×

জাতীয়

টাকার লোভে স্ত্রীর সহায়তায় বন্ধুকে তিন টুকরা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২০, ০৯:২৬ পিএম

টাকার লোভে স্ত্রীর সহায়তায় বন্ধুকে তিন টুকরা!

চার্লস রুপম সরকার

ক্ষুদ্র তরুণ ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন রাজধানীর দক্ষিণখানে স্টেশনারি দোকান করতেন। বিক্রি করতেন মোবাইলের সিম, ফ্লেক্সিলোড, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য খাতা-কলম, খেলনা সামগ্রী। সেই দোকানেই পরিচয় হয় বাংলালিংকের সেলস্ এজেন্ট চার্লস রুপম সরকারের। মাঝে মাঝে দোকানেও বসতেন রূপম। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। সেই সুবাদে দুই বন্ধু মিলে দিনভর আড্ডাও দিতেন দোকানে। আর সেই আড্ডার সূত্র ধরে দোকানের বেচাবিক্রি আর লেন- দেনের খুটিনাটি বিষয় জেনে ফেলেন রূপম।

আর দোকানের লেনদেনের বিষয়টি জেনে ফেলাই কাল হয়ে দেখা দেয় কোরআনে হাফেজ হেলাল উদ্দিনের জন্য। অনেক টাকা আছে ভেবে সেগুলো আত্মসাৎ করার জন্য রূপম তার বন্ধু হেলালকে খুন করার পরিকল্পনা করেন। আর এ কাজে একমাত্র সহযোগী রূপমের বউ শাহীনা আক্তার ওরফে মনি সরকার (২৪)। তবে হেলালকে খুন আর লাশ গুম করার ভয়াবহ নৃশংসতার পর তাদের প্রাপ্তি ঘটে মাত্র ৪৩ হাজার টাকা।

রাজধানীর দক্ষিণখানে চাঞ্চল্যকর হেলাল হত্যা মামলার মূলহোতা চার্লস রুপম সরকারকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্যই পেয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সোমবার ভোরের কাগজকে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর ডিবি উত্তর বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান।

হেলাল ‍উদ্দিনকে হত্যার পর রূপম পালিয়ে যান। ঢাকা ও বগুড়ায় আত্মগোপনে থাকার পর বরিশালে পালিয়ে যাওয়ার সময় রোববার (২০ জুন) সন্ধ্যায় গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ডিবির হাতে ধরা পড়েন। পরে রূপমকে নিয়ে দক্ষিনখান থানা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। সেখান থেকে হেলাল হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো সুইচগিয়ার ও ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করে।

হেলালকে হত্যা ও লাশ গুম করার ভয়াবহতা পুলিশের কাছে বর্ণনা করেন রূপম। তার বর্ণনামতে, ফ্লেক্সিলোড, মোবাইল কার্ড ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসার সূত্র ধরেই হেলালের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপর হেলালের কাছে থাকা সব টাকা আত্মসাৎ করার উপায় খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে পুরোনো ফটোস্ট্যাট মেশিন কেনার কথা বলে গত ১৪ জুন হেলালকে বাসায় ডেকে এনে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দেয়। এরপর স্ত্রী মনি সরকারের সহায়তায় শ্বাসরোধে হত্যা করেন হেলালকে। তাৎক্ষণিকভাবে তার পকেটে মাত্র ২৫৩ টাকা পাওয়া যায়।

পরে হেলালের ব্যবহৃত বিক্যাশ ও নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে স্ত্রী মনি সরকারকে টাকা তুলতে পাঠানো হয়। মোট ৪৩ হাজার টাকা তুলে আনে তারা। এর মধ্যে ৩০ হাজার টাকাসহ মনিকে শাশুড়ি রাশেদা আক্তারের কাছে পাঠায় রূপম। সে সময় হেলালের লাশটি তুলে বাথরুমে নিয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে চামড়া ও মাংস কেটে ভেঙে ফেলা হয় ঘাড়ের হাড়। একইভাবে কোমরের চামড়া ও মাংস কেটে মেরুদণ্ডও বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।

এদিকে, মায়ের কাছে ৩০ হাজার টাকা জমা রেখে মনি সরকার ফিরে আসেন বাসায়। এরপর রূপম ও মনি মিলে হেলালের খণ্ডিত দেহের বাকি অংশগুলোর মধ্যে মাথাটি ভরে বড় একটি স্কুল ব্যাগে ও পায়ের অংশ বস্তায় ভরে রেখে দেয়। পরদিন সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে অটোরিকশায় করে বস্তা ও স্কুল ব্যাগটি নিয়ে গিয়ে উত্তরার বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রেখে আসে। পরে রাতের বেলায় শপিং ব্যাগে করে খণ্ডিত মাথাটি রেখে দেয় ভূঁইয়া কবরস্থান সংলগ্ন ডোবার ডাস্টবিনের মধ্যে।

গত ১৫ জুন উত্তরার দক্ষিণখান ও বিমানবন্দর থানা এলাকায় অজ্ঞাত যুবকের খণ্ডিত মাথা ও কোমর থেকে পায়ের অংশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। ফিঙ্গার ইম্প্রেশনের মাধ্যমেই হেলালের পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরে হত্যারহস্য উদঘাটনের জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ ছায়া তদন্তে নামে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ জুন রূপমের বউ মনি সরকার ও শাশুড়ি রাশেদা আক্তারকে আটক করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যমতে ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিবি পুলিশ হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্যসহ মূল হোতা চার্লস রুপম সরকারকে গ্রেপ্তারে নেমে পড়ে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App