×

জাতীয়

নেতৃত্বে নতুন রক্ত সঞ্চালন জুগিয়েছে প্রাণশক্তি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২০, ০৯:৩৯ এএম

নেতৃত্বে নতুন রক্ত সঞ্চালন জুগিয়েছে প্রাণশক্তি
নেতৃত্বে নতুন রক্ত সঞ্চালন জুগিয়েছে প্রাণশক্তি

একাত্তর পেরিয়ে বাহাত্তর

এক ঝাঁক মেধাবী তরুণই এখন আওয়ামী লীগের সম্মুখযোদ্ধা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ঝাণ্ডা উড়িয়ে এরাই জাগিয়েছেন নতুন সম্ভাবনা। প্রবীণদের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি এই তারুণ্যকেই শক্তি ভাবছে আওয়ামী লীগ। এমন চিন্তা থেকেই তরুণ নেতাদের দল ও সরকারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিচ্ছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। বিভিন্ন সময় দলে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছেন তিনি। এমনকি তার নিজের বিকল্প খোঁজার জন্যও বলেছেন। দল ও সরকারে তারুণ্যকে সম্পৃক্ত করার এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরাও। তাদের মতে, প্রবীণের অভিজ্ঞতায় তারুণ্যের জয়গান গেয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া উপমহাদেশের প্রাচীনতম দলটি জন্মলগ্ন থেকেই তারুণ্যনির্ভর।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়া। স্বাধীনতা এবং মুক্তির জন্য সুদীর্ঘ সাত দশকের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবার সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা। রূপকল্প-২০৪১, ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞান-তথ্যপ্রযুক্তিসম্পন্ন ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সোনার বাংলায় পরিণত করার আশা জাগানিয়া হাতছানি। আর এসবই বাস্তবায়ন হবে নবীন-প্রবীণের অভিজ্ঞতা আর মেধার মেলবন্ধনে আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

এ ব্যাপারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ ভোরের কাগজকে বলেন, সাত দশকে বাংলার মানুষের জীবনকে সুন্দর-সুখী করতে নিরলস সংগ্রাম করেছে তারুণ্যনির্ভর আওয়ামী লীগ। এই দলটির কাছে বর্তমানের তরুণ সমাজের অনেক প্রত্যাশা আছে। তরুণরা সমাজে নতুন শক্তির সঞ্চার করে। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। তিনি বলেন, সরকার ও দলে তরুণদের প্রাধান্য দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। যেন জেনারেশন গ্যাপ না হয়। কোনো পাইপলাইন যেন বন্ধ না হয়। উন্নয়নের জন্য এই সেতুবন্ধন জরুরি।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ভোরের কাগজকে বলেন, পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-উপনিবেশের বিরুদ্ধে একদল তরুণ রাজনীতিবিদ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী লীগ সবসময় তরুণদের সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করে। তরুণদের আমরা কাজে লাগাতে চাই। তরুণদের মেধা আর প্রবীণদের অভিজ্ঞতাÑ দুয়ের সমন্বয়ে দীর্ঘ সাত দশকের চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে আজকের আওয়ামী লীগ।

তারুণ্যে উদ্ভাসিত দল-সরকার : আওয়ামী লীগ সবসময়ই তারুণ্যে উদ্ভাসিত। সরকার এবং দল উভয়ক্ষেত্রেই নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধন। বর্তমান মন্ত্রিসভাকেও ‘তারুণ্যের মন্ত্রিসভা’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন কেউ কেউ। প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভায় ৩৫ জনই ছিলেন নতুন মুখ। কনিষ্ঠ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, দুবার দায়িত্ব পালন করা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক প্রত্যেকেই অপেক্ষাকৃত তরুণ।

