স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং তামাকবিরোধীদের দাবি অনুযায়ী বাজেটে তামাকপণ্যে কর ও মূল্য বাড়ানো সংক্রান্ত প্রস্তাব আমলে নেয়া হলে তামাকের ব্যবহার হ্রাসের পাশাপাশি এই খাত থেকে ১১ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জন করা সম্ভব। এই অর্থ করোনা মোকাবিলায় থোক বরাদ্দ ও প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যয় করার সুযোগ রয়েছে। প্রস্তাবিত ২০২০-২১ বাজেটে এসব প্রস্তাব উপেক্ষিত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ তামাকবিরোধীরা।

প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্সের (আত্মা) উদ্যোগে সোমবার ২০টি তামাকবিরোধী সংগঠন আয়োজিত অনলাইন বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে এই হতাশার কথা তুলে ধরেন তারা।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এটিএন বাংলার নিউজ এডিটর নাদিরা কিরণ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে নামমাত্র দাম বাড়ানোর ফলে সিগারেটের ব্যবহার বাড়বে। অন্যদিকে টানা চতুর্থ বছরের মতো সিগারেটের সম্পূরক শুল্ক প্রায় অপরিবর্তিত রাখায় লাভবান হবে তামাক কোম্পানিগুলো। সিগারেটের মূল্যস্তর অপরিবর্তিত রাখায় ভোক্তার স্তর পরিবর্তনের সুযোগ অব্যাহত থাকবে ও কোম্পানি কর ফাঁকির সুযোগ পাবে। বিড়ি এবং গুলের অতি সামান্য বাড়তি দাম দরিদ্র মানুষের মধ্যে এসব পণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করবে না। বিড়ির সম্পূরক শুল্কও টানা চার বছর অপরিবর্তিত রাখায় বিড়ি ব্যবসা লাভজনক হবে।

আরো জানানো হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পূরক শুল্কের একটি অংশ সুনির্দিষ্ট কর আকারে আরোপ ও সব তামাকপণ্যের ওপর ৩ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপের দাবি আমলে না নেয়ায় সরকার ব্যাপক পরিমাণে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে। সর্বোপরি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তামাককে করোনা সংক্রমণ সহায়ক হিসেবে চিহ্নিত করে এর ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণে জোর তাগিদ দিয়ে এলেও প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন নেই। ফলে দেশের প্রায় ৪ কোটি তামাক ব্যবহারকারীর মধ্যে মারাত্মক করোনা সংক্রমণ ঝুঁকিসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে।

আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত অনান্য তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, বিসিসিপি, এসিডি, ইপসা, এইড ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট, বিএনটিটিপি, বিটা, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, নাটাব, প্রত্যাশা, টিসিআরসি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, উফাত, তাবিনাজ, ভয়েস, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট।