×
Icon ব্রেকিং
ইরানের ভূখণ্ডে মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, ইরানের বিভন্ন শহরে বিমান চলাচল বন্ধ

জাতীয়

দুই বছর সাজা হলেই সংসদ সদস্য পদ হারাবেন পাপুল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২০, ১২:৩১ পিএম

দুই বছর সাজা হলেই সংসদ সদস্য পদ হারাবেন পাপুল
মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে গ্রেপ্তার হয়েছেন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল। বাংলাদেশেও চলছে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে তার এমপি পদে থাকা নিয়ে। তবে আইনজ্ঞরা বলছেন, অভিযোগ উঠলেই অথবা গ্রেপ্তার হলেই এমপি পদ বাতিল হওয়ার সুযোগ নেই। নৈতিক স্খলনজনিত অভিযোগে কমপক্ষে দুই বছর সাজা হলেই কেবল সংসদ সদস্য পদ হারাতে পারেন পাপুল। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী যেসব কারণে সংসদ সদস্য পদ বাতিল হতে পারে তা হলো কোনো উপযুক্ত আদালত যদি তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করেন, তিনি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর যদি দায় থেকে অব্যাহতি না পান, তিনি যদি কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করেন কিংবা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করেন, তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে কমপক্ষে দুবছরের সাজাপ্রাপ্ত হন, তিনি যদি প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন, সংসদের অনুমতি ছাড়া তিনি যদি একটানা নব্বই বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন এবং সংবিধানের বহুল আলোচিত ৭০ অনুচ্ছেদের আলোকে তিনি যদি তার দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দেন। সংবিধানে উল্লিখিত একটি কারণও কুয়েতে গ্রেপ্তার এমপি পাপুলের ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রযোজ্য নয়। যদি তিনি কুয়েতে দণ্ডপ্রাপ্ত হন এবং সেটি যদি ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে দুবছরের বেশি সাজা হয়, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। তবে বিদেশে সাজাপ্রাপ্ত হলে কারো সংসদ সদস্য পদ যাবে কিনা, সেটি বাংলাদেশের সংবিধানে উল্লেখ নেই। তবে বিষয়টির নানা ব্যাখা থাকলেও সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী অভিযোগ প্রমাণসাপেক্ষে কমপক্ষে দুবছর অথবা তার চেয়ে বেশি সাজা হলেই এমপি পদ হারাবেন পাপুল। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেছেন, একজন সংসদ সদস্য গ্রেপ্তার হলে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। আইনি ব্যাখ্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, একজন সংসদ সদস্য যদি কোনো মামলায় দুবছর বা তার বেশি সময়ের সাজাপ্রাপ্ত হন ও সে সাজা যদি নৈতিকস্খলনজনিত হয়, আর সে বিষয়টি সরকার বা কোনো কর্তৃপক্ষ সংসদকে যদি অবহিত করে এবং সেটাকে আমরা নৈতিকস্খলন বলে বিবেচনা করি, তখন সংসদ সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে ‘ডিজমেম্বার’ (সংসদ সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার) করতে পারে। অন্যদিকে কার্যপ্রাণালির ১৭২ বিধি অনুযায়ী, কোনো সদস্য ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার হলে কিংবা কোনো আদালত কর্তৃক কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে বা কোনো নির্বাহী আদেশক্রমে আটক হলে গ্রেপ্তারকারী বা দণ্ডদানকারী বা আটককারী কর্তৃপক্ষ বা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে স্পিকারকে জানাবেন। এরপর ১৭৬ বিধি অনুযায়ী স্পিকার যত দ্রুত সম্ভব সংসদ অধিবেশন থাকলে সংসদে তা পাঠ করবেন, কিংবা সংসদ অধিবেশন না চললে সদস্যদের অবগতির জন্য তা প্রচার করার নির্দেশ দেবেন। প্রসঙ্গত, মানবপাচার ও অর্থপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ৭ জুন কুয়েত ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এমপি পাপুলকে আটক করে। তাকে দেশটির সিআইডি রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এছাড়া পাপুলের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে ইতোমধ্যে কুয়েতের তিনজন সরকারি কর্মকর্তাকে আটক করা হয়েছে। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে কুয়েতের ক‚টনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, কাজী শহীদ ইসলামের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অতিরিক্ত ভিসা নবায়ন ফি আদায়, কুয়েতের সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্ত করছে কুয়েত সিআইডি। তার বিরুদ্ধে ১১ জন বাংলাদেশি সাক্ষীও দিয়েছেন। এছাড়া পাপুলের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের চেকবই জব্দ করেছে সিআইডি। একই সঙ্গে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৬ জুলাই। কুয়েতের আইন অনুযায়ী অর্থপাচার প্রমাণিত হলে ৭ বছরের সাজা হবে পাপুলের। সেই সঙ্গে মানবপাচার প্রমাণিত হলে সাজা হবে ১৫ বছর। সেক্সুয়াল মানবপাচার প্রমাণিত হলে সাজা হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, একজন গ্রেপ্তার হলেই তার এমপি পদ বাতিল করা যায় না। কমপক্ষে তার দুবছর সাজা হতে হবে। আর একটা বিষয় আছে, কোনো এমপি টানা ৯০ কার্য দিবস সংসদে অনুপস্থিত থাকলে স্পিকার চাইলে তার সদস্য পদ বাতিল করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে স্পিকার যদি তার সংসদে অনুপস্থিতির বিষয়টি অবহিত থাকেন, তাহলে তার সদস্য পদ যাওয়ার কথা নয়। কারণ বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ঘটনা এ ক্ষেত্রে একটি বড় উদাহরণ। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় বিচারাধীন থাকায় নবম সংসদে একটানা ৯০ কার্যদিবসের বেশি অনুপস্থিত থাকলেও যেহেতু বিষয়টি স্পিকার অবহিত ছিলেন, ফলে এই অনুপস্থিতির কারণে তার সদস্য পদ বাতিল হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App