একাদশ জাতীয় সংসদেও নির্বাচিত হয়েছেন দলটির অর্ধশত নতুন মুখ। বঙ্গবন্ধু পরিবারের উত্তরসূরি শেখ সারহান নাসের তন্ময়, আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলপুত্র ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জনের মতো তরুণরা সংসদে এসেছেন। সংরক্ষিত নারী আসনের ৪১টিতেই নতুন মুখ। দলেও তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন শেখ হাসিনা। অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদকের দায়িত্বে ওয়াসিকা আয়শা খান, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান দায়িত্ব পাওয়াকে চমক হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে সহযোগী সংগঠনেও তারুণ্যের জয়ধ্বনি। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, সাধারণ সম্পাদক এ কে এম আফজালুর রহমান বাবু, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ, সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম প্রত্যেকেই তরুণ।

ওয়াসিকা আয়শা খান ভোরের কাগজকে বলেন, আওয়ামী লীগের সংগ্রামী পথচলার পুরোটা সময়ই দলের নেতৃত্ব ছিল তরুণ নেতাদের হাতে। তরুণ শেখ মুজিবের ডাকে আন্দোলনে সামনে এসে দাঁড়াতেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারই কন্যা শেখ হাসিনা যখন দলের দায়িত্ব নেন তখন তিনিও ছিলেন তরুণ। দলকে ঐক্যবদ্ধ করে ভগ্নপ্রায় রাষ্ট্রব্যবস্থা ও অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়ে তরুণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মজবুত করেছেন দেশের মেরুদণ্ড। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা নিয়েই আমরা পথ চলতে চাই।

কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত আওয়ামী লীগ : পর পর তিনবার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর মানুষের প্রত্যাশা অনেক। সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জও পাহাড়সম। অসমাপ্ত বড় বড় প্রকল্পের কাজ ঠিক সময়ে শেষ করার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা মহামারি মোকাবিলার চ্যালেঞ্জও। বিশেষজ্ঞদের মতে, আওয়ামী লীগের ইতিহাস বাঙালি জাতির মুক্তির ইতিহাস। জন্মলগ্ম থেকেই আওয়ামী লীগ স্বপ্ন দেখে, দেখায় এবং বাস্তবায়ন করে। আওয়ামী লীগের বড় অর্জন একাত্তর। স্বাধীন দেশে জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ, শান্তিচুক্তি, সমুদ্র বিজয়, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি আদায়, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করে উন্নয়নের রোল মডেলে রূপান্তর, দরিদ্র মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা এসবই আওয়ামী লীগের সাফল্যের মুকুটে একেকটি পালক।

অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ক্ষমতায় বা বিরোধী দলে যেখানেই থাকুক আওয়ামী লীগ মানুষের জন্য কাজ করে। ১৯৬৪ সালের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ কখনো ক্ষমতায় গেলে যমুনা নদীতে সেতু হবে। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল ক্ষমতার উপজেলা, পাওয়ার প্ল্যান্ট করা। সবই হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তার কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। ৭১ বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে জনগণের জন্য কাজ করছে আওয়ামী লীগ। প্রত্যাশা, প্রাচীন সংগঠনটি ইতিহাস-ঐতিহ্য সামনে রেখে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে।

ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য সত্যিকার সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা। কৃষক-শ্রমিকের আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক মুক্তি। বঙ্গবন্ধুর দুটি রাজনৈতিক দর্শন ছিল মুক্তি ও স্বাধীনতা। তিনি স্বাধীনতা দিয়েছেন কিন্তু ঘাতকচক্রের নির্মম বুলেটের কারণে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্নপূরণে কাজ করছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা। উন্নতসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে সব ভৌত অবকাঠামোর ভিত্তি শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। স্বাধীনতার আগে যেমন বায়ান্ন, বাষট্টি, ছেষষ্টি, ঊনসত্তর, সত্তর, একাত্তরে স্বাধীনতার জন্য নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ তেমনি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নতসমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সবসময় চ্যালেঞ্জ নেয় এবং পূরণ করে। ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞান-তথ্যপ্রযুক্তিসম্পন্ন ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সোনার বাংলায় পরিণত হবে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App