। এ অবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাদের অধিভুক্ত কলেজগুলোকে অনলাইনে ক্লাস শুরুর তাগিদ দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকেও সরকারি কলেজগুলোতে অনলাইনে ক্লাস শুরুর নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু এর পরও বড় বড় কিছু সরকারি কলেজ ছাড়া অন্যরা কেউ অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে পারেনি। মূলত মহামারিকালে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান, অনলাইন ক্লাসের জন্য সামগ্রীর সংকট, ইন্টারনেটের উচ্চ দাম ও কিছু শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন না থাকায় অনলাইন ক্লাস শুরু করা যাচ্ছে না। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকের অনলাইনে ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে অনীহাও অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতিতে ইউজিসি অনলাইন কার্যক্রমের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, সমীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮৬ দশমিক ৬ শতাংশের স্মার্টফোন আছে। ৫৫ শতাংশের ল্যাপটপ আছে। অপরদিকে সব শিক্ষকের ল্যাপটপ আছে। কিন্তু ক্লাস নেয়ার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট খরচ, দুর্বল নেটওয়ার্কসহ বেশ কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, আমরা অনলাইনে ক্লাস নেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন নেই যা একটি বড় সমস্যা। এমফিল, পিএইচডির মতো ক্লাসগুলো আমরা অনলাইনে নিচ্ছি। করোনা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে আমাদের ভিন্ন চিন্তা করতে হবে। তবে ক্ষতি পোষাতে আমরা প্রতিদিনের ক্লাসের সময় বাড়িয়ে ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত করা, সাপ্তাহিক ছুটি একদিন করা, সিলেবাস কমানো, অন্যান্য ছুটি কমানোসহ নানা পরিকল্পনা করেছি। ইউজিসির বিজ্ঞপ্তি : করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী ভর্তি, ক্লাস এবং পরীক্ষাসংক্রান্ত ইউজিসির গাইডলাইন অমান্যের অভিযোগ উঠেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উদ্দেশ্য করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিজ্ঞপ্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীদের প্রতি মানবিক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রমাণসহ ইমেইলে ইউজিসির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে। গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে সেমিনার : গতকাল বুধবার রাজধানীর গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে ‘কোভিড-১৯ এর প্রভাব : বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা এবং অনলাইন শিক্ষার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা’ শীর্ষক এক অনলাইন সেমিনারে অংশ নেয়া বক্তারা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিশ্বের সবকিছুই দ্রুত বদলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থাও তার সঙ্গে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে না পারে, তবে অচিরেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভয়াবহ সংকট দেখা যাবে। সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান বলেন, করোনাকালে নানামুখী সমস্যা থাকলেও সরকারের সহযোগিতা থাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা কাটিয়ে উঠবে; এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জে পড়বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্রদের টাকায় চলে, তাই কোয়ালিটি নিশ্চিত করেই তাদের টিকে থাকতে হবে। তা না হলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই বন্ধ হয়ে যাবে। এ সময় তিনি শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষা উপকরণ বিনিময়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পারস্পারিক সমঝোতা করার আহ্বান জানান। গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির বলেন, অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই এই অনলাইন শিক্ষা চালিয়ে নিতে হবে। আর এ কারণেই গ্রিন ইউনিভার্সিটি লকডাউনের শুরু থেকেই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App