×

জাতীয়

পশুর হাটে সামাজিক দূরত্ব মানাই চ্যালেঞ্জ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২০, ১০:২৩ এএম

পশুর হাটে সামাজিক দূরত্ব মানাই চ্যালেঞ্জ
করোনার মধ্যেই ঢাকার ২৪টি স্থানে অস্থায়ীভাবে কুরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। হাটের দরপত্র চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও নগরবিদরা। তাদের মতে এ সিদ্ধান্ত জনস্বাস্থ্যবিরোধী। হাট বসানোর অনুমতি দেয়া উচিত হবে না। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি কোনোটাই নিশ্চিত করা যাবে না। আর সিটি করপোরেশন বলছে, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করেই প্রাথমিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সবকিছু নির্ভর করবে সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর। এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি ১৪ ও উত্তর সিটি ১০টি পশুর হাট ইজারার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা, প্রতি বছর ঈদে ঢাকায় কয়েক লাখ পশু বিক্রি ও কুরবানি করা হয়। এসব পশু ট্রাকে ও ট্রলারে করে আনা হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। হাটগুলো পরিণত হয় জনারণ্যে। ক্রেতা, বিক্রেতা ও পশুর ভিড়ে পরিস্থিতি সামলানো খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেনের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঢাকায় কুরবানির পশুর হাট বসানো একেবারে জনস্বাস্থ্যবিরোধী সিদ্ধান্ত। এটা কোনো অত্যাবশ্যকীয় কাজ নয়। কাজেই পশুর হাট বসানোর অনুমতি দেয়া উচিত হবে না। তবে ছোট আকারের বিভিন্ন জায়গায় পশু কেনাবেচা হতে পারে। কিন্তু একেবারেই এভাবে প্রাণী ও মানুষ এক থাকবে, ক্রেতা-বিক্রেতা আসবেন, এটা কোনোক্রমেই জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। অবশ্যই বিকল্প ব্যবস্থা করা উচিত। হাটের ইজারা অনুযায়ী নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করার দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনের। তার সঙ্গে এ বছর যুক্ত হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ। এ দায়িত্ব সামলাতে হবে সংস্থা দুটির স্বাস্থ্য বিভাগকে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগ এ বিষয়ে কতটুকু প্রস্তুত এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা উত্তরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে যে নির্দেশনা আসবে, সেই মোতাবেক আমরা আমাদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করব এবং বাস্তবায়ন করব। অন্যদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ পশুর হাটে সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পারবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ। কেননা, করোনা চলাকালীন মালিকদের আবদারে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত দিয়ে গার্মেন্টস কারখানা খোলার অনুমতি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু গার্মেন্ট মালিকরা সেসব শর্তের একটিও মানেননি। পরে গার্মেন্টসের দেখাদেখি অন্যান্য কলকারখানা ও শপিং মলও পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়া হয়। শর্ত ছিল সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানা হবে। কিন্তু তার কোনোটিই এখন চোখে পড়ে না। মানুষ এখন নগরীর অলি-গলি বা চায়ের দোকানের সর্বত্র জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। বিশেষ করে উঠতি বয়সের ছেলেরা দলবেঁধে আড্ডা দিচ্ছেন। সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই তারা মানছেন না। একইচিত্র দেখা গেছে রাজধানীর কাঁচাবাজার ও পাইকারি মার্কেটগুলোতেও। সেখানে দেখা যায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়। একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে চলাফেরা করছে। মুখে ব্যবহার করছেন না মাস্ক। সেই অবস্থায় পশুর হাটে কীভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব হু হু করে বাড়ছে। সংক্রমণরোধে সরকার রেড জোন, গ্রিন জোন ও ইয়োলো জোনে বিভক্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সিটি করপোরশন। কিন্তু আমরা দেখলাম, করোনা প্রতিরোধ জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়াই দুই সিটি করপোরেশন ঢাকায় ২৪টি পশুর হাটের ইজারার টেন্ডার দিয়েছে। এটি সম্পূর্ণভাবে একটা ভুল সিদ্ধান্ত। যদি এভাবে কোনো নিয়ম না মানা হয়, তাহলে করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের সব অর্জন ব্যর্থ হবে। ইকবাল হাবিব বলেন, জাতীয় কমিটির পরামর্শেক্রমে জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে সরকার ঈদুল ফিতরে উন্মুক্ত স্থানে ঈদের জামায়াত না করার নির্দেশনা দিয়েছিল। তাহলে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হচ্ছে। কয়েক লাখ পশু ঢাকায় জবাই করা হবে। চিন্তা করা যায়, তখন অবস্থাটা কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াবে। কাজেই সময় আছে, প্রাক-সমীক্ষা করে বাস্তব অবস্থা পর্যালোচনা সাপেক্ষে বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শে হাটের বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হোক। প্রয়োজনে ধর্মীয়ভাবে আলেম-ওলামাদেরও পরামর্শ নেয়া হোক। নইলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। যত কথাই বলুক সামাজিক দূরত্ব কোনোভাবেই মানা সম্ভব হবে না। আর সিটি করপোরেশন তা নিয়ন্ত্রণও করতে পারবে না। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন ভোরের কাগজকে বলেন, রুটিন ওয়ার্ক অনুযায়ী চলমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের বিষয়টি মাথায় রেখে এ বছর দক্ষিণে ১৪টি পশুর হাট ইজারার জন্য আমরা পত্রিকায় দরপত্র চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। কোনো হাটের ইজারা এখনো চ‚ড়ান্ত হয়নি। তবে সরকার এ বিষয়ে যে নির্দেশনা দেবে সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App