×

অর্থনীতি

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার উল্টো পথে তামাক নিয়ন্ত্রণে বাজেট

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২০, ০৫:৫২ পিএম

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার উল্টো পথে তামাক নিয়ন্ত্রণে বাজেট

তামাক

২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন, বর্তমান সময়ের বাজেটগুলোতে তা বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। যারা বাজেট তৈরি করছেন, তারা প্রদানমন্ত্রীর ঘোষণার উল্টোপথে হাঁটছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সোমবার (২২ জুন) তামাকপণ্যের ব্যবহার কার্যকরভাবে হ্রাস করতে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর বিশ্লেষণ এবং চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তামাক কর ও মূল্যবৃদ্ধির দাবিগুলো তুলে ধরতে ২০টি তামাকবিরোধী সংগঠন ‘অনলাইন বাজেট প্রতিক্রিয়া ২০২০-২১’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এটিএন বাংলার নিউজ এডিটর নাদিরা কিরণ।

অনলাইন আয়োজনে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, টিভি টুডে’র এডিটর ইন চিফ সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, সরকারি স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে আয়োজককারীরা তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপসহ কার্যকর কর ও মূল্য পদক্ষেপ নেয়া, সব ধরনের তামাকপণ্যের খুচরামূল্যের ওপর ৩ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরে।

অনুষ্ঠানে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বাজেটে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে কিছুটা কর বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু যেদিন বাজেট পাস হবে সেদিন হয়তো সচেতনভাবে সেটাও কমিয়ে দেয়া হবে। সেটা আমরা এখনো জানি না। কারণ তামাক কোম্পানিগুলো খুবই ক্ষমতাবান।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের সরকারি কর্মকর্তারা অনেকেই ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির বোর্ডে থাকেন। বোর্ডে থাকলে তামাক কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করা এক ধরনের অঙ্গীকার হয়ে যায়। এটা আমরা লক্ষ্য করেছি। এর আগে এ বিষয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা যেত। গত দুই বছরতো কথাই বলা যাচ্ছে না।

মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, নীতি-নির্ধারণীর জায়গাতে প্রধানমন্ত্রী বলছেন এক কথা আর তার সঙ্গে যারা বাজেট তৈরি করেন, বিড়ি-সিগারেটের পক্ষে বিবৃতি দেন, তামাক-টোব্যাকো খাতে বিনিয়োগ আনার জন্য তৎপর হন, তাদের চলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কাজেই আমরা যদি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে চাই তাহলে প্রতিটি ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।

বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, তামাকে কর বাড়ানোর বিষয়ে আমি একমত। তামাক নিয়ন্ত্রণে প্রচলিত আইনগুলোকে আরও কঠোরভাবে বস্তাবয়ন করতে হবে। এছাড়া তামাকের ক্ষেত্রে যেসব জরিমানার বিধান রয়েছে সেগুলোর পরিমাণ খুবই কম। জরিমানার পরিমাণ আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

মূল উপস্থাপনায় প্রজ্ঞা জানায়, তামাকবিরোধীদের পক্ষ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের ৪টি মূল্যস্তরের পরিবর্তে ২টি মূল্যস্তর প্রচলন এবং সম্পূরক শুল্কের একটি অংশ সুনির্দিষ্ট কর (স্পেসিফিক ট্যাক্স) হিসেবে আরোপ করার দাবি জানানো হলেও প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন নেই। সিগারেটের মূল্যস্তর সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখায় ভোক্তা তার সামর্থ্য অনুযায়ী ব্রান্ড বেছে নিতে পারবে, ফলে সিগারেটের ব্যবহার কমবে না। প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্তরভেদে সিগারেটের দাম সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, অথচ এ সময়ে জনগণের মাথাপিছু আয় (নমিনাল) বেড়েছে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ।

ফলে সিগারেটের প্রকৃত মূল্য কমে যাবে। প্রস্তাবিত বাজেটে টানা চতুর্থ বছরের মত বিড়ির সম্পূরক শুল্ক ৩০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, যা নি:সন্দেহে জনস্বাস্থ্যবিরোধী। এরফলে বিড়ি মালিকদের আয় ২৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে তামাক ব্যবহারকারীর ৫০ শতাংশরও বেশি ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করলেও তামাক রাজস্বের ১ শতাংশেরও কম আসে ধোঁয়াবিহীন তামাক থেকে। সুতরাং ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য থেকে সরকারের বাড়তি রাজস্ব আয়ের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App