×

সম্পাদকীয়

দাম নয়, গুণগত মান বাড়ুক

Icon

nakib

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২০, ০৮:৫২ পিএম

ওয়াসার সেবা ও সরবরাহকৃত পানির মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। করোনাকালে ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধি গ্রাহকের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করবে এটাই স্বাভাবিক। সেবার মান না বাড়িয়ে ১ এপ্রিল থেকে ওয়াসার পানির দাম ২৫ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্তের ওপর আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট। দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে ওয়াসা বলছে, বিকল্প সরঞ্জাম, বিদ্যুৎ বিলসহ নানা ক্ষেত্রে পানির উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়েছে। ফলে দাম বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। প্রতি এক হাজার লিটার পানির অভিকর (দাম) আবাসিকে ১১ টাকা ৫৭ পয়সার স্থলে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা এবং বাণিজ্যিকে ৩৭ টাকা ৪ পয়সার স্থলে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা বিজ্ঞপ্তি জারি করে ওয়াসা। পরবর্তী সময়ে ওয়াসার পানির মূল্য বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে ভার্চুয়াল হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ। পানির মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানি নিয়ে গত সোমবার ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ অন্তর্র্বর্তীকালীন এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। রাজধানীবাসীর পানি সরবরাহের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসার পানির ওপর ন্যূনতম ভরসা করার কোনো উপায় নেই। পানি দুর্গন্ধযুক্ত। পানিতে ময়লা-আবর্জনা-কেঁচো ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। এই নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি, সরকারের নানা উদ্যোগও কম হয়নি। কিন্তু ফলাফল শূন্য। এমন অবস্থায় দাম বাড়ানো কতটুকু যুক্তিসঙ্গত। জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসা গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বৃদ্ধি করে। আবার এ বছর প্রায় ২৫ শতাংশ দাম বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। অর্থাৎ এক অর্থবছরেই দুবার মূল্য বাড়ানো হলো। অথচ পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইনের ২২ (২) ধারা অনুসারে দাম (অভিকর বা চার্জ) প্রতি অর্থবছরে মাত্র একবার অনধিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর কথা। দাম বৃদ্ধি হলেও পানির মান বাড়েনি। ৬২ ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানে বিষাক্ত হয়ে পড়া বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যার পানি শোধন করতে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। এ দুটি নদীর পানিতে বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান এতই বেশি যে ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য শোধনের সময় মেশানো হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ক্লোরিন, এলাম (চুন) ও লাইন (ফিটকিরি)। তারপরও দুর্গন্ধ থাকছে পানিতে। অনেক সময় শোধিত পানি থেকে বের হয় ক্লোরিনের গন্ধ। যদিও ওয়াসার দাবি, শোধিত পানিতে সমস্যা নেই। এদিকে বিভিন্ন স্থানের পাইপলাইনে রয়েছে অসংখ্য ফুটো বা লিকেজ। এসব ফুটো দিয়ে বর্জ্য ঢুকছে পাইপলাইনের মধ্যে। একইভাবে বর্জ্য যুক্ত হচ্ছে সুয়ারেজ লাইনেও। এ পানি অতিমাত্রায় ফুটানোর পরও পানযোগ্য করতে পারছেন না নগরবাসী। আমরাও মনে করি, পরিচালন ব্যয়, সিস্টেম লস, লোকসান ঠেকানোর অজুহাতে গ্রাহকের ওপর ওয়াসার পানির মূল্যবৃদ্ধির চাপ মেনে নেয়া যায় না। এই মুহূর্তে ঢাকা ওয়াসাকে সরবরাহকৃত পানির বিশুদ্ধতা সংরক্ষণে মনোযোগ দিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যে কোনো মূল্যে বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App