×

জাতীয়

কিট সংকটে পরীক্ষা কম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২০, ১০:০৩ এএম

কিট সংকটে পরীক্ষা কম

প্রতীকী ছবি

দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরিস্থিতি ক্রমশই জটিল হয়ে পড়ছে। আক্রান্ত ও মৃতের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে বিশেষজ্ঞরা যখন বেশি বেশি টেস্টের ওপর জোর দিচ্ছেন; তখনই দেখা দিয়েছে নমুনা পরীক্ষার কিট সংকট। কিট সংকটের কারণে ১৮ জুন থেকে নারায়ণগঞ্জের খানপুর তিনশ শয্যা হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে করোনার নমুনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। একই কারণে ১৭ তারিখ থেকে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ আছে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স হাসপাতালে। চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুরের বিভিন্ন হাসপাতালেও রয়েছে কিট সংকট। এই সংকট এখন সারাদেশেই। কিটের এই সংকটের কথাটি স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে এতদিন স্বীকার না করলেও গতকাল সোমবার তা স্বীকার করেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। কিট সংকটের বিষয়ে আগে কিছুটা আভাস দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানিয়েছিলেন, আগের তুলনায় পরীক্ষার চাপ অনেক বেড়ে গেছে। এখন যে পরিমাণ কিট মজুদ আছে এবং প্রতিদিন যে পরিমাণে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে শুরু থেকেই চরম এক অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। যা এখনো বিদ্যমান। শুরুতে অপরিকল্পিতভাবে নমুনা পরীক্ষার করায় অনেক কিট নষ্ট হয়েছে। কয়েকটি ল্যাবের নমুনা পুনরায় পরীক্ষা করতে হয়েছে। এই কারণে শুধু লক্ষাধিক টাকার কিট নষ্ট হয়েছে। এছাড়া দেশে যে আরটিপিসিআর মেশিনের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে সেগুলো অনেক পুরনো মডেলের। সেই মডেলের কিট অনেকক্ষেত্রেই পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কিটের জন্য বাংলাদেশ পুরোপুরিই চীনের ওপর নির্ভরশীল। আমদানিকারকরা ঠিক সময় আমদানি করতে না পারায় কিট নিয়ে মাঝেমধ্যে ঝামেলা হয়। জানা যায়, আরটিপিসিআর যন্ত্র দুই ধরনের। এক ধরনের মেশিনে লাল এবং অন্যটিতে হলুদ কিট ব্যবহার করা হয়। লাল কিটের মজুদ থাকলেও হলুদ কিটের সরবরাহ নেই। গত ১৫ দিন ধরে হলুদ কিটের আমদানি বন্ধ রয়েছে। এর দায় অবশ্য আমদানিকারকদেরই ঘাড়েই চাপাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, আমদানিকারকরা হলুদ কিট না এনে সব লাল কিট এনেছেন। ফলে হলুদ কিট ব্যবহারকারী আরটিপিসিআর মেশিনগুলোতে পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। কিট প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকাল এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, চাহিদা অনুযায়ী কিট পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ বর্তমান বিশ্বের সব দেশেই কিটের চাহিদা রয়েছে। তবে যা মজুদ আছে তাতে ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। কোনো কারণে সংকট তৈরি হলেও তা খুব দ্রুতই মেটানোর ব্যবস্থা সরকারের হাতে রয়েছে। কাজেই কিট নিয়ে এই মুহূর্তে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে বলেন, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার জন্য ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু মেশিনগুলো অনেক পুরনো মডেলের। ফলে ওই মডেলের মেশিনের কিট পাওয়াও এখন মুস্কিল হয়ে পড়েছে। চাহিদা থাকার পরও অনেক এলাকায় কিট সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে পরীক্ষাও করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ১৭ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু কিটের সংকট না কাটলে এই সংখ্যা কমে আসবে। সংক্রমণ কমার বদলে বাড়বে। সামগ্রিক কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় সরকার এক ধরনের হাল ছেড়েই দিয়েছে। তা না হলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এত উদাসীনতা কেন? সময় পাওয়ার পরও কেন আগে থেকে সব প্রস্তুতি নিয়ে রাখেনি? এখনো জোনভিত্তিক লকডাউন নিয়ে সরকারের এক ধরনের গড়িমসি ভাব জনমনে উদ্বেগ আরো বাড়িয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App