×

অর্থনীতি

ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২০, ০৯:৪৯ এএম

ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে
মো. সিদ্দিকুর রহমান প্রেসিডেন্ট ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ
২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, প্রতিদিনই আমাদের চরম আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাবে তা অজানা। তারপর সরকার এই পরিস্থিতিতে বাজেট ঘোষণা করেছে এটা দুঃসাহসিক কাজ। গতকাল ভোরের কাগজকে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এসব জনগোষ্ঠীকে ২০%-২৫% মহাজনি ঋণ বা এনজিও ঋণের খপ্পর থেকে উদ্ধার করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ের এসব ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাকে টিকিয়ে রাখতে না পারলে গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। এ বছর ব্যবসার বছর নয়। বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো এই সংকটে টিকে থাকার সংগ্রামে নেমেছে, মুনাফা অর্জনে নয়। ব্যাংকগুলো এই পর্যায়েও কাজ করতে হবে। চলমান দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ দিতে হবে। কারণ চলতি বছর উৎপাদনের প্রতিটি সেক্টরে উৎপাদন মূল্য হ্রাস পাবে, বিক্রয়মূল্য কম থাকবে, মুনাফা হ্রাস পাবে ও বাজার স্থিতিশীল থাকবে। তিনি বলেন, দেশে তারল্য সংকট নেই। মুদ্রা রিজার্ভে রেখে লাভ নেই। বিনিয়োগ করুন, উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ করে দিন, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করুন, মানুষ বাঁচান। এই বিপদের সময় অবশ্যই ব্যাংকার্স গ্রাহকের পাশে থাকতে হবে। কেননা, ব্যাংকের ক্ষতি হলে গ্রাহকের ক্ষতি আবার গ্রাহকের ক্ষতি হলে ব্যাংকের ক্ষতি। এছাড়া নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, ভৌগোলিক দিক থেকে ফরিদপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অবস্থিত। সম্প্রতি শিল্প খাতে ছাড় দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনার চেষ্টা করা হয়েছে। অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগের সহজ সুযোগ করে দেয়া একই সঙ্গে অর্থপাচার রোধে কঠোর আইনি পদক্ষেপে দেশের অর্থ দেশেই ব্যবহারে বাধ্য করা হয়েছে। যে পরিমাণ অর্থ আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিং করে পাচার হয়েছে এবং যে পরিমাণ প্রদর্শিত বিনিয়োগ ভুয়া প্রমাণিত হবে তার ওপর ৫০ শতাংশ হারে কর আরোপিত হবে। এসব উদ্যোগে সুফল আসবে। চলতি অর্থবছরে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে। ফলে বৃহত্তর ফরিদপুরে নির্মাণশিল্পের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। এ শিল্পের সঙ্গে এ অঞ্চলে প্রায় ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সম্পৃক্ত। বৃহত্তর ফরিদপুরে তথা বাংলাদেশের নির্মাণশিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে নির্মাণ খাতের উপকরণসমূহের ওপর যাবতীয় শুল্ক প্রত্যাহারের আবেদন জানাই। তিনি বলেন, যাদের অতিরিক্ত সম্পদ রয়েছে এবারও তাদের নিয়মিত করের বাইরে অতিরিক্ত কর দিতে হবে। আসবাবপত্রের বিপণন পর্যায়ে ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ, কার ও জিপ নিবন্ধনের ফি ও অন্যান্য সার্ভিসের ওপর ১৫ শতাংশ, মোবাইল ফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ, বিভিন্ন প্রসাধনসামগ্রীর ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ এবং সিরামিকের সিংক, বেসিন উৎপাদন পর্যায়ে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় এসব খাতে খরচ বাড়বে। এবারও সিগারেট ও জর্দার দাম বাড়ানোয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমে আসবে এবং জনগণ এগুলো ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবে। বাজেট প্রস্তাবে শিল্পের কিছু খাতে বাড়তি সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের চলার পথ মসৃণ করতে আমদানি পর্যায়ে শিল্পের কাঁচামালের ওপর আগাম কর হ্রাস করে ৪ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের রেয়াত গ্রহণের সময়সীমা বাড়িয়ে কর মেয়াদ করা হয়েছে। পরিবহন সেবার ৮০ শতাংশ রেয়াতযোগ্য করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, বাজেটে সরকারের অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্পে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ভারী প্রকৌশল শিল্প, রপ্তানি খাতের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং দেশীয় শিল্পের বিকাশের জন্য অটোমোবাইল, রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ার কন্ডিশনার শিল্পসহ কয়েকটি শিল্প খাতে বিদ্যমান মূসক ও সম্পূরক শুল্কের অব্যাহতি বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল টেলিফোন সেট উৎপাদনের ওপর মূসক অব্যাহতি এবং সংযোজন খাতে ৫ শতাংশ হারে মূসক রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য দেশে বিভিন্ন উপকরণেও রাজস্ব ছাড় দেয়া হয়েছে। বাজেটের এটা ভালো একটা দিক। বাজেটে ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ ঋণ নেয়ার উদ্যোগ রয়েছে, তাতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমতে পারে। অন্যদিকে কালো টাকা সাদা করার অনৈতিক সুযোগ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আরো গুরুত্ব দেয়া দরকার ছিল। সামাজিক নিরাপত্তার উপকারভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা অনুযায়ী সাহায্য দেয়া হয়, কিন্তু কর্মসূত্রে তিনি অন্য জায়গায় থাকতে পারেন। ফলে তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। এ প্রক্রিয়াটি সংশোধন করা দরকার। নতুন উদ্যোক্তারা প্রথম দিকে মূলধনী সমস্যায় থাকেন। এ সমস্যার সমাধানের জন্য জার্মানির অনুসরণ করা যেতে পারে। ছোট কোম্পানিগুলোকে ক্যাপিটাল ভেঞ্চারের মতো ঋণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া তাদের গ্যারান্টর হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকও এগিয়ে আসা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App