×

জাতীয়

বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে ‘এমভি সারেরা’

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২০, ১২:২০ পিএম

বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে ‘এমভি সারেরা’

‘এমভি সারেরা’

দীর্ঘ এক দশক পর আবারো আমদানি-রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ। দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্রুপের মালিকানাধীন সমুদ্রগামী দুটি কনটেইনার পরিবহনকারী জাহাজের একটি ‘এমভি সারেরা’ লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে আজ মঙ্গলবার (২৩ জুন) চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে। যাকে মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডের একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে, সাশ্রয় হবে অনেক বৈদেশিক মুদ্রাও। জানা গেছে, দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ কর্ণফুলী ‘এমভি সারেরা’ ও ‘এমভি সাহারে’ নামে দুটি কনটেইনার জাহাজ কিনে বাংলাদেশি পতাকায় পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে রেজিস্ট্রেশন, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, আন্তর্জাতিক ক্লাস সার্টিফিকেশনসহ আনুষঙ্গিক সব অনুমোদন ও ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে। ‘সারেরা’ নামের জাহাজটি গত রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) ৪ নম্বর জেটিতে এনে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার তোলার কাজ শুরু হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এটি বন্দর ছেড়ে যাবে। ১৮৪ দশমিক ৫১ মিটার লম্বা, সাড়ে ৮ মিটার ড্রাফটের ‘এমভি সারেরা’র কনটেইনার ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৫৫০ টিইইউ’স (২০ ফুটের এককে)। লাল-সবুজ পতাকাবাহী জাহাজটির লম্বা চিমনিও রাঙানো হয়েছে লাল-সবুজে। সূত্র জানিয়েছে, কর্ণফুলী গ্রুপের জাহাজ দুটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাংয়ে নিয়মিত রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন করবে। ফিরতি পথে নিয়ে আসবে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার। এই সেবার নাম দেয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ এক্সপ্রেস সার্ভিস’। কর্ণফুলী গ্রুপের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আজমীর হোসেন চৌধুরী গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ভোরের কাগজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি কোম্পানির জাহাজে কনটেইনার পরিবহন করা হতো। এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে দেশের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো। দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ দুটিতে সর্বোচ্চ মানের সেবা পাবেন গ্রাহকরা। এতে রপ্তানিকারকরাও বাড়তি সুবিধা পাবেন। তাছাড়া এই সেবার মাধ্যমে কনটেইনার পরিবহন ভাড়া বাবদ বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হবে, বেগবান হবে দেশের অর্থনৈতিক চাকা। তিনি আরো বলেন, আগামীতে আরো জাহাজ নামানো পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। ফলে দেশের নাবিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এরআগে বেসরকারি খাতে দুটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান এইচআরসি শিপিং কোম্পানি ও কিউসি কনটেইনার লাইন বাংলাদেশের পাতাকাবাহী জাহাজে কনটেইনার পরিবহন করত। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে কনটেইনার জাহাজ পরিচালনার ব্যবসায় যুক্ত হয় প্রতিষ্ঠান দুটি। কিন্তু শিপিং বাণিজ্যের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে এক দশক পর দেশীয় প্রতিষ্ঠানের হাত থেকে ধীরে ধীরে পুরোটাই বিদেশিদের হাতে চলে যায় এ ব্যবসা। ২০০৭ সালে কিউসি এবং ২০১০ সালে এইচআরসি এ ব্যবসা থেকে পুরোপুরি সরে আসে। এক দশক পর ‘এমভি সারেরা’ ও ‘এমভি সাহারে’ এই দুটি জাহাজ নিয়ে আবারো একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ব্যবসার সূচনা করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশি পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজ আবারো আন্তর্জাতিক রুটে যুক্ত হওয়ায় মেরিটাইম সেক্টরে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জানিয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, এর মধ্য দিয়ে মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। দেশের কনটেইনারবাহী রপ্তানি ও আমদানি পণ্য পরিবহনে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। দেশের টাকা দেশে থাকবে। এছাড়া এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশি ক্যাডেট ও রেটিংসদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাছাড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী হওয়ায় জাহাজ দুটি চট্টগ্রাম ও মোংলায় বার্থিং, কনটেইনার প্রাপ্যতার কোটাসহ অনেক বিষয়ে অগ্রাধিকার পাবে। আমদানিকারক বা রপ্তানিকারকরাও নিঃসন্দেহে কিছু বাড়তি সুবিধা ভোগ করবেন। চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আন্তর্জাতিক সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ যুক্ত হওয়া নিঃসন্দেহে গৌরবের। এর মধ্য দিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন ব্যবসায় বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পাবে। এনসিটির অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের সিইও ক্যাপ্টেন তানভীর জানান, এক দশক পর বাংলাদেশি পতাকাবাহী কনটেইনার শিপ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে পণ্য পরিবহন করবে, এটি নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক। জাহাজটি সিঙ্গাপুর থেকে খালি আনা হয়েছে। ১১শ’ টিইইউ’স রপ্তানি পণ্যভর্তি ও ৩৫০ টিইইউ’স খালি কনটেইনার নিয়ে মঙ্গলবার (আজ) সিঙ্গাপুর ও পোর্ট কেলাংয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে ‘এমভি সারেরা’। কর্ণফুলী গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বড় জাহাজে ট্রানজিট নেয়ার জন্য রপ্তানিকারকের ভোগান্তি পোহাতে হবে না। কন্টেইনার জটের কারণে রপ্তানিকারকদের পণ্য শিপমেন্ট নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ দুটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কারণে রপ্তানিকারকরা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী পণ্য পরিবহন করতে পারবেন। এর মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের অনিশ্চয়তা দূর হবে। এদিকে দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে বার্থিং পেতে অগ্রাধিকার পাবে জাহাজ দুটির পরিচালাকারী কর্ণফুলী গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এইচআর লাইনস লিমিটেড। বাংলাদেশ পতাকাবাহী জাহাজ সংরক্ষণ আইন ২০১৯ অনুযায়ী, দেশীয় জাহাজে ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আবার জেটিতে জাহাজ ভিড়ানোর জন্যও অপেক্ষা করতে হবে না। নৌবাণিজ্য দপ্তর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশীয় পতাকাবাহী কনটেইনার জাহাজ থাকা গৌরবের। যেকোনো দুর্যোগ বা সংকটে দেশি পতাকাবাহী জাহাজ থেকে বেশি সহায়তা পাওয়া যায়। বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্যও এটা বড় শক্তি। তিনি আরো বলেন, আইন অনুযায়ী বার্থিং এবং পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাবে দেশীয় পাতাকাবাহী এই জাহাজ। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের শিপিং ব্যবসায় কর্ণফুলী লিমিটেড একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। ১৯৫৪ সালে হেদায়েত হোসেন চৌধুরীর হাত ধরে চট্টগ্রামে গ্রুপটির যাত্রা শুরু হয়। এখন এই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আছেন তারই ছেলে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। বর্তমানে গ্রুপটি চারটি ফিডার অপারেটর কোম্পানি ও পাঁচটি মেইন লাইন অপারেটরের এজেন্সি পরিচালনার ব্যবসায় যুক্ত রয়েছে। শিপিং ছাড়াও বেসরকারি কনটেইনার ডিপোসহ লজিস্টিকস কোম্পানিতে বিনিয়োগ রয়েছে গ্রুপটির। ফিডার অপারেটর হিসেবে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে কোম্পানিটি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